ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা অঘোষিত ‘সেমিফাইনাল’ আজ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৬ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা অঘোষিত ‘সেমিফাইনাল’ আজ

মিথুন আশরাফ ॥ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিয়েই টুর্নামেন্ট জমজমাট করে তুলেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলবে ভারতের সঙ্গে কোন দল তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। আজ নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার আজ টুর্নামেন্টের গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। যে দল ম্যাচটিতে জিতবে। তারাই ফাইনালে খেলবে। আরেক দলের বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে। আর তাই আজকের ম্যাচটি অঘোষিত ‘সেমিফাইনালে’ই রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ফাইনালে উঠবে? না বিদায় নেবে? এই প্রশ্নই এখন সবার মুখে মুখে। বাংলাদেশ দলের জন্য আছে সুসংবাদও। শেষ মুহূর্তে দলে যোগ দিয়েছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এক মেইল বার্তায় তা জানিয়েছেও। সাকিব থাকা মানেই দলের শক্তিমত্তা বেড়ে যাওয়া। সেটি বাড়ছেও। সাকিবের অন্তর্ভুক্তি এখন বাংলাদেশের জয় এনে দিলেই হয়। তাহলে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচটি খেলবে বাংলাদেশ। হার হলেই স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা উঠে যাবে ফাইনালে। ফাইনালে খেলার এত কাছে গিয়েও বিদায় নিতে হবে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আগেই বলেছেন, ‘আমরা এই সফরে আসার আগে প্রথম লক্ষ্যই ছিল যে ফাইনাল খেলতে হবে। নিজেরা বলেছিলাম যে আমরা ফাইনাল খেলতে চাই ও ফাইনাল খেলব।’ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই মাহমুদুল্লাহ কথাটি বলেছিলেন। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আজ মাঠে নেমে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেয়া গেলেই হলো। তাহলেই ফাইনালে খেলার স্বপ্ন সফল হবে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এরপর শ্রীলঙ্কাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে। তৃতীয় ম্যাচে এসে আবার ভারতের কাছে ১৭ রানে হেরেছে। তাতে করে ভারত ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে। আর তিন ম্যাচে বাংলাদেশের ঝুলিতে ২ পয়েন্ট যুক্ত আছে। শ্রীলঙ্কার অবস্থাও একই। শ্রীলঙ্কা নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে। এরপর বাংলাদেশের কাছে হারের পর ভারতের কাছেও ৬ উইকেটে হেরেছে। শ্রীলঙ্কাও ২ পয়েন্ট পেয়েছে। দুই দলের সামনেই ফাইনালে খেলার সুযোগ রয়েছে। ভারত আগেই চার ম্যাচের তিনটিতে জিতে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে। ১৮ মার্চ ভারতের বিপক্ষে কোন দল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে তা নিশ্চিত হওয়া বাকি। আর কোন হিসেব নেই। আজ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার খেলায় যে জিতবে তারাই ফাইনালে খেলবে। তারা পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে থেকে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে। বাংলাদেশ দল ফাইনালে খেলতে চায়। সব ভুলে এই ম্যাচটিতে জিততে চায়। মাহমুদুল্লাহ যেমন ভারতের ম্যাচের স্মৃতি টেনে বলেছেন, ‘মাঝে আমার আর মুশফিকের জুটিটা বড় করা দরকার ছিল। আমি বাজে বলে আউট হয়েছি। ওটাকে ছক্কা মারা উচিত ছিল। তবে এই ম্যাচ (ভারত ম্যাচ) নিয়ে আর বেশি না ভেবে পরের ম্যাচটা (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ) নিয়ে ভাবা উচিত। যে জায়গাগুলোতে কাজ করা দরকার, সেগুলো নিয়ে কাজ করলে, পরিকল্পনা মেনে খেলতে পারলে ভাল কিছু সম্ভব।’ শ্রীলঙ্কার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে হবে খেলা। যে স্টেডিয়ামে টানা দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর এপ্রিলে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জিতে সিরিজ ড্র করেছে। আর এবার টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও জিতেছে বাংলাদেশ। যে দলটি দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে। টানা দুটি টি২০ ম্যাচ হেরেছে। তাতে করে দলের ক্রিকেটারদের মনোবলেও আঘাত এসেছে। সেই দলটিকে দুর্দান্ত জবাবই দেয়া গেছে। নিজ দেশে হারের জবাবটি শ্রীলঙ্কাতেই দেয়া গেছে। তবে এখনও হিসেব কিছু বাকি আছে। বাংলাদেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা সিরিজের টানা দুটি টি২০ই জিতেছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশ যদি আজ জিতে তাহলে বাংলাদেশও নিদাহাস ট্রফিতে টানা দুটি টি২০ জিতবে। শ্রীলঙ্কা কোনভাবেই ছাড় দিতে রাজি নয়। নিজ দেশে টুর্নামেন্ট হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন নিয়ে টুর্নামেন্ট। সেই টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কাই খেলবে না ফাইনালে! আগেই বিদায় নেবে! তা যেন কেউই মেনে নিতে পারছেন না। আর তাই শ্রীলঙ্কা আজকের ম্যাচটিতে সব ধরনের পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামবে। যে করে হোক বাংলাদেশকে হারাতে চাইবে। আর শ্রীলঙ্কার ওপর চাপও থাকবে। এই চাপই বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। মাহমুদুল্লাহ বিষয়টি পরিষ্কারও করলেন। বললেন, ‘চাপটা বাংলাদেশের নয়, থাকবে শ্রীলঙ্কার ওপরই। ওরা হয়তো কিছুটা চাপ অনুভব করবে। খেলা তাদের মাঠে, তাদের দর্শকের সামনে। আমাদের জন্য এটা নতুন ম্যাচ। শুরু করতে চাইব নতুনভাবে।’ শ্রীলঙ্কার অবশ্য একটু সুবিধাও আছে। বাংলাদেশ টানা দুটি ম্যাচ খেলবে। তিনদিনের মধ্যে দুটি ম্যাচ খেলবে। আর শ্রীলঙ্কা তিনদিনে খেলবে একটি ম্যাচ। শ্রীলঙ্কা বিশ্রাম পেয়েছে। আর বাংলাদেশ দলের মাথায় ফাইনাল চিন্তাই ঘুরঘুর করছে। তাতে বিশ্রামের কোন সুযোগই নেই। আবার যতদূর জানা গেছে, অনুশীলন সুবিধাও বাংলাদেশ খুব ভাল পাচ্ছে না। তাতে ম্যাচেও প্রভাব পড়তে পারে। টি২০ ক্রিকেট অবশ্য একটি মুহূর্তের খেলাই বলা যায়। দ্রুত শেষ হয়ে যায় খেলা। যে দল এই অল্প সময়ের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্তগুলো চটজলদি নিতে পারে তাদেরই জয় হয়। ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স যে দলের ক্রিকেটারদের ম্যাচটিতে ভাল হয়। তারাই জয় তুলে নেয়। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত ম্যাচটিতে যে বাংলাদেশ দুর্দান্তভাবে জিতেছে, তাতে ক্রিকেটারদের মনে জেতার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। যে দলটি কখনই ১৬৩ রানের বেশি টার্গেট নিয়ে জিততে পারেনি। তারাই কিনা ২১৫ রানের টার্গেটে জিতেছে। নিজেদের টি২০ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানটি করার সঙ্গে রেকর্ড গড়ে জিতেছে। ভারতের সঙ্গেও জেতার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। আত্মবিশ্বাস এখন আজকের ম্যাচে কাজে লাগান গেলেই হয়। শ্রীলঙ্কাকে আজ হারিয়ে দিতে পারলেই হয়। তাহলেই ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেবে বাংলাদেশ। ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। অঘোষিত ‘সেমিফাইনাল’ ম্যাচ। এমন ম্যাচে সাকিবকে নিয়ে এখন বাংলাদেশ জিতে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিতে পারলেই হয়।
×