ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৪ মার্চ ২০১৮

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে রিজার্ভের পরিমাণ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩৩৬ কোটি ডলার। এক সপ্তাহ পর (৮ মার্চ) সেই রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৯৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এশিয়া ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেশগুলো বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চাল আমদানি বেড়ে যাওয়ায় আমদানির পরিমাণ ব্যয় বেড়ে গেছে। সর্বশেষ আকুর দায় পরিশোধের পর আবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেলেও ভয়ের কোন কারণ নেই।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে রিজার্ভ কিছুটা কমে গেছে। যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জমা আছে, তা দিয়ে আগামী ছয় থেকে সাত মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব।’ এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে খাদ্য (চাল ও গম) আমদানি বেড়েছে ২১২ শতাংশ। শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশের মতো। জ্বালানি তেলের আমদানি বেড়েছে ২৮ শতাংশ এবং শিল্পের কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। এই অর্থবছরের ৬ মাসেই ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বছর শেষে এই অঙ্ক ৬০ বিলিয়ন ডলার পার হতে পারে। ২০১৭ সালের ২১ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩০১ কোটি ডলার। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারিতে সে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৩১ কোটি ডলার। যদিও গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে রিজার্ভ বাড়ার রেকর্ড গড়ছিল। কিন্তু নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে হঠাৎ বেড়ে গেছে আমদানির পরিমাণ। এতে সার্বিকভাবে চাপ বেড়েছে রিজার্ভে। যদিও দেশে প্রবাসীদের পাঠানো আয় তথা রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। আগের বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় গত ফেব্রুয়ারিতে ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। একইভাবে বাড়ছে রফতানি আয়ও। অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রফতানি আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ২৯৯ কোটি ডলার। এর দেড় মাস পর ১৮ মে এটি বেড়ে হয় ২ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার। এর দেড় মাস পর ৩০ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ হাজার ৫০২ কোটি ডলার। এভাবে বাড়তে বাড়তে ২০১৬ সালের ৩০ জুন রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৩ কোটি ডলার। একইভাবে ২০১৭ সালের ৩১ মে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩ হাজার ২২৪ কোটি ডলার। গত বছরের ২১ জুন রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩০১ কোটি ডলার। ২০১৭ সালের জুনের পর থেকে রিজার্ভ আর বাড়েনি। ৩১ অক্টোবর, ২ নবেম্বর ও ২৮ ডিসেম্বর ৩৩ বিলিয়ন ডলারে ফিরলেও এখন পর্যন্ত ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ঢুকতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা কমলেও ভয়ের কোনও কারণ নেই।’ তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ বেশকিছু বড় প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে অনেক খরচ বাড়ছে। গত বছর বন্যায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যশস্য আমদানি অনেক গুণ বেড়েছে। এর কারণে রিজার্ভে কিছুটা চাপ পড়েছে।’ অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মান অনুযায়ী, যে কোন দেশে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমান রিজার্ভ থাকলেই তাকে নিরাপদ মাত্রা ধরা হয়। বাংলাদেশে বছরে গড়ে আমদানি ব্যয় হয় ৩৫০ কোটি ডলার। এ হিসাবে বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে ৮ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু তবু গত আমদানির চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল করার দায়ে গত বছরে শেষ সময়ে ২৬ ব্যাংককে শোকজ করতে হয়। এদিকে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
×