ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের উপদেষ্টা ছিলেন রাশিয়ার স্পাই!

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৪ মার্চ ২০১৮

ট্রাম্পের উপদেষ্টা ছিলেন রাশিয়ার স্পাই!

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার টিমের উপদেষ্টা ছিলেন এমন এক ব্যক্তি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে লেখা এক চিঠিতে বেশ বড়াই করে বলেছেন যে ক্রেমলিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। টাইম ম্যাগাজিনের হস্তগত হওয়া এই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘গত অর্থবছর ধরে ক্রেমলিনের স্টাফদের অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্ট হিসেবে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল।’ ট্রাম্পের প্রাক্তন সেই উপদেষ্টার নাম কার্টার পেজ। প্রকাশনার জন্য তার দেয়া একটি পা-ুলিপির সম্পাদনা নিয়ে উদ্ভূত বিরোধ চলাকালে তিনি একটি একাডেমিক প্রেসটি চিঠিটি লিখেছিলেন। রুশ সরকারের সঙ্গে পেজের যোগাযোগ কি পর্যায়ের কতখানি ছিল এই চিঠি সে সম্পর্কে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শুধু তাই নয় বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুয়েলারের রাশিয়া সম্পর্কিত তদন্ত নস্যাত করার চেষ্টায় প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান দলীয় সদস্যরা ২ ফেব্রুয়ারি যে বিতর্কিত মেমো প্রকাশ করেছে, এই চিঠিটি তার ওপরও কালো ছায়া ফেলেছে। কার্টার পেজকে ট্রাম্প ২০১৬ সালের মার্চ মাসে তার নির্বাচনী প্রচার টিমের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যরা যে মেমো প্রকাশ করেন সেটি ছিল এই পেজকে নিয়েই। মেমোটিকে এই প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হয় যে বিচার বিভাগের মধ্যকার ট্রাম্পবিরোধী ডেমোক্র্যাটদের একটি গ্রুপ পেজের ওপর নিয়মবহির্ভূতভাবে গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছিল। মেমোটি প্রকাশ করেন প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান দলীয় ডেভিন নিউনস। ওতে বলা হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে এফবিআই গোপন বৈদেশিক গোয়েন্দা নজরদারি কোর্টের মনে এই প্রত্যয় সৃষ্টি করে যে পেজ একজন রুশ এজেন্ট। নিউনসের মেমোতে বলা হয় যে এফবিআই সাবেক ব্রিটিশ গুপ্তচর ক্রিস্টোফার স্টিলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পেজের ওপর গোপন নজরদারি চালানোর জন্য কোর্টের অনুমতি আদায় করেছিল অথচ হিলারী ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচার টিম তখনও স্টিলকে পরোক্ষভাবে অর্থ যোগাচ্ছিল। ডেমোক্র্যাটরা নিউনসের এই মেমো প্রকাশে আপত্তি জানিয়েছিল এবং এফবিআই বলেছিল মেমোটি অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর। রিপাবলিকানরা বলেছিল যে কথিত স্ক্যান্ডালটি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির চেয়েও নিকৃষ্ট। স্টিলের পরিবেশিত তথ্যে সূত্রের কোন উল্লেখ ছিল না। পেজ দাবি করেছিলেন যে তিনি অন্যায় কিছু করেননি ক্ষ্যাপাটে স্বাভাবের জ্বালানি পরামর্শক ও হবু রুশ বিষয়ক প-িত পেজ এই প্রথম যে পাদপ্রদীপের আলোয় এলেন তা নয়। কোর্টের নথি অনুযায়ী ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে পেজ নিউইয়র্ক সিটিতে এক জ্বালানি সম্মেলনে ভিক্টর পোদোবনি নামে এক রুশ কূটনীতিকের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর থেকে তার মস্কো কানেকশনের সূত্রপাত হয়। এক গোপন টেপে পোদোরনিকে গর্ব করে বলতে শোনা যায় যে রুশ বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়ার ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ‘মেল-১’ নামে শনাক্ত একজনকে এজেন্ট হিসেবে রিক্রুট করার চেষ্টা করেছিলেন। পেজ সে সময় রাশিয়ায় কনসাল্টিং ব্যবসায় গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি স্বীকার করেন তিনিই ছিলেন মেল-১। নিউনস মেমো প্রকাশ হওয়ার পর ‘টাইম’ সাময়িকীর সঙ্গে একাধিক বার্তায় পেজ বলেন, ২০১৩ সালে তিনি সারা বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কয়েকটি গোলটেবিল বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালের প্রথমদিকে রুশদের সঙ্গে পেজের যোগাযোগের প্রকৃতি যাই থাক তা এফবিআইয়ের নজর কেড়েছিল। সে বছরের জুন মাসে ব্যুরোর এজেন্টরা রুশদের সঙ্গে তার যোগাযোগ সম্পর্কে পেজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে তিনি জানান। পেজ জানান, এজেন্টদের তিনি তখন বলেছিলেন যে দু’মাস আগে বোস্টনে ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় সংঘটিত বোমাবাজির ব্যাপারে তদন্ত করলেই বরং তাদের ভাল সময় কাটবে। এর অল্পদিন পরই ব্যুরো তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযান শুরু করে বলে পেজ দাবি করেন। এফবিআইয়ের সঙ্গে তার বৈঠকের দু’মাস পর পেজ একটা চিঠি লেখেন যেখানে তিনি বলেন যে ক্রেমলিনের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারটি ছিল তার লেখা একটা বই একটি একাডেমিক প্রেসকে দিয়ে ছাপিয়ে নেয়ার চেষ্টার অংশ। সেই প্রকাশনা সংস্থার এক সম্পাদক যিনি পেজের সঙ্গে আগে কাজ করেছিলেন তিনি বলেন, রাশিয়া সম্পর্কে পেজের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য স্কলারদের থেকে লক্ষণীয়ভাবে আলাদা। জাতীয় পরিসরে পেজের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে তার অন্যতম পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। কয়েক মাস পর পেজ মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করে মস্কোয় ভাষণ দেন। স্টিল তার পরিবেশিত তথ্যে জানান যে সেই সফরকালে পেজ ক্রেমলিনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা ও পুতিনের শক্তিশালী মিত্রের সঙ্গে কয়েক দফা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। এর অল্প দিন পরই ট্রাম্প তাকে উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে বাদ দেন। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×