ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্ত পার হতে গিয়ে নিহত ১, আহত ৫

লোভ দেখিয়ে রাখাইনে নেয়া হচ্ছে বান্দরবানের মারমা ও ম্রোদের

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৬ মার্চ ২০১৮

লোভ দেখিয়ে রাখাইনে নেয়া হচ্ছে বান্দরবানের মারমা ও ম্রোদের

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর পার্বত্য জেলা বান্দরবানের গহীন এলাকায় বসবাসরত মারমা ও ম্রো পরিবারের সদস্যদের প্রলোভনে ফেলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বান্দরবান থানছি উপজেলার বড় মোদক সীমান্তের লিদক্রে নামক স্থান থেকে চলতি মাসে এ পর্যন্ত ৩১ মারমা ও ম্রো পরিবারের শতাধিক সদস্য নিজ ভিটেমাটি ফেলে ওপারে চলে গেছে। রাখাইন রাজ্যে যাওয়ার পর তাদেরকে মিয়ানমার সরকার ৫ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রমে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ, দোতলা বাড়িঘর ও ৫ একর করে জমি প্রদানের প্রলোভন দিয়েছে। পুরো বিষয়টি ইতোমধ্যে বান্দরবান জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও আলোচিত হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে অনুরূপভাবে নিজ ভিটেমাটি ত্যাগ করে হেঁটে সীমান্তের ওপারে পাড়ি দেয়ার সময় মাইন বিস্ফোরণে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ওই নিহতের স্ত্রী, ৫ পুত্র কন্যা। বুধবার রাতে আলি কদমের কুরুক্কপাতা ইউনিয়নের রালাইপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার সকালে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নিহত উপজাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, নিহতের নাম পাওয়াই ম্রো (৪৫)। আহতরা হলেন নিহতের স্ত্রী চং রে ম্রো (৩৫), তাদের শিশু সন্তান সিতু ম্রো (৯), ইয়া ইয়ং ম্রো (৫), তনকো ম্রো (৩) ও তরংগং ম্রো (২)। বিজিবির বান্দরবান সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, এলাকাটি খুবই দুর্গম হওয়ায় ঘটনার পর পরই নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সকালে বিজিবি সদস্যরা এ মৃতদেহ উদ্ধার করে। আহতদের উদ্ধার করার পর সেখানকার কুরুক্কপাতা সেনাক্যাম্পে এনে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সেক্টর কমান্ডার আরও জানিয়েছেন, থানছি ও আলীকদম থেকে বেশকিছু পাহাড়ী উপজাতি পরিবার স্থানীয় একটি দালাল চক্রের প্রলোভনে গোপনে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টায় রয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশত্যাগকারী থোয়াই চিং কারবারি ও ক্যতয়াই মং মারমা, অং সাচিং মারমাসহ দেশত্যাগকারীরা জানিয়ে গেছেন, সীমান্তের ওপার থেকে তারা খবর পেয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে পৌঁছুতে পারলে তাদেরকে বাড়িঘর, খাবারদাবার ও জমি প্রদানসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। এ কারণেই তারা দেশত্যাগ করেছেন। এছাড়া তারা যেখান থেকে দেশত্যাগ করছে সেখানে বিভিন্ন ধরনের অভাব রয়েছে। পাশাপাশি গত বছর জুম চাষ করে যে ধান তারা পেয়েছেন তার বড় অংশ দাদনদারকে দিতে হয়েছে। অং সাচিং মারমা ও থোয়াইচিং মারমা জানিয়ে গেছেন, চিম্বুক পাহাড় ধরে সিন্ধু হয়ে রাখাইনের বুচিদং ও মংডু শহরের দিকে গন্তব্য তাদের। স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, থোয়াই চিং পাড়া হয়ে চিম্বুক পাহাড় ধরে রাখাইন রাজ্যে পৌঁছতে সময় লাগে তিন দিন। থানছি উপজেলা সদর থেকে শঙ্খনদীর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের লিদক্রে এলাকার থোয়াইচিং পর্যন্ত সরাসরি কোন সড়ক ব্যবস্থা নেই। নৌকাযোগে বা হেঁটে সেখানে যেতে হয়। রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মারমা মাং চং ম্রো ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বাওয়াই মারমা হোয়াইচিং পাড়ার ৯ পরিবারসহ তার ওয়ার্ড থেকে মোট ২১ মারমা পরিবার ম্রো তাং খোয়াইপাড়া থেকে ১০ পরিবারসহ ৩১ পরিবার দেশত্যাগের কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানিয়েছেন, দেশত্যাগকারী পরিবারের মধ্যে বয়স্কভাতা, বিধবাভাতাভোগী, ভিজিবি কার্ডধারী ও ৪০ দিন কর্মসৃজনকারী সদস্য রয়েছেন। রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈ থুই মারমা জানিয়েছেন, ৩১ পরিবার দেশত্যাগ করে সীমান্তের ওপারে চলে যাওয়ার কথা তিনি শুনেছেন।
×