ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম

শোক সাগরে ভাসছে সারাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৪ মার্চ ২০১৮

শোক সাগরে ভাসছে সারাদেশ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নেপালের কাঠমান্ডুতে সংঘটিত সোমবারের বিমান দুর্ঘটনায় শোকসন্তপ্ত সারাদেশ। শোকে মুহ্যমান স্বজনহারা মানুষ। নিহতদের বাড়িতে বাড়িতে কান্নার রোল। সান্ত¡না দেয়ার ভাষাও হারিয়ে গেছে। সব কিছু ছাপিয়ে সর্বত্র যেন বিরাজ করছে বোবা কান্না। স্বজন হারানোর বেদনায় মানুষ আজ দিশেহারা, বাকহারা। তাদের একজন রাজশাহীর বিলকিস আরা। তিনি বিমানে চড়তেই ভয় পেতেন। অথচ সেই বিমানেই নিভে গেল তার প্রাণ প্রদীপ। একই দুর্ঘটনায় তার আরও তিনজন সহপাঠী নিহত হয়েছেন। তারা একই সঙ্গে ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। এ দিকে, দুর্ঘটনায় পড়ে পিতামাতার সঙ্গে দেখা করা হলো না কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী শ্রেয়া ঝার’র। তার মৃত্যুতে উক্ত ক্যাম্পসে দু’দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেটে রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ১১ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ায় সেখানে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় সারাদেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অন্যদিকে, মানিকগঞ্জের তাহিরা ও তার স্বামী শাওন তাদের বিবাহ বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আর হলো না। একটি দুর্ঘটনা তাদের সব কিছু কেড়ে নিল। বরিশালের পিয়াসের ছিল ভ্রমণের নেশা। তিনি ভ্রমণের নেশাতেই যাচ্ছিলেন নেপালে। সেখানেই নিভে গেল তার ভবলীলা। এ ছাড়া, উক্ত বিমান দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের গ্রামের বাড়িতে এখন চলছে গভীর শোক, মাতম করে বুক চাপড়াচ্ছেন তাদের আত্মীয়-স্বজন, পিতা-মাতা। এদেরই মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচির চৌহালির প্রকৌশলীর রকিতুল এবং শরীয়তপুরের সন্তান সাংবাদিক ফয়সাল। জানা গেছে, বিমানে চড়তে ভয় পেতেন রাজশাহীর বিলকিস। সে কারণে কানাডা প্রবাসী ছেলেদের কাছে কোন দিন যাওয়া হয়নি তার। ছেলেরা অনেকবার ডেকেও কানাডায় নিয়ে যেতে পারেননি মাকে। শুধু বিমানে চড়তে হবে যেনে অজানা আতঙ্কে যাওয়া হয়নি ছেলেদের কাছে। অথচ কী নিষ্ঠুর নিয়তি বিমানেই প্রাণ গেল বিলকিস আরার। বিলকিস আরা রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা ও নাটোরের গোপালপুর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ছিলেন। সোমবার বিকেলে নেপালে বাংলাদেশী বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বিলকিস আরা। শুধু বিলকিস আরা নয়, সঙ্গে স্বামী অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব হাসান ইমাম, বন্ধু ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম আর নজরুলের স্ত্রী রাজশাহী মহিলা কলেজের শিক্ষিকা আক্তারা বেগমও নিহত হন একই সঙ্গে। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্র অবস্থায় তারা ছিলেন পরষ্পরের বন্ধু। হাসান ইমাম ও নজরুল ইসলাম স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলেন নেপালে। তবে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় চারজনেই নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে নজরুলের বাড়ি রাজশাহী নগরের উপশহর ও হাসান ইমামের বাড়ি শিরোইল এলাকায়। গত বুধবার তারা রাজশাহী থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন একসঙ্গে। মৃত্যুর খবরের পর দুই পরিবারে এখন শোকের মাতম চলছে। তাদের হারিয়ে নির্বাক পরিবারের সদস্যরা। দুই পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। একবছর আগে তিনি এলপিয়ারে চলে যান। তার স্ত্রী আক্তারা বেগম রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষিকা। ছয় মাস আগে তিনি এলপিয়ারে যান। আর হাসান ইমাম সর্বশেষ ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ছিলেন। এর আগে তিনি শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন। তিন বছর আগে তিনি অবসরে যান। আর হাসান ইমামের স্ত্রী বিলকিস আরা নাটোরের গোপালপুর কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। তারা চারজনই রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। চারজনেই অর্থনীতি বিভাগে লেখাপড়া করেছেন। সেই থেকেই তাদের ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ছিল। নিহত