ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৬৯ বছরে ৭০টির বেশি বিমান দুর্ঘটনা

অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে নেপাল

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৪ মার্চ ২০১৮

অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে নেপাল

বর্তমানে বিভিন্ন দেশের বিমান উড্ডয়ন যেখানে সহজ ও নিরাপদ হয়ে উঠছে সেখানে অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপ থেকে বের হতে পারছে না নেপাল। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দেশটিতে প্লেন দুর্ঘটনা এখন নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। সোমবার কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বোম্বারডিয়ার কিউ ৪০০ প্লেনটি দুর্ঘটনা কবলিত হওয়া যার সর্বশেষ নজির। এ নিয়ে চলতি বছর বিশ্বের তিনটি যাত্রীবাহী প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটল। এএফপি, বিবিসি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ইউএস-বাংলার ওই প্লেনটি ঢাকা থেকে ৭১ জন আরোহী নিয়ে কাঠমান্ডু যাচ্ছিল। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় তাতে আগুন ধরে গেলে ৫০ জন নিহত হয়। দুর্ঘটনার পর নেপালের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৪৯ সাল থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত ৭০টির বেশি বিমান দুর্ঘটনা হলেও এত বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা খুব বেশি নেই। এর মধ্যে ৬৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বা তার আশপাশে এবং বাকিগুলো নেপালের অন্য শহরে। চালকের অদক্ষতা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং এয়ারক্রাফটের রক্ষণাবেক্ষণ ত্রুটির মতো বেশিরভাগ দুর্ঘটনার কারণ। তবে সোমবারের দুর্ঘটনার কারণ এটি ছিল না, সঙ্কেত নিয়ে ভুল বোঝাবুুঝির জেরে ট্র্যাজেডিটি হয়েছে জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশের যে বেসরকারী এয়ারওয়েজের প্লেন বিধ্বস্ত হয়েছে তার মোটো ছিল ‘ফ্লাই ফাস্ট- ফ্লাই সেফ’। সরকারী ও বেসরকারী মিলিয়ে নেপালে ১৭টি বিমানসংস্থা রয়েছে। এর সব ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর আকাশে উড্ডয়ন নিষিদ্ধ। উপমহাদেশের আর কোন দেশেরই বিমানসংস্থা এই মুহূর্তে ইইউতে ব্ল্যাক লিস্টেড নয়। একের পর এক বিমান দুর্ঘটনার কারণে এই ত্রিভুবনের নিরাপত্তা নিয়েও প্রায়ই আলোচনা হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে নেপালের কর্তৃপক্ষকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। পুরনো ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, নিয়মিত বিমান চলাচল শুরুর পর ১৯৭২ সালের মে মাসে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমান অবতরণ করার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। তাতে প্রায় ১শ’ জন যাত্রী ও ১০ ক্রু ছিল। নিহত হয় একজন। ১৯৯২ সালে থাই এয়ারওয়েজের একটি এয়ারবাস অবতরণ করার জন্য বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর পাহাড়ে ধাক্কা লাগলে এতে ১১৩ যাত্রীর সকলেই নিহত হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঘটে আরেকটি বড় দুর্ঘটনা। সেখানে পিআইএর একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৬৭ আরোহী নিহত হয়। ১৯৯৫ সালে রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বেষ্টনী ভেঙে মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়লে দুজন নিহত হয়। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে লুফথ্হানসার একটি প্লেন টেক অফের পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত হলে ৫ জন মারা যায়। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১৫ আরোহী। ২০১১ সালে বুদ্ধ এয়ারের একটি বিমান দুর্ঘটনার শিকার হলে ১৯ আরোহী মারা যায়। খারাপ আবহাওয়া ও নিচুতে থাকা মেঘের কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল পরে জানা যায়। ২০১২ সালে সিতা এয়ারের একটি বিমান উড্ডয়নের পরপরই একটি শকুনের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৯ আরোহীর সবাই মারা যায়। ২০১৫ সালে তুর্কী এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ঘন কুয়াশার মধ্যে নামতে গিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়ে। ৩০ মিনিট ধরে এটি বিমানবন্দরের উপর উড়তে থাকে। দ্বিতীবারের চেষ্টায় নামতে পারলেও সেটি রানওয়ে থেকে ছিটকে মাঠের ঘাসের উপর চলে যায়। তবে ২২৭ যাত্রীকে সেখান থেকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পুতিনের শোক ॥ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বাংলাদেশের বেসরকারী বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের প্লেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। সোমবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো পৃথক শোকবার্তায় তিনি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের শোকাহত পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
×