ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুঁই সুতার কারুকাজ

মীরসরাইয়ের টুপির চাহিদা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৭ মার্চ ২০১৮

মীরসরাইয়ের টুপির চাহিদা বাড়ছে

মীরসরাইয়ে তৈরি করা টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। এখানে তৈরি করা টুপি ক্রয় করে সে দেশে রফতানি করা হচ্ছে। সুঁই আর সুতায় নকশা তুলে তৈরি টুপির বেশ চাহিদা রয়েছে সেখানে। আর এই টুপি তৈরি করে পরিবারে সহযোগিতার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হয়েছে উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়ন ও ১২ নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নের শতাধিক নারী। কাজের অবসরে তারা টুপি তৈরি করেন। এসব নারীর কাছ থেকে তৈরিকৃত টুপি সংগ্রহ করে নিয়ে যান পাইকাররা। ভাল লাভ হওয়ায় গ্রামের নারীরা ঝুঁকছেন এই পেশায়। করেরহাট ইউনিয়নের ঘেড়ামারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় খালেদা, সালমা, হোসনে আরা, আনিকা, সাহেনা, রোকসানা একত্র হয়ে বাড়ির উঠোনে শীতল পাটিতে বসে টুপিতে নকশা তুলছেন। তারা একসঙ্গে প্রতিদিন বিকেলে বসেন। খালেদা আক্তার জানান, পাইকাররা তাদের বাড়িতে এসে সুঁই সুতা আর কাপড় দিয়ে যান। পারিবারিক কাজের অবসরে সবাই মিলে তারা সুঁই সুতা দিয়ে টুপিতে নকশা তোলেন। একটি টুপিতে তারা নকশা ভেদে পাঁচ শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পান। একটি টুপি তৈরি করতে তাদের দুই থেকে দিন দিন লাগে। মাসে তারা অন্তত ১২-১৫ টুপি তৈরি করতে পারেন। টুপি বানিয়ে তিনি তিন থেকে ৭-৮ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। মাদ্রাসার আলীম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রোকসানা আক্তার জানান, তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি অবসর সময়ে টুপি তৈরি করেন। নিজের পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি বাবা-মাকেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারেন। গৃহবধূ খালেদা আক্তার বলেন, আমরা পবিারের সব কাজ শেষ করে সবাই মিলে টুপি তৈরি করতে বসে পড়ি। আমাদের কার চাইতে কে এবং ভাল নকশার টুপি তৈরি করতে পারবে এই নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। আরেকজন হোসেনে আরা বলেন, আগে আমার পরিবার চলতে অনেক কষ্ট হতো। ৬ সদস্যের সংসার। ছেলেমেয়ে সবাই পড়াশোনা করে। উপার্জনকারী একজনের পক্ষে হিমশিম খেতে হতো। দুই বছর আগে থেকে আমি পাশের বাড়ির একজন থেকে টুপি তৈরি বিষয়টি জানতে পেরে আমিও টুপি তৈরির কাজে লেগে যাই। সাংসারিক কাজ শেষ করে টুপি তৈরির কাজ করে এখন আমি স্বাবলম্বী। জানা গেছে, করেরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রস্তুতকৃত এসব টুপি ফাতেমা আক্তার ও শাহেনা আক্তার নামে দু’জন পাইকার সংগ্রহ করে বারইয়াহাটের মোশাররফ নামে একজন বড় পাইকারের কাছে সরবরাহ করেন। পরবর্তীতে এসব টুপি ওমানে রফতানি হয়। ফাতেমা আক্তার জানান, আমি করেরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের নারীদের সুঁই সুতা এবং কাপড় সরবরাহ করে থাকি। গ্রামের নারীরা তাদের প্রস্তুতকৃত টুপি আমার কাছে দিয়ে যায়। আমি নিজে গিয়েও নিয়ে আসি। দিন দিন টুপি প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের নারীদের প্রস্তুতকৃত এসব টুপি বিদেশে রফতানি হওয়ায় আমাদেরও খুব ভাল লাগে। করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, গ্রামের প্রায় শতাধিক নারী টুপি তৈরির সাথে জড়িত। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে আরও বহু নারীকে এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×