ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষজ্ঞরা আরও কূপ খনন চান

সুনেত্রতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৫ মার্চ ২০১৮

সুনেত্রতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা

রশিদ মামুন ॥ সুনেত্রতে আবার গ্যাস পাওয়ার আশা দেখছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্স। তৃতীয়মাত্রার ভূকম্পন জরিপের পর বাপেক্স কর্মকর্তারা এই আশার খবর জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, সুনেত্র সম্ভাবনাময় ভূকাঠামো; এখানে গ্যাস অনুসন্ধানে আরও কূপ খনন করা উচিত। বাপেক্সের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনার ২৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তৃতীয়মাত্রার (থ্রি-ডি সাইসমিক সার্ভে) জরিপ শেষ করে যে ফল পাওয়া গেছে তাতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফায়জুল্লাহ এনডিসি বলেন, আমাদের রূপকল্পের মধ্যে সুনেত্রতে নতুন অনুসন্ধান কূপ খনন করার বিষয়টি রয়েছে। তবে কোথাও কূপ খনন করার আগে পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়, সেখানে কি রয়েছে। যদিও কূপ খনন করার বিষয়ে বাপেক্স থেকে এখনও পেট্রোবাংলাকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। বিগত ২০১০-১১ সালে দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) সাইসমিক সার্ভে শেষে সুনেত্রে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। ওই জরিপের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ শেষে প্রায় তিন টিসিএফ গ্যাস মজুদের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়। তবে তখন যতটা খনন করে গ্যাস পাওয়ার আশা করা হয়েছিল ওই পরিমাণ খনন করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কূপের নক্সা করার ক্ষেত্রে ভুল ছিল। এ কারণে চার হাজার ৪৯৯ মিটারের নিচে খনন করা সম্ভব হয়নি। তবে সুনেত্রতে গ্যাস পাওয়ার ক্ষেত্রে খনন কাজ ৫ হাজার মিটার অতিক্রম করতে হবে বলে তৃতীয়মাত্রার জরিপে ধারণা পাওয়া গেছে। সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনা দুই জেলার অংশবিশেষজুড়ে এই গ্যাসের স্তর ছড়িয়ে রয়েছে। দুই জেলার নামের অংশবিশেষের সঙ্গে মিল করে এই ভূগঠনটির নাম রাখা হয়েছে সুনেত্র। সিলেট এলাকায় তেল গ্যাসের মজুদ সব থেকে বেশি বলে ধারণা করা হয়। দেশের সব বড় গ্যাস ক্ষেত্রই কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সিলেট পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সুনেত্রের প্রতিও প্রত্যাশা একটু বেশি বলে মনে করা হয়। বাপেক্সের এক কর্মকর্তা জানান, থ্রি-ডি করার সময় আমরা ভূগঠনের কোন পরিবর্তন দেখিনি। দ্বিতীয়মাত্রার ভূকম্পন জরিপে যে ফল পাওয়া গেছে ঠিক একই রকম ফল থ্রি-ডি’র সময়ও পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, তবে আমরা মনে করি এখানে কূপ খনন করতে হলে আরও গভীরে যেতে হবে। যেখানে গ্যাসের অস্তিত্ব রয়েছে। জ¦ালানি বিভাগ সূত্র বলছে, ২০১২ সালের একেবারে শেষের দিকে সুনেত্রর প্রথম কূপ খনন কাজ শেষ করা হয়। তখন জানানো হয়, যে কূপটি খনন করা হয়েছিল তাতে গ্যাস পাওয়া যায়নি। যদিও এখানের কূপ খননের শেষে ত্রুটি ধরা পড়ে। ওই সময় বলা হয়, এত গভীরে খনন করার জন্য যে প্রস্তুতি নিতে হয় তা ছিল না। এজন্য প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়নি। সুনেত্রতে তখন গ্যাস পাওয়া না গেলেও আশা ছাড়েনি জ¦ালানি বিভাগ। নতুন করে তৃতীয়মাত্রার জরিপ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারের ২০২১ সাল মেয়াদী খনন রূপকল্পেও সুনেত্রতে অনুসন্ধান কূপ খনন করার কথা রয়েছে। তবে যেসব জায়গাতে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি সেখানে বাপেক্স আগে কূপ খনন করতে চায়। গত বছর বাপেক্স তিনটি কূপ খনন করে তিনটিতেই গ্যাস পেয়েছে। জানতে চাইলে ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলছেন, সুনেত্র খুব ভালমানের ভূগঠন। অনেক সময় একটি কূপ খনন করার পর গ্যাস না পাওয়া যেতে পারে কিন্তু সেখানে গ্যাস নেই তা চট করে বলা যাবে না। তৃতীয়মাত্রার জরিপ এজন্যই করা হয়েছিল। তিনি মনে করেন প্রথমবারের ভুল শুধরে আবারও কূপ খনন করা দরকার। ২০০৪ সালে শ্রীকাইলে একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সেখানে গ্যাস পাওয়া যায়নি। তবে এই ভূগঠনের পাশেই বাঙ্গুরাতে বহুজাতিক কোম্পানি কূপ খনন করার পর দেখা যায় সেখানে গ্যাস রয়েছে। পরে বাপেক্স আবারও কূপ খনন করে শ্রীকাইলে গ্যাস পাওয়ার ঘোষণা দেয়। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর বলেন, প্রথমবার কূপ খননে কিছু সমস্যা ছিল। আমরা যতটা গভীর পর্যন্ত খনন করতে চেয়েছিলাম তা করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের মনে হয়েছিল পাঁচ হাজার মিটারের নিচে গ্যাস রয়েছে। কিন্ত আমাদের ৫ হাজার মিটারের আগেই খনন কাজ থামিয়ে দিতে হয়। তিনি বলেন, সুনেত্রতে কোন কারণে মাটির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় হাইপ্রেসার জোন অনেক নিচে। সেখানে হাইপ্রেশার জোনের ওপরই গ্যাস রয়েছে। তিনি এজন্য কূপ খননের আগেই যথাযথভাবে কূপের নক্সা করে নেয়া জরুরী বলে মনে করেন।
×