ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার জামিন রবিবার পর্যন্ত স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৫ মার্চ ২০১৮

খালেদার জামিন রবিবার পর্যন্ত স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাননি। হাইকোর্টের দেয়া চার মাসের জামিন আদেশ রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করেছে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। এই সময়ের মধ্যে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপীল করতে বলেছে। জামিন স্থগিত চেয়ে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের উত্তপ্ত বাক্য ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বক্তব্য শুনতে আদালতকে এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করায় প্রধানবিচারপতি তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রধানবিচারপতি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আদালতকে ‘থ্রেট দেবেন না। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে প্রধানবিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বিভাগ বুধবার এ আদেশ দেয়। অন্যদিকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের ওপর আপীল বিভাগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বুধবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আবেদনটি শুনানির জন্য আগামী রবিবার আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জিয়া এতিমখানা মামলায় দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনে তা শুনানির জন্য আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। বুধবার আপীল বিভাগের আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আশা করি বুধবারের মধ্যেই আদেশের সার্টিফাইড কপি পেয়ে যাব এবং আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যেই লিভ টু আপীল আবেদন দাখিল করব। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আচরণের সমালোচনা করে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্টেও উষ্মা প্রদর্শন করেছিলেন। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেছেন, আমাদের বক্তব্য না শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত খালেদা জিয়ার জামিন রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। আদালতের এই আদেশে আমরা ব্যথিত। এই আদালতের আদেশের বিষয়ে কী ভাষায় আপনাদের কাছে বর্ণনা করব, তা আমরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেছেন, ‘আপীল বিভাগে খালেদার জামিন রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। আদালতের এই আদেশে আমি আনন্দিত। আজকের জন্য আমি হ্যাপি। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলে আপীল শুনানিতে আইনজীবীদের এক বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের একজন আইনজীবী গিয়াসউদ্দিন আহমেদের একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানবিচারপতি তার কাছে জানতে চান তিনি হুমকি দিচ্ছেন কি না। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল করে প্রধানবিচারপতির পদত্যাগসহ নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। আপীল বিভাগ থেকে বের হয়ে মিছিলসহ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন প্রদক্ষিণ করেন তারা। বুধবার বিষয়টি আপীল বিভাগে উঠলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, তারা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপীল করতে চান। কিন্তু আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ায় তা করতে পারেনি। তার বক্তব্য শুনেই প্রধানবিচারপতি হাইকোর্টের জামিন রবিবার স্থগিত করে এর মধ্যে লিভ টু আপীল করতে বলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এ সময় দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে চাইলে প্রধানবিচারপতি বলেন, আদালত রবিবার তার বক্তব্য শুনবে। কথা বলার সুযোগ না পেয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলে আপীল শুনানিতে আইনজীবীদের এক বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের একজন আইনজীবী গিয়াসউদ্দিন আহমেদের একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানবিচারপতি তার কাছে জানতে চান তিনি হুমকি দিচ্ছেন কি না। সকালে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে শুনানি হয়। এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী হাইকোর্ট বেঞ্চের আদেশের সার্টিফাইড কপি না পাওয়ার কথা বলে সময়ের আবেদন করেন। প্রধানবিচারপতি আবেদন মঞ্জুর করলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাদের বক্তব্য শোনার জন্য চাপাচাপি করতে থাকেন। এ সময় সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি গিয়াসউদ্দিন আহমেদের একটি বক্তব্যের জবাবে প্রধানবিচারপতি তাকে বলেন, ‘আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?’। পরে গিয়াসউদ্দিন বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকলে প্রধানবিচারপতি বলেন, ‘থ্রেট দেবেন না।’ বুধবার সকালে শুনানির শুরুতেই দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘হাইকোর্ট চারটি কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছে। আমরা এখনও সে আদেশের সার্টিফাইড কপি পাইনি। আদেশের কপি পেলে লিভ টু আপীল করব।’ এ সময় প্রধানবিচারপতি বলেন, ‘সিপি ফাইল করে আসেন।’ তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘সিপি ফাইল করতে রবিবার-সোমবার পর্যন্ত আমাদেরকে সময় দেয়া হোক। এ পর্যন্ত জামিন স্থগিত রাখা হোক।’ এরপর আদালত বলে, ‘ঠিক আছে সিপি ফাইল করে আসেন রবিবারের মধ্যে। এ পর্যন্ত জামিন স্টে থাকবে। তখন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমাদেরকে আগে শুনেন। আমাদের বক্তব্য তো শুনেন নাই। আমাদের না শুনে এভাবে আদেশ দিতে পারেন না। ‘প্রধানবিচারপতি বলেন, ‘শুনতে হবে না। রবিবার পর্যন্ত তো স্থগিত দিয়েছি। ওই দিন আসেন তখন শুনব।’ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আপনি যে একতরফাভাবে শুনানি করে আদেশ দিলেন এতে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে।’ জবাবে প্রধানবিচারপতি বলেন, ‘আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। কোর্টকে কোর্টের মত চলতে দিন।’ এরপর জয়নুল আবেদীন ও এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘না শুনেই তো আদেশ দিলেন।’ প্রধানবিচারপতি বলেন, ‘আমরা অন্তর্র্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছি। আমাদের শোনার দরকার নেই।’ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এই মামলায় চেম্বার আদালত তো স্টে দেয়নি। এই সময়ের মধ্যে আসামিও বের হবে না। তাই স্টের প্রয়োজন নেই।’ খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা তো শুনানির সুযোগ পেলাম না।’ এরপরই কার্যতালিকা থেকে অন্য মামলা শুনানি শুরু হয়। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আপনি তো না শুনেই একতরফা আদেশ দিলেন। আমাদের কথা শুনতে হবে। কেন শুনবেন না?’। তখন প্রধানবিচারপতি বলেন, ‘কার কথা শুনব, কার কথা শুনব না তা কি আপনার কাছে শুনতে হবে?’ গিয়াস উদ্দিন তখন কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমাদের কথা আপনাকে শুনতেই হবে।’ তখন প্রধানবিচারপতি বলেন, ‘আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?’ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘শুনে তারপর আদেশ দিতে হবে।’তখন প্রধানবিচারপতি বলেন, ‘থ্রেট দেবেন না।’এক পর্যায়ে এ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আপনি তো কোর্টকে শেষ করে দিলেন।’
×