বিলকিস আরার ভাই রাজশাহী নগরীর বরেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর মালেক জানান, ‘আমাদের নয়, ভাই-বোনদের মধ্যে পঞ্চম বিলকিস আরা। তার দুই ছেলে। তারা কানাডায় থাকে। তার বোন উড়োজাহাজে (বিমানে) চড়তে ভয় পেতেন। এ কারণে তিনি কোন দিনই উড়োজাহাজে চড়েননি। তার দুই ছেলে মাকে একাধিকবার কানাডায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিমানে উঠার ভয়ে তিনি ছেলের কাছে যাননি। তবে স্বামী ও বন্ধুদের পিড়াপিড়িতে প্রথম তিনি বিমানে চড়ে নেপাল বেড়াতে যাচ্ছিলেন। তবে সেই বিমানেই প্রাণ হারালেন বিলকিস আরাসহ চারজন বলে জানান বিলকিস আরার ভাই আলমগীর মালেক। তিন দিনের শোক পালন রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজে সিলেট অফিস ॥ নেপালগামী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় ১১ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তিন দিনের শোক পালন করছে সিলেটের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ। মঙ্গলবার সকাল থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করেন। এ ছাড়াও কলেজের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সব ক্লাস এবং পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবেদ হোসেন জানান, ১৩ নেপালি শিক্ষার্থী দুর্ঘটনাকবলিত বিমানে ছিলেন। তবে তাদের ভাগ্যে কী ঘটছে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। যদিও প্রাথমিক খবরে তাদের ১১ জন নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ছুটি কাটাতে নিজ দেশে যাচ্ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের নেপালি ১৩ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন- ১৯তম ব্যাচের সঞ্জয় পৌডেল, সঞ্জয়া মহারজন, নেগা মহারজন, অঞ্জলি শ্রেষ্ঠ, পূর্ণিমা লোহানি, শ্রেতা থাপা, মিলি মহারজন, শর্মা শ্রেষ্ঠ, আলজিরা বারাল, চুরু বারাল, শামিরা বেনজারখার, আশ্রা শখিয়া ও প্রিঞ্চি ধনি। কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষে ফলাফল প্রকাশের জন্য দুই মাসের মতো সময় লাগে। সাধারণত রেজাল্ট বের হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন এ্যাসাইনমেন্ট থাকে না। তাই ওই সময়ে সবাই নিজেদের বাড়িতে চলে যায়। সাংবাদিক ফয়সালের মৃত্যুতে ডামুড্যায় শোক শরীয়তপুর ॥ নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় সাংবাদিক ফয়সালের অকাল মৃত্যুতে শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যরা ফয়সালের মৃত্যুকে যেন কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার সামসুদ্দিন সরদার ও মোসাম্মৎ সামসুন্নাহার বেগমের বড় ছেলে ফয়সাল আহমেদ (২৯)। পাঁচ ভাই বোনের মধ্য সে দ্বিতীয়। ২০০৪ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পর ঢাকা তিতুমীর কলেজে এইচএসসি এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স সম্পন্ন করে ফয়সাল। ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত ফয়সাল বৈশাখী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিল। ঢাকার ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে বড় বোন শিউলী আক্তারের বাসায় থাকত সে। গ্রামের বাড়িতে খুব কম আসত ফয়সাল। নেপালে ঘুরতে যাওয়ার কথা কাউকে বলেনি ফয়সাল। অফিস, বাসা, আত্মীয় স্বজন কাউকে না জানিয়েই নেপাল গিয়েছিল ফয়সাল। ঢাকায় বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বড় বোন শিউলীকে বলেছিল ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। এটাই পরিবারের কারও সঙ্গে ফয়সালের শেষ কথা ছিল। সর্বশেষ গত ৮/৯ মাস আগে পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শরীয়তপুর এসেছিল সে। অফিস থেকে ৫ দিনের ছুটি নিলেও নেপাল যাওয়ার বিষয়ে অফিসকে অবহিত করেনি। পরিবারের কেউ জানে না ফয়সাল নেপাল গিয়েছে। সোমবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বড় বোন শিউলী আক্তারকে বলেছিল ঢাকার বাইরে যাচ্ছে সে। এটাই ছিল পরিবারের কারও সঙ্গে ফয়সালের সর্বশেষ কথা। মায়ের হাতে রান্না করা গরুর মাংসের খিচুড়ি খুবই পছন্দ ছিল ফয়সালের। মা সামসুন্নাহার বেগম মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরে পেলে সেই খিচুড়ির কথা মনে করেই আহাজারি করছেন। ফয়সালের বাবা সামসুদ্দিন সরদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলে যে নেপাল গিয়েছে আমরা কেউ জানতাম না। