ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৬ মার্চ ২০১৮

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন  দিন ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার জনগণকে ভয় পায়। সে কারণেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চায় না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, দাম্ভিকতা পরিহার করুন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিন। ক্ষমতা দখলের জন্য আমাদের এই লড়াই সংগ্রাম নয়। আমরা দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে চাই। বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি লুট হওয়া গণতন্ত্রকে উদ্ধার করবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর নুর আহমদ সড়কের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। লালদীঘি মাঠে প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় সমাবেশটি করতে হয় সেখানে। এতে সভাপতিত্ব করেন আগের দিন বুধবার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন। বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, মোঃ শাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, জয়নাল আবেদিন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, রোজী কবির, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতৃবৃন্দ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশে গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগ এনে বলেন, সারাদেশের কোথাও বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আর সরকার হেলিকপ্টারে করে জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছে। একদেশে দুই নীতি চলছে। বর্তমান সরকারকে অবৈধ সরকার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে পার্লামেন্ট রয়েছে সেখানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নেই। আমাদের মধ্য থেকে প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছে নেতাকর্মীরা। অনেকেই গুম হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ৭৮ হাজার মামলায় বিএনপির প্রায় ১১ লাখ নেতাকর্মী আসামি। অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসার পর আওয়ামী লীগ সরকার সবকিছু ধংস করে দিচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করেছে। জীবন সায়াহ্নে এসে গণতন্ত্রের এ নেত্রী একটি নির্জন পরিত্যক্ত কারাগারের অন্ধকার কক্ষে বন্দী আছেন। সাজানো মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। অথচ, দেশের সরকারী ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মামলা দিয়ে জনগণকে দমিয়ে রাখা যাবে না। এই সরকার দেশের জনগণকে ভয় পায়। সে জন্যই নির্বাচন দিতে চায় না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য টেনে এনে তিনি বলেন, সেতুমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি নাকি দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা বলতে চাই, বিএনপি যদি দেউলিয়াই হয়ে যায় তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে ভয় কিসের। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেখুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন কারা দেউলিয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার জনগণকে ভয় পায় বলেই অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। বিএনপিকে সভা করার সুযোগ দিতে চায় না। এ জনসভা হওয়ার কথা ছিল লালদীঘি মাঠে। কিন্তু প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। বিএনপি নেত্রীকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এখন বেড়ে ৬ কোটি টাকা হয়ে গেছে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দলের নেত্রী এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার মনে করেছিল, দমন পীড়ন এবং নেত্রীকে মামলা ও সাজা দিয়ে বিএনপিকে দুর্বল করা যাবে। সারাদেশে নেতাকর্মীরা রাজপথে আছে। অতীতেও বিএনপি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি। বিএনপি দুর্বল হয়নি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, এদেশে যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে মানুষের ভোটে বেগম খালেদা জিয়া আবার সরকার গঠন করবেন। নিরপেক্ষ সরকার যদি না দেয়া হয় তাহলে এর জন্য আন্দোলন করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, বিপদে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। এখন তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো প্রয়োজন। কিন্তু এ সরকার কূটনীতিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ব্যর্থতার কারণেই দীর্ঘ পরীক্ষিত বন্ধু চীনদেশ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। অথচ, এদেশে চীনের অনেক বিনিয়োগ। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, তার নেতৃত্বেই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি যে আন্দোলন করছে তা ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়। বিএনপির আন্দোলন দেশ ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার আন্দোলন। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র চায় না বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে না। সরকার নাকি অনেক উন্নয়ন করছে। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে এত ভয় কেন? আসলে এসব উন্নয়ন কাজে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে। সে কারণেই বিএনপিকে এত ভয়। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সাংবিধানিক অধিকার কিছুই নেই। দেশের ষোল কোটি মানুষ গণতন্ত্রের পথে চলছে। আর সরকার চলছে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের পক্ষে। সরকার যে পথে চলছে সেই পথে বেশি দূর চলার সুযোগ নেই। খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রেখে এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া যাবে না। তাকে এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী চালিয়ে যাব। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবারের এই জনসভাটি বিএনপি করতে চেয়েছিল লালদীঘি মাঠে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে সেই অনুমতি পাওয়া যায়নি। বুধবার রাতে বলা হয়, নুর আহমদ সড়কের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সভা করতে। চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং এলাকা থেকে মিছিল সহকারে যোগ দেয়। সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল পুলিশ প্রশাসনের। আতঙ্ক থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের কাজ শেষ হয়।
×