ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গবেষণা প্রতিবেদন

হাওড়বাসীর উন্নয়নে বিকল্প কর্মসংস্থান জরুরী

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৫ মার্চ ২০১৮

হাওড়বাসীর উন্নয়নে বিকল্প কর্মসংস্থান জরুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাওড়বাসীর উন্নয়নে বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন, নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা ও নদীভাঙ্গন রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরী। এ ছাড়া দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, জলমহালগুলো প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা হাওড় অঞ্চলের মানুষদের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘হাওড়বাসীর জীবন-জীবিকা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে হাওড় এলাকায় বন্যার আগাম সতর্ক বার্তার উন্নয়ন, দীর্ঘমেয়াদী কৃষিজ পরিকল্পনা গ্রহণ, বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারসহ বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ‘সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ’ (সিসিইআর) এর ওয়াটার রিসোর্চ ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট প্রবাল সাহা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সিসিইআর নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই গবেষণা পরিচালনা করে। পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান। ব্র্যাকের পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ মজিবুর রহমান, সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক মান্নান, ব্র্যাকের সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রধান শ্যামসুন্দর, ওয়ার্ল্ড ভিশন-এর হিউম্যানেটেরিয়ান এ্যান্ড ইমার্জেন্সি এ্যাফেয়ার্স এর পরিচালক ডোলন যোসেফ গোমেজ প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, হাওড়ে মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে সরকার আন্তরিক এবং কাজ করে যাচ্ছে। তিনি হাওড় এলাকার উন্নয়ন তরান্বিত করতে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও জনগণের মাঝে সমন্বয় করে কাজ করার তাগিদ দেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তা দিয়ে ১৬ কোটি মানুষের জীবন মান উন্নয়ন সত্যিই খুব কঠিন কাজ। তবে আমাদের জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলে যদি ঠিকঠাক মতো কাজ করি তাহলে অপচয় কম হবে। জিডিপি ২ শতাংশ বাড়বে। তবে সকল কাজের আগেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে- আসলে আমাদের অগ্রাধিকার কোনটি। সেভাবে কাজ করতে পারলে দেশ উপকৃত হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ দিয়ে গেছেন বলে, আমরা স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে পারছি। অর্থ প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, ৩০-৪০ বছর আগের তুলনায় হাওড়াঞ্চলের মানুষের জীবন-মান উন্নত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সময় হাওড়াঞ্চলে বিদ্যুত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সরকারের সময় হাওড়ের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৭ সালে আকস্মিক বন্যায় হাওড়বাসীর জীবন-জীবিকা ও আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাদের সামগ্রিক উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ইউকেএইড-এর অর্থায়নে ও ইউনাইটেড ন্যাশন্স অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস)-এর ব্যবস্থাপনায় ‘ফ্ল্যাশ ফ্লাড রিকভারি প্রজেক্ট’ (এফএফআরপি) গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন। এ পরিস্থিতিতে হাওড়বাসীর উন্নয়নে করণীয় নিরূপণে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশে প্রবাল সাহা বলেন, হাওড়বাসীর উন্নয়নে বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিল্প কলকারখানা স্থাপন, নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা ও নদী ভাঙ্গনরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরী। এছাড়া দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, জলমহালগুলো প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা হাওড় অঞ্চলের মানুষদের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ৪টি, দিরাই উপজেলায় ৩টি এবং কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় ২টি কমিউনিটির মধ্যে জরিপ পরিচালিত হয়। গুণগতভিত্তিতে পরিচালিত জরিপে কমিউনিটির মোট ১২৬ জন মানুষ ও স্থানীয় সরকারের ৯ জন অংশ নেন। জরিপে অংশ নেয়া অধিকাংশই হাওড়বাসীর উন্নয়নে জরুরী করণীয় হিসেবে বিকল্প কর্মসংস্থানের ওপর বিশেষ জোর দেন। এজন্য তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা স্থাপন, সেলাই মেশিনসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রদানের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তার কথা বলেছেন। এছাড়া উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য বিক্রি না হওয়ার জন্য ‘ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনাকে’ বড় সমস্যা হিসেবে তারা চিহ্নিত করেন। গবেষণায় যেসব সুপারিশ করা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ হাওড়বাসীর সমস্যা মোকাবেলায় স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা, বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া, দীর্ঘমেয়াদী কৃষিজ পরিকল্পনা, আপদকালে জলমহাল উন্মুক্তকরণ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার আগাম সতর্কতার জন্য কারিগরি উন্নয়ন ঘটানো।
×