ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দাউদ হায়দার

স্টিফেন হকিং ॥ চোখের সামনেই ঈশ্বর

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৬ মার্চ ২০১৮

স্টিফেন হকিং ॥ চোখের সামনেই ঈশ্বর

নিমন্ত্রণপত্রে অনুরোধ, আধ ঘণ্টা আগে আসন গ্রহণের। জানা ছিল, সময়মতো হাজির না হলে শ্রোতারা সব চেয়ার দখল করবেন। দাঁড়ানোর জায়গাও পাওয়া যাবে না। আমরা দেড় ঘণ্টা আগেই উপস্থিত। আমরা বলতে বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিক। গিয়েছি ‘ডয়েচে ভেলের পক্ষ থেকে রিপোর্ট করতে। বসেছি একেবারে সামনের সারিতে। হাতে টেপরেকর্ডার, মাইক্রোফোন। স্থান : বার্লিনের পাশের শহর পোটসডাম, ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের রাজধানী। মাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট। সময় : বারোটা। তারিখ : ১৯ আগস্ট। বছর : ১৯৯৭ সাল। বক্তা : স্টিফেন হকিং। বারোটা বাজার ঠিক দুই মিনিট আগে হুইল চেয়ারে (যন্ত্রচালিত হুইল চেয়ার) এসে হাজির। বসে আছেন ঘাড় কাত করে। মাথা ডান দিকে হেলানো। দুই পা গোটানো। যেন আধমরা। চোখে স্টিল ফ্রেমের চশমা। চোখ দুটো উজ্জ্বল। স্থির দৃষ্টি। মুখে কোন অভিব্যক্তি নেই। পরনে হাফ হাতা শার্ট। হাল্কা সবুজ প্যান্ট। চুল বিন্যস্ত। সামনের পাটির গোটা চারেক ঝকঝকে দাঁত দৃশ্যমান। পাশে স্ত্রী দাঁড়িয়ে। স্টিফেন হকিং ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট বক্তৃতা দেবেন। মুখে নয়। কম্পিউটার স্পিচ সিন্থেসাইজারের মাধ্যমে। বক্তৃতার বিষয় তাঁরই উল্টে দেয়া মতবাদ নিয়ে, ‘ব্ল্যাক হোল’ বলে কিছু নেই। মহাকাশে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব সঠিক নয়। এই বছরের (১৯৯৭) প্রথমার্ধে নিজেরই থিয়োরি, ব্ল্যাক হোল বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, চ্যালেঞ্জও জানিয়েছেন। চ্যালেঞ্জ পদার্থ বিজ্ঞানীদের, চ্যালেঞ্জ নিজেকেও। এই নিয়েই তাঁর কথা (কয়েক বছর পরে অবশ্য মতামত পাল্টান। স্বীকার করেন ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব)। অনুষ্ঠানে বহু পদার্থবিজ্ঞানী, গবেষক, পদার্র্থবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী-শ্রোতা। বক্তৃতার পরে নানা প্রশ্ন। উত্তর দেন চোখের ইশারায়। অর্থাৎ চোখের ইশারায় কী বলতে চান কম্পিউটার স্ক্রিন ঠিক জেনে যায়, হুবহু সেই কথায় বলে। আশ্চর্য তার গমগমে কণ্ঠ। নাকি মেশিনের? বিস্ময়কর এই পদার্থবিজ্ঞানীর মধ্যে ছেলেমিও আছে। এক ছাত্রী প্রশ্ন করেন তার মারাত্মক পক্ষাঘাত ব্যাধি নিয়ে লেখাপড়ায়-গবেষণায় কোন সমস্যা হয় কী-না। স্টিফেন হকিংয়ের সরল উত্তর আমার ভেতরে ঈশ্বরকণা লুকিয়ে আছে। আমাদের জানা আছে স্টিফেন হকিং ঈশ্বরের অস্তিত্বে আদৌ বিশ্বাসী নন, জোর দিয়ে বলেছেন বহুবার। স্টিফেন হকিংয়ের ‘দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’ প্রকাশিত ২০০১ সালে, জার্মান অনুবাদ একই বছরে। বই প্রকাশ উপলক্ষেই বার্লিনে এসেছেন, জার্মান সায়েন্স একাডেমিতে। রিপোর্ট করতে আবার হাজির। বক্তৃতা নয়, শ্রোতার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। একই পদ্ধতিতে, চোখের ইশারায়, কম্পিউটার স্পিচ সিন্থেসাইজারে। একজন রসিকি যুবক জানতে চান হুইল চেয়ারে বসে মহাবিশ্বে মহাকাশে ঘুরে বেড়ান, অক্লান্ত বিচরণ, ঈশ্বরের দেখা পেয়েছেন কখনও? যদি পান কী রকম দেখতে? স্টিফেন হকিংয়ের রসের উত্তর : ‘চোখের সামনেই ঈশ্বরকে দেখতে পারছেন। আবার দেখা আশা জাগিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে নির্মিত ছবি ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং (২০১৪) অব বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (২০১৫) প্রদর্শিত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবেন। আসেননি। জানা গেল অসুস্থ। চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে শয্যাশায়ী জীবন ঈশ্বরকে আর দেখা হলো না। লেখক : জার্মান প্রবাসী
×