ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মারাত্মক শব্দদূষণের শিকার কক্সবাজার

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৭ মার্চ ২০১৮

মারাত্মক শব্দদূষণের শিকার কক্সবাজার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মারাত্মক শব্দদূষণের শিকার পর্যটন শহরখ্যাত কক্সবাজার। শব্দদূষণের কারণে শহরের জনজীবনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে বলে অভিযোগ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের। যানবাহনের পাশাপাশি মাইকের উচ্চশব্দে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগী, শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ-শিশুসহ সব মানুষ। বিশেষ করে শীতকালে মাইকের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় বলে অভিযোগ শহরবাসীর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, যেকোনো সভা-সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল, বিয়ে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেই শহরের সর্বত্র মাইক স্থাপন করা হয়। যার ফলে মাইকের উচ্চ শব্দ একটি স্থানে আর আবদ্ধ থাকে না। এতে অসুস্থ মানুষ, ছাত্রছাত্রী, পর্যটক ও সাধারণ মানুষজন সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালসহ আশপাশের ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া রোগীরা। শুধু দিন নয়, রাতেও শহরের বিভিন্ন স্থানে উচ্চশব্দে মাইক বাজানো এখন খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের প্রখ্যাত আইনজ্ঞ খোরশেদ আলম জানান, শব্দদূষণ কক্সবাজার শহরের সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। সর্বসাধারণের ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে বিরত হওয়া সবার কর্তব্য। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়ানো অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, আলসারসহ বিরক্তির সৃষ্টি হয়। উচ্চশব্দে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু এবং বয়স্করা। এমনকি গর্ভে থাকা সন্তানও শব্দদূষণের কারণে ক্ষতির শিকার হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আবাসিক এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা দিনের বেলায় ৫৫ ডেসিবেল, রাতে ৪৫ ডেসিবেল হওয়া উচিৎ। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ ডেসিবেল, রাতে ৫৫ ডেসিবেলের মধ্যে থাকা উচিত। আর হাসপাতালে সাইলেন্স জোন এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবেল ও রাতে ৪০ ডেসিবেল থাকা উচিত। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার একমাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু কক্সবাজার শহরে বাস্তবে এই আইনের কোন প্রয়োগ দেখা যায়নি। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, কোন সভা-সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল বা যে কোন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থানে মাইকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে আয়োজকদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নেয়া হয়। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না। এক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি সবার মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের যাতে কোন ধরনের ক্ষতি না হয় সে বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেয়া আছে। তাও মানা হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপতৎপরতা অব্যাহত রাখলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেয়া হবে।
×