ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কান্তি দার রসগোল্লা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৭ মার্চ ২০১৮

 কান্তি দার রসগোল্লা

রসগোল্লা এই নামটি শুনলেই যে কারও জিভেয় জল চলে আসে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে যেখানে পাঁচ টাকা দিয়ে একটি চকোলেট বা এক কাপ চা পাওয়া যায় না। সেখানে একই দামে ‘রসগোল্লা’ খাওয়াচ্ছেন বৃদ্ধ কান্তি পদ রায় (৯০)। তিনি বাড়িতে রসগোল্লা তৈরি করে সাইকেলে নিয়ে গত ৬ যুগ ধরে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে বিক্রি করছেন এই রসগোল্লা। প্রায় দেড় ইঞ্চি বৃত্তের সাইজের রসগোল্লাটি রসে মাখানো। অত্যন্ত সুস্বাদু। যারা কান্তির রসগোল্লা খেয়েছেন তারা বার বার তাকে খোঁজেন। এতে সৈয়দপুর শহর, উপজেলার মফস্বল এলাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর ও তারাগঞ্জ উপজেলার তরুণ-তরুণীরা, ছেলে-বুড়ো, কিশোরÑ সবাই কাছে রসগোল্লা বিক্রেতা কান্তি পদকে কান্তি দা বলে ডাকেন। অতি পরিচিত এ ব্যক্তি তার রসগোল্লার পাড়া-মহল্লা ছাড়াও অনেকে অনুষ্ঠানে অর্ডার দিয়ে ক্রয় করেন। শহরের কয়ানিজপাড়ার পারুল বেগম (৩৪), রিনা আক্তার (২৬), নাজরীন পারভীনসহ (৪৫) গৃহবধূ সালমা বেগম (৪২) জানান, কান্তিপদ রসগোল্লা আমাদের বাসায় সব সময় থাকে। আত্মীয়স্বজন আসলে দ্রুত এ দিয়েই পরিবেশন করি। এতে অল্প ব্যয়ে মেহমানদারি হয়। এ ছাড়া বাচ্চারাও পছন্দ করে তাই কেনা চাই রসগোল্লা। তার রসগোল্লা খেয়ে প্লাজার শেখ নিজাম জানান, কান্তি দার রসগোল্লা বেশ সুস্বাদু দামেও কম। তাই প্রায়ই দিনই বাসায় নিয়ে যাই। সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালীপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বালাপাড়া গ্রামের মৃত শিব কান্ত রায়ের ছেলে কান্তি পদ রায়। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। দুই মেয়ে বিবাহিত আর ছেলেটি বিয়ের পর ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ফলে ছেলের বউ নাতি-নাতনিকে নিয়ে দেখাশোনা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন তিনি। প্রায় শতবর্ষী বৃদ্ধ কান্তির স্ত্রী সুশিলা রানী (৭৫) জানান, আমার শ্বশুরের আমল থেকে আমরা রসগোল্লা বিক্রি করি। প্রতিদিন কয়েক মন মিষ্টি তৈরি করতাম। ছেলে মারা যাওয়ার পর আর্থিক অনটন ও নানা সমস্যায় জর্জড়িত। আমি পাড়ায়-পাড়ায় গাভীর দুধ সংগ্রহ করি। তা দিয়ে ছানা তৈরির পর ময়দা, চিনি, ডিম ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০টি রসগোল্লা তৈরি করি। আর রসগোল্লা তৈরিতে পরিবারের সকলে শ্রম দেয়ায় ব্যয় কম। এতেই সামান্য দরে বিক্রি করলেও আমাদের লোকসান হয় না। এর আয় দিয়ে সবার ভরণ-পোষণ চলে। বৃদ্ধ কান্তি পদ রায় বলেন, সকাল দশটায় বাইসাইকেলে করে শহরের বিভিন্ন মহল্লার অলিগলি, সড়ক ও দোকানে এ রসগোল্লা বিক্রি করি। অনেকে পাইকারি নেয়। এভাবে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি করে বাসায় ফিরি। এতে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫শ’ টাকা লাভ হয়। তবে সরকারী সহজ শর্তে ঋণ পেলে এ ব্যবসার পরিধি আরও বাড়ত বলে মনে করেন এ মিষ্টির কারিগর ও বিক্রেতা। তিনি আরও বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ ব্যবসার শুরুতে এ মিষ্টির দাম অনেক কম ছিল। এর কাঁচামালের দাম বাড়ায় পর্যায়ক্রমে এর দাম বেড়েছে। তবে বিগত ২৫ বছর ধরে পাঁচ টাকায় মিষ্টি বিক্রি করছি। এ দর আর বাড়াইনি। প্রথমে আকারে বড় ছিল। এখন আকারে সামান্য ছোট করেছি। তবে চাহিদা কমেনি। আর যতদিন বাঁচবেন এ মিষ্টি বিক্রির ব্যবসা করবেন বলে জানান। সৈয়দপুর শহরে পাহেলওয়ান সুইটস, নিজাম উদ্দিন রেস্তরাঁ, কায়সার মিষ্টি ভান্ডার, জমজম মিষ্টি, বনফুল, জিআরপি ক্যান্টিন, নাটোর দই ঘরসহ সকল মিষ্টির দোকানের প্রতি রসগোল্লা ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তার ওপর কৃত্রিম রং ও বিষাক্ত কেমিক্যাল হাইড্রোসের ব্যবহার দেখা গেছে। এ ছাড়া মিষ্টি তৈরির ঘরের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত করুণ। ঘর্মাক্ত শরীরে রসগোল্লার খামির করছে শ্রমিকরা। পরিছন্নতার বালাই নেই হোটেলগুলোতে। এ ছাড়া দির্ঘদিন পড়ে থাকা রসগোল্লা ও তার উপকরণ বার বার মিশিয়ে চালানো হচ্ছে। আস্থা হারিয়ে তাই কান্তি পদ রায়ের রসগোল্লাই স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে গ্রাহক অনুমোদন পেয়েছে। এতে প্রতিদিন বাড়ছে তার ভোক্তা। এম আর মহসিন, সৈয়দপুর
×