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার অনেক পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারি ফোন দিয়ে ফয়সাল কোথায় আছে জানতে চান। এরপর তিনি বড় মেয়েকে ফোন দেন। তখন বড় মেয়ে জানায়, ফয়সাল ঢাকার বাইরে যাওয়ার কথা বলে সকালে বাসা থেকে বের হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। রাতে তারা নিশ্চিত হন নেপালে বিধ্বস্ত বিমানে ফয়সাল ছিল। পিতামাতার সঙ্গে দেখা করা হলো না শ্রেয়ার ॥ মির্জাপুর সংবাদদাতা জানান, পিতামাতার সঙ্গে দেখা করা হলো না কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী শ্রেয়া ঝার। সে সোমবার নিজ দেশ নেপালে যাওয়ার পথে নেপাল ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। শ্রেয়া কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী। জানা গেছে, নেপালের মাহুত্তারীর সানফাতে শ্রেয়ার বাড়ি। শ্রেয়া পিতা লক্ষণ ঝা ও মা মাধুরী ঝার সঙ্গে দেখা করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি প্রার্থনা করেন। কিন্তু তখন পরীক্ষার কারণে ছুটি পাননি। ইতোমধ্যে শ্রেয়ার ঠাকুর মার মৃত্যু সংবাদ আসে শ্রেয়ার কাছে। ঠাকুর মার মৃত্যু সংবাদ শুনে এবং পিতা মাতার সঙ্গে দেখা করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট পুনরায় ছুটি চান সে। ছুটি মঞ্জুর হলে রবিবার টার্ম পরীক্ষা দিয়ে সোমবার সকালে মির্জাপুরে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ থেকে ঢাকা বিমান বন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। সেখান থেকে ইউএস বাংলা এয়ার লাইন্স বিমানে নেপাল যাওয়ার পথে ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হলে সেখানে শ্রেয়ার মৃত্যু হয়। এ খবর কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছালে কুমুদিনী ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিবাহ বার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিল শশী-শাওন দম্পতি ॥ মানিকগঞ্জ ও রংপুর সংবাদদাতা জানান, সামনেই শশী-শাওন দম্পতির বিবাহ বার্ষিকী। তাই ১৭ র্মাচের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে ইউএস-বাংলা বিমানে চেপে নেপাল যাচ্ছিলেন মানিকগেঞ্জের মেয়ে তাহিরা তানভিন শশী ও তার স্বামী ডাঃ রেজায়ানুল হক শাওন। কিন্তু মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা কেড়ে নিল শশী-শাওন জুটির বিবাহবার্ষিকী উদ্যাপনের সেই স্বপ্ন। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন শশী। আর গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন শাওন। নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শশীর বাড়ি মানিকগঞ্জ শহরের লঞ্চঘাট এলাকায়। সদ্য এলএলবি পাস করা শশী বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন। শশীর স্বামী ডাঃ শাওনের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গোপালপুর এলাকায়। তার বাবার নাম মোজাম্মেল হক। শশীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ রেজা হাসানের মেয়ে শশীর সঙ্গে ডাঃ শাওনের বিয়ে হয় সাত বছর আগে। তবে তাদের কোন সন্তান নেই। স্বামী ডাঃ রেজায়ানুল হক শাওন রংপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। মা-বাবা ও স্বামীসহ শনিবার ঢাকায় খালাত বোনের বিয়ের দাওয়াত খান শশী। আগামী শনিবার তাদের বিবাহবার্ষিকী উদ্যাপন করতেই সোমবার ইউএস-বাংলার বিমানে করে স্বামীর সঙ্গে তারা নেপালের উদ্দেশে রওনা হন। বিমান ছাড়ার আগ মুহূর্তে শশী তার ফেসবুক আইডিতে ছবি আপলোড করে লিখেছেন, Nd here d journey begains.....# Advance clelebration_of_anniversary # special_march#mmnzzz_wid_him. ২৭ বছর বয়সী শশীর অকাল মৃত্যুতে স্বজনদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দুর্ঘটনায় আহত শশীর স্বামী ডাঃ শাওন নেপালের একটি হাসপাতালে আইসিউতে ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছেন তার মামা এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান । দুর্ঘটনার পর দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে স্ত্রী তাহিরা তানভীর শশী মারা যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নেপালের ও’ম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ডাঃ রিজওয়ানুল হক শাওন। তার শরীরের ৫০ ভাগেরও বেশি পুড়ে গেছে। দুর্ঘটনার পর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাঃ শাওনের বন্ধু ডাঃ কামরুল হুদা আপেল এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি