ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের মহিলা ফুটবল লীগে সেথু এফসির হয়ে খেলবেন জাতীয় দলের এই দুই কৃতী ফরোয়ার্ড

ভারতীয় লীগে চমক দেখাতে চান সাবিনা-কৃষ্ণা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ মার্চ ২০১৮

ভারতীয় লীগে চমক দেখাতে চান সাবিনা-কৃষ্ণা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে বিদেশী কোন ক্লাবের হয়ে খেলা প্রথম খেলোয়াড়ে পরিণত হন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের তৎকালীন সহ-অধিনায়ক এবং ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন। সেই সঙ্গে গড়েন ইতিহাস। এবার সাবিনার সাফল্যের মুকুটে যোগ হতে যাচ্ছে আরেকটি পালক। এবার তিনি খেলবেন ভারতের সেথু এফসিতে। সাবিনা একা নন, সেখানে তিনি সহযোদ্ধা হিসেবে পাবেন জাতীয় দলের আরেক ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকারকেও। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে তামিলনাড়ুতে শুরু হতে যাওয়া ইন্ডিয়ান উইমেন্স লীগে খেলবেন জাতীয় ও অ-১৬ দলের দুই অধিনায়ক সাবিনা-কৃষ্ণা। ওখানে তারা অবস্থান করবেন এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিটি দলে খেলতে পারবে কমপক্ষে তিন বিদেশী খেলোয়াড়। যদিও এখনও খেলার সূচী জানাতে পারেনি বাফুফে। ফিফা ফরোয়ার্ড প্রজেক্টের তত্ত্বাবধানে ৭ লাখ ইউএস ডলারের একটা প্রোগ্রাম। সেই অর্থ দিয়ে অল-ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন প্রথমবারের মতো এই লীগ আয়োজন করতে যাচ্ছে। সম্ভবত সেখানে ৮টি দল খেলবে। তারা অনেক নতুন নতুন দলকে এই লীগে নিয়েছে। ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন বাফুফের কাছে সাবিনা-কৃষ্ণার জন্য আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) চেয়েছে। বাফুফে তা দিয়ে দিয়েছে। এখন ভিসা প্রসেসিং চলছে। যদিও এখনও তাদের ভিসা হয়নি। তবে আজকের মধ্যেই হয়ে যাওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে সম্ভবত ১৫ মার্চ তারা উড়াল দেবেন ভারতের পথে। তাদের সঙ্গে সাবিনাদের সব ম্যাচের জন্য চুক্তি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চার ম্যাচ খেলবেন তারা। সেথু এফসি যদি নকআউট পর্ব পার হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যায় তাহলে ম্যাচ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সাবিনারা ভারতে খেলতে যাচ্ছে। তবে সেতু এফসি মোট কত টাকায় তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে সেটি বলতে নারাজ বাফুফে। তাদের ভাষ্য- সেথু এফসির সঙ্গে এখনও টাকা নিয়ে কথা চলছে। সেখানে সাবিনাদের পারফর্মেন্সের ওপর ভিত্তি করে টাকা দেয়া হবে। দেশের মহিলা ফুটবলকে এগিয়ে নিতে সেখানে নিজেদের সেরাটা দেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সাবিনা এবং কৃষ্ণা। তাদের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনেরও প্রত্যাশা শিষ্যরা যেন সেখানে ভাল করে দেশের ফুটবলকে সামনে নিয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানানোর জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তাদের ভবনের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন সাবিনা-কৃষ্ণা, জাতীয় মহিলা দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, বাফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক কোচ পল স্মলি এবং বাফুফের সদস্য আমিরুল ইসলাম বাবু। ওই লীগে ভারতের জাতীয় দলের অনেক অভিজ্ঞ-দক্ষ ফুটবলার খেলবেন। এ প্রসঙ্গে সাবিনার অভিমত, ‘তবে আমরাও যেহেতু কয়েক বছর ধরে ফুটবল খেলেছি, আমরাও নিশ্চয়ই ওদের চেয়ে পিছিয়ে নেই। তারপরও আমাদের জন্য এটা হবে অভিজ্ঞতা অর্জনের আদর্শ মঞ্চ। আশাকরি খুব দ্রুতই ওখানকার সবকিছুর সঙ্গেই আমরা মানিয়ে নিতে পারব।’ সাবিনার ভাষ্য, ‘এর আগে মালদ্বীপে গিয়ে দু’বার খেলে এসেছি। তারপরও বলব, সেই অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই ভারতে গিয়ে অনেক কাজে দেবে। ওখানকার ম্যাচগুলোতে অনেক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।’ মালদ্বীপের দুটি ক্লাবে দু’দফায় যখন গিয়ে লীগ খেলে এসেছিলেন সাবিনা তখন ওই লীগে অনেক ভারতীয় টপ প্লেয়ারও ছিল (যেমন জাতীয় দলে খেলা বালা দেবী)। তাদের নিয়ে বা বিপক্ষে খেলেছেন। কাজেই তাদের সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা আছে। এবার ভারতে খেলতে গেলে কোন সমস্যা হবে না বলেই মনে করেন তিনি। মালদ্বীপে গিয়ে দু’দফায় খেলে মোট ৫৯ গোল করেছিলেন সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনা। তিনি আরও জানান, ‘আমার এবং কৃষ্ণার ভারতে গিয়ে খেলাটা নিশ্চয়ই অন্য ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করবে। আমরা ওদের জন্য রোল মডেল হতে পারি। আমরা যদি ভাল কিছু করতে পারি, তাহলে অন্যরাও বাইরে গিয়ে খেলতে চেষ্টা করবে। এতে করে আরও অনেক বাংলাদেশী ফুটবলারের বিদেশের লীগে খেলার পথটা সুগম হবে। আমরা যেন ওখানে ভাল খেলতে পারি সেজন্য দেশবাসীর দোয়া চাই।’ কৃষ্ণা রানী সরকার। টাঙ্গাইলের মেয়ে। ফরোয়ার্ড। কৃষ্ণা জানায়, ‘ওখানে গিয়ে ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকবে বেস্ট ইলেভেনে খেলা, ভাল খেলা, গোল করা এবং দলকে জেতানো। নিজের সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করব।’ বাংলাদেশের জাতীয় দল এবং সব বয়সভিত্তিক দল মিলিয়ে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে দুটি হ্যাটট্রিকসহ মোট ২০ গোল করা কৃষ্ণার ২০১১ সালে ফুটবল খেলা শুরু। বঙ্গমাতা ফুটবলে খেলেছে জেলা পর্যায় পর্যন্ত। গোলাম রায়হান পাপন স্যার (গোলাম রব্বানী ছোটনের ছোট ভাই) এবং নিজ স্কুলের হেড স্যার আব্দুল লতিফের অবদানেই কৃষ্ণা আজ এই পর্যন্ত এসেছে। সাবিনা-কৃষ্ণার কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