ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২২ বছরের যুবকের সঙ্গে সাত বছর বয়সী শিশুর বিয়ের নেপথ্যে

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৫ মার্চ ২০১৮

২২ বছরের যুবকের সঙ্গে সাত বছর বয়সী শিশুর বিয়ের নেপথ্যে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ কিশোরীগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের কুঠিয়ালটারী গ্রামের দিনমজুর বাবুল মিয়ার মেয়ে মোনালিসা আক্তার। সে গ্রামের এক কিলোমিটার অদূরে বাড়িমধুপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। মোনালিসার রোল নম্বর ৭। দুই সপ্তাহ ধরে মেয়েটি স্কুলে আসছে না। উপবৃত্তির তালিকায় রয়েছে তার নাম। নিয়মিত স্কুলে না এলে উপবৃত্তির তালিকা হতে নাম বাদ যাবে। তাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান মেধাবী এই ছাত্রীর সন্ধ্যানে ছুটে গেলেন তাদের বাড়ি। গিয়েই প্রধান শিক্ষক হতাশ হয়ে ফিরে এলেন। বুধবার দুপুরে জানা গেল, একই গ্রামের আমিনুর ইসলামের ছেলে রাজমিস্ত্রি শাহিনুর ইসলামের (২২) সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ৭ বছরের শিশু মেয়েটির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বিয়ের এক সপ্তাহ পর শিশুটির স্বামী নির্মাণ কাজের জন্য চট্টগ্রামে চলে গেছে। ছেলে ও মেয়ের পরিবার বিষয়টি গোপন রাখতে গত ১ মার্চ রাতে দুই লাখ টাকা দেনমোহরে এই বিয়ে সম্পন্ন করে। প্রধান শিক্ষকের এমন তথ্যে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় একদল সাংবাদিক। ঘটনার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় শিশুর মা জিন্নাত আরার স্বীকারোক্তিতে। তিনি জানান, আমার মেয়ের জন্ম সনদে ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে। ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্টার (কাজী) মওলানা জিগার আলীর মাধ্যমে এই বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। এই বিয়ের কাজ শেষ করতে কাজী ৬ হাজার টাকা বুঝিয়ে নিয়েছেন বলেও জানান জিন্নাত আরা। তার তৃতীয় শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ের ১৮ বছরের জন্ম সনদ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। বিয়ের কাবিননামা প্রসঙ্গে বলেনÑ ওটা কাজী তার নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। বাল্যবিবাহ অপরাধ এ জন্য জেল-জরিমানা হতে পারে সাংবাদিকদের এমন কথায় শিশুটির মা জানায়, আমাদের ইউনিয়নে কবীর আলী নামের একজন মানবাধিকার কর্মী আছে। সে আমার কাছে ৫ হাজার টাকা নিয়ে বলে গেছে আমাদের আর কোন ভয় নেই। বাল্যবিবাহের জন্য আমাদের আর জেল-জরিমানা হবে না। মেয়েকে স্কুলে পাঠান না কেন প্রশ্নে তিনি জানান, জামাই বলে গেছে মোনালিসা যেন আর স্কুলে না যায়। তাই জামাইয়ের কথামতো মেয়েকে আর স্কুলে যেতে দেই না। এ সময় শিশুটির বাবাকে বাড়িতে দেখা যায়নি। বাবা কাজে গেছে বলে জানায় শিশু মোনালিসা। বাল্যবিবাহের শিকার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীটিও জানায় তার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের সাত দিন পর তার স্বামী কাজে বাইরে চলে গেছে। স্বামী আমাকে কইছে স্কুলে আর যাবি না। তাই স্কুলে যাই না। নিতাই ইউনিয়নের ওই গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি মেয়েটির মা গভীর রাতে তার পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে গোপনে বিয়ে পড়িয়েছে। বিষয়টি দুই দিন আগে জানতে পারি। এ ব্যাপারে নিতাই ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্টার(কাজী) মওলানা জিগার আলী সাংবাদিকদের কাছে মোনালিসার বাল্যবিবাহের ঘটনাটি অস্বীকার করে জানায়, তিনি ওই বিয়ে পড়াননি। এ ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার নাম তারা কেন বলে আমাকে জড়িয়েছে তা আমি বলতে পারব না।
×