নেপালে তাদের শিক্ষার্থীর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক এসব তথ্য পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। ডাঃ আপেল জানান, তার বন্ধু রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এ হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে রয়েছেন। তিনি কয়েকদিন আগে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বিমানে স্ত্রীসহ ইউএস-বাংলার বিমানে নেপালে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত বিমানে থাকা যাত্রীদের যে নামের তালিকা দেয়া হয়েছে তার মধ্যেও ডাঃ রিজওয়ানুল হক শাওন এবং তার স্ত্রী তাহিরা তানভীর শশীর নাম রয়েছে। ভ্রমণের নেশায় নেপালে যান বরিশালের পিয়াস ॥ বরিশাল থেকে স্টাফ রির্পোটার জানান, নেপালের কাঠমান্ডুতে দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত বিমানের যাত্রী ছিলেন বরিশালের সন্তান পিয়াস রায়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে স্বজনদের আহাজারিতে বরিশাল নগরীর নতুনবাজারস্থ মথুরানাথাত পাবলিক স্কুল সংলগ্ন একটি বহুতল ভবনের চতুর্থতলার ফ্ল্যাট বাসায় চলছে শোকের মাতম। স্তব্ধতা বিরাজ করছে গোটা এলাকাজুড়ে। স্বজনরা যেখান থেকে যে খবর পাচ্ছেন তা নিয়েই ছুটে আসছেন তাদের বাসায়। পিয়াস রায় জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের মধুকাঠি গ্রামের বাসিন্দা সুখেন্দু বিকাশ রায়ের পুত্র। তারা বরিশাল নগরীতে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সুখেন্দু বিকাশ রায় ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার চন্দ্রকান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মা পূর্ণা রানী মিস্ত্রি বরিশাল সরকারী পলিটেকনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাদের এক পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে পিয়াস রায় বড়। পিয়াস বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে গোপালগঞ্জের শেখ সাবেরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। ছাত্রজীবনে ওই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন পিয়াস। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতটি দেখা হলো না ফারুক ও তার শিশু সন্তানের ॥ গাজীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতটি দেখা হলো না গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামের এফ এইচ প্রিয়ক ওরফে ফারুক হোসেন ও তার তিন বছরের একমাত্র সন্তান প্রিয়ংময়ী তামাররার। বেড়ানোর উদ্দেশে স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানি ও তাদের একমাত্র সন্তান প্রিয়ংময়ীকে নিয়ে ফারুক বিমানে চড়ে নেপাল গিয়েছিলেন। একই বিমানে চড়ে ফারুকের মামাত ভাই মেহেদী হাসান অমিত ও অমিতের স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা আক্তারও নেপাল যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের সেই আনন্দ সফর পরিণত হয়েছে বিষাদে। সোমবার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নেপালেই মারা গেছেন ফারুক ও তার মেয়ে প্রিয়ংময়ী। ফারুকের স্ত্রী এ্যানিসহ বাকি তিনজন দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে নেপালের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এখন তাদের পরিবারে চলছে শুধুই আহাজারি। নিহত ফারুক হোসেনের মামা মশিউর রহমান নয়েস জানান, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বিমানে চড়ে আকাশ থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতটি দেখার প্রবল ইচ্ছা ছিল ফারুকের। সেজন্য বেশ কয়েক দিন ধরেই চলছিল নানা আয়োজন। সে ইচ্ছা পূরণ করতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ইউএস বাংলার বিমানে চড়ে বাংলাদেশ থেকে সোমবার নেপালের উদ্দেশে রওনা হয় ফারুক। একই বিমানে চড়ে ফারুকের মামাত ভাই মেহেদী হাসান অমিত ও অমিতের স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা আক্তারও নেপাল যাচ্ছিলেন বেড়াতে। