ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নেপালে বিমান দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৫ মার্চ ২০১৮

নেপালে বিমান দুর্ঘটনা

নেপালে ইউএস-বাংলার একটি বিমানের আকস্মিক দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার সংবাদটি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। চার ক্রু ও ৬৭ যাত্রীসহ মোট ৭১ আরোহী নিয়ে ঢাকা থেকে যাত্রা করে সোমবার দুপুরে নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজটি। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে নিহত যাত্রীদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশী, নেপালি ৩৩ জন। মালদ্বীপ ও চীনের একজন। জীবিত ২২ জনের খবর পাওয়া গেছে, যাদের অনেকেই গুরুতর আহতাবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সেই প্রেক্ষাপটে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। নেপালের এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিমানের ধ্বংসস্তূপ অপসারণসহ উদ্ধার তৎপরতা চলেছে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার সংশ্লিষ্ট ইউ-এস বাংলার কর্তৃপক্ষসহ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাৎক্ষণিকভাবে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সবরকম সহযোগিতা দেয়ার কথা বলেছেন। ঢাকা থেকে মেডিক্যাল টিম প্রেরণের কথাও বলা হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি, যারা কাজ শুরু করেছে ইতোমধ্যে, তবে ইউটিউব ও ফেসবুকে প্রাপ্ত যেসব খবরাখবর এসেছে গণমাধ্যমে, তাতে অগ্রাধিকার পেয়েছে অবতরণকালে পাইলটের সঙ্গে কন্ট্রোল রুমের ভুল বোঝাবুঝির বিষয়টি, যার মধ্যে রানওয়ে নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে সমধিক। তদুপরি মনে রাখতে হবে যে, পাহাড়-পর্বতে পরিবেষ্টিত নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরটি কিছুুটা ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনাপ্রবণ। বিবিসির বরাতে জানা যায়, ১৯৭২ থেকে এ পর্যন্ত ৭০টির বেশি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে। এসব দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৬৫০ জনের বেশি। এর সর্বশেষ শিকার ইউ-এস বাংলার ১৭ বছরের পুরনো বিমানটি, যেটি ইতোপূর্বে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পড়েছিল দুর্ঘটনার কবলে। তবে সৌভাগ্য যে, সেবার যাত্রীরা বেঁচে যায়। বার বার যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়া বিমানটি ফিটনেস সনদ পেল কিভাবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন আছে। তদুপরি খবরে এসেছে বিমানের পাইলট ওই ফ্লাইট নিয়ে নেপালে যেতে অনিচ্ছুক ছিলেন। ইউএস-বাংলায় ইস্তফা দিয়ে তিনি অন্য একটি বিদেশী বিমান সংস্থায় চাকরি নিয়েছিলেন। এরকম একজন পাইলটের স্বভাবতই মানসিক চাপে বিপর্যস্ত থাকার কথা। আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থার নীতি অনুযায়ী কোন পাইলটকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফ্লাই করতে বাধ্য করা যায় না। সংশ্লিষ্ট বিমান কোম্পানি এ বিষয়ে কি বলে, সেটাই এখন জানার বিষয়। তবে গঠিত তদন্ত কমিটি নিশ্চয়ই দুর্ঘটনার পূর্বাপর কারণ অনুসন্ধান করে এর জন্য কে বা কারা দায়ী, সে সম্পর্কে বিস্তারিত লিখিত প্রতিবেদন পেশ করবে। সার্বিকভাবে দেশে ও বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচলের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থেই সেটা প্রত্যাশিত। বিমান দুর্ঘটনা অবশ্য নতুন কোন ঘটনা নয়। বরং বিশ্বব্যাপীই ঘটছে বিমান দুর্ঘটনা। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসেও সব বিমান দুর্ঘটনার যে যথার্থ কারণ জানা যায় তাও নয়। যেমন, বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো মালয়েশিয়ান বিমানের আদৌ কোন ধ্বংসাবশেষ ও অন্তর্ধান রহস্য অদ্যাবধি জানা গেল না। কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ৩৪ বছর আগে ঢাকায় বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৪৫ জন যাত্রীও নিহত হয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশী বিমানের ছোটবড় অন্তত ৩৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে দুটি ছাড়া প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে ফ্লাইং ক্লাবসহ প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা ও নিহতের সংবাদ আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ বিমানকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের আভাসের খবরও মেলে। গত বছর বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জরুরী অবতরণে বাধ্য হয় তুর্কমেনিস্তানে। পরে তদন্তে জানা যায় যে এর পেছনে ছিল গভীর ষড়যন্ত্র, যে কারণে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। যা হোক, কাঠমান্ডুুতে ইউ-এস বাংলার বিমান বিধ্বস্তের বিষয়টিকে আমরা নিছক দুর্ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করতে চাই। তবে তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যাবশ্যক গঠিত তদন্ত কমিটির যথাযথ অনুসন্ধানসহ প্রতিবেদন। আর তাহলেই কেবল আগামীতে এ জাতীয় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতে পারে। আমরা বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্যসহ ক্ষতিপূরণ। ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সচেতন ও দায়িত্বশীল হবে বলেই প্রত্যাশা।
×