ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক বছরে বাড়ল ১২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা

খেলাপী ঋণ ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১৬ মার্চ ২০১৮

খেলাপী ঋণ ৭৪ হাজার  ৩০৩ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেষ সময়ে বিপুল অঙ্কের ঋণ পুনর্তফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত ও আদায় জোরদার করায় এক অঙ্কে নেমে এসেছে খেলাপী ঋণ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা; যা এ সময় পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে খেলাপী ঋণ ছিল ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ হিসাবে গত তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপী ঋণ কমছে প্রায় ৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। তবে শেষ তিন মাসে কমলেও গত এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে খেলাপী ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে খেলাপী ঋণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সূত্র জানায়, গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খেলাপী ঋণ বাড়লেও শেষ প্রান্তিকে তা কমেছে। এর কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলো তাদের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাই সেখানে ভাল অবস্থান দেখাতেই বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে থাকে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে অন্যতম হলো-খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল বা নবায়ন। আর বছরের শেষ সময়ে এসে এই সুবিধা দেয়া-নেয়ার প্রবণতাও বাড়ে। এছাড়া শেষ সময়ে ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর অডিট রিপোর্টে ভাল অবস্থান দেখানোর জন্য সাধারণত ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ের উপর বেশি জোর দিয়ে থাকে। পাশাপাশি এ সময়ে বড় অঙ্কের ঋণ পুণর্তফসিল করা হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু ঋণ অবলোপনও হয়ে থাকতে পারে। এসব কারণেই খেলাপী ঋণ কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপী হয়ে পড়েছে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। এক বছর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এ খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে খেলাপী ঋণ ছিল ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ ছিল। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার বিতরণের বিপরীতে খেলাপী হয়ে পড়েছে ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। তিন মাস আগে এই ছয়টি ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ সময়ে সরকারী মালিকানার দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৯৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে খেলাপী হয়েছে ৫ হাজার ৪২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তিন মাস আগে এই ব্যাংক দুটি খেলাপী ঋণ ছিল ৫ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা বা ২৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাভ ৩ হাজার ৬০৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে খেলাপী হয়েছে ২৯ হাজার ৩৯৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তিন মাস আগে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ ছিল ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ডিসেম্বর শেষে বিদেশী খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ৩০ হাজার ৬২২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ঋণের বিপরীতে খেলাপী হয়েছে ২ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা; যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। তিন মাস আগে বিদেশী ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ ছিল ২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এদিকে, ডিসেম্বর শেষে আলোচিত ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপী ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা; যা এ সময় পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তিন মাস আগে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ৩৭৮ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ছিল।
×