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার কারণে সবকিছু ল-ভ- হয়ে গেছে। উভয় পরিবারের ৫ সদস্যের মধ্যে দুর্ঘটনায় ফারুক ও তার মেয়ে প্রিয়ংময়ী নিহত হয়েছে এবং অন্যরা গুরুতর আহতাবস্থায় নেপালের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্বজনরা জানায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামের শরাফত আলী ও ফিরোজা দম্পতির একমাত্র সন্তান ফারুক হোসেন। প্রায় ৫ বছর আগে ফারুকের বাবা শরাফত আলী মারা যান। স্থানীয় জৈনাবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক লাগোয়া গুলশান স্পিনিং মিল সংলগ্ন দৃষ্টি নন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন ফারুক। বাবার মৃত্যুর পর এ বাড়িতেই মা ও স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাস করেন ফারুক। ফারুক একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর নেশা হিসেবে ফটোগ্রাফিতে নজর দেন। তার প্রিয় শখ ছিল ছবি তোলা। ছবি তোলার জন্য তিনি Bengal Image National Photo Contest ২০১৬ পদক জিতেছেন। তার ইচ্ছা ছিল নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। প্রকৌশলী রকিবুলের বাড়িতে মাতম ॥ বেলকুচি সংবাদদাতা জানান, নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভূবন বিমান বন্দরে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত প্রকৌশলী রকিবুল হাসানের (২৯) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহত রকিবুল সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বিনানুই গ্রামের মৃত রবিউল করিমের ছেলে। রকিবুল মাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। একমাত্র বড় বোন বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করেন। মঙ্গলবার সকালে রাকিবুলের গ্রামের বাড়ি বিনানুই গিয়ে দেখা যায়, তার মৃত্যুর খবর টিভিতে দেখার পর থেকে এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে স্বজনেরা। এ দিকে যমুনা চরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রকিবুলের বেড়ে ওঠা সম্ভুদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, রাকিবুল ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। স্কুলের সব ক্লাসেই প্রথম স্থানে ছিল। এলাকার সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করত। তার অকাল মৃত্যুতে শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খুলনায় আলিফের অপেক্ষায় স্বজনরা ॥ খুলনা অফিস জানায়, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শোকার্ত পরিবেশ। নেপালে বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে এম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতী গ্রামে অলিফুজ্জামান আলিফের বাড়িতে। কখন ফিরবে, কী অবস্থায় ফিরবে তা মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি স্বজনরা। যদিও বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বজনেরা অলিফ মারা গেছেন এমন আশঙ্কায় ছিলেন। এর পর কোন সূত্র থেকে স্বজনরা জানতে পারেন আলিফ চিকিৎসাধীন আছেন। দিনভর বহু আত্মীয়স্বজনের আসা যাওয়া চলে ওই বাড়িতে। আলিফের বাবা, মা, ভাইসহ অন্যান্য স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কী ঘটেছে অলিফের ভাগ্যে তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা স্বজনদের। আলিফের জন্য তার রূপসা উপজেলার আইচগাতী গ্রামের বারো পূণ্যের মোড়ের বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছেন তার আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী। মঙ্গলবার দুপুরে রূপসা উপজেলার আইচগাতী গ্রামের বারো পূণ্যের মোড়ে অবস্থিত আলিফদের তিনতলা বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষের ভিড়। সবাই প্রতীক্ষা করছেন আলিফের সর্বশেষ খবর জানার জন্য। কখন কাঠমান্ডু থেকে অলিফের খবর পাওয়া যাবে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকতেন অবিবাহিত আলিফ। ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে আলিফের চাচা মোঃ বাবর আলীর দিকে। আদরের ভাইপোর জন্য একাধারে কেঁদেই চলেছেন, আর আলিফের সঙ্গে তার বিভিন্ন স্মৃতির কথা জানিয়ে বলছেন, ‘আমাকে আর কে বাবা বলে ডাকবে, আমার বুকের মানিক তুই কেন নেপালে গেলি? পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আলিফুজ্জামান আলিফ খুলনা ব্রজলাল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০০৭ সাল হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে কাজ করেছেন। ১৯৮৭ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তারা তিন ভাই। বড় ভাই পিরোজপুর বিআরডিবি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। মেঝ ছিলেন অলিফুজ্জামান। আর ছোট ভাই ইয়াসির আরাফাত নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে বিবিএতে অধ্যয়নরত। পিতা আছাদুজ্জামান একটি পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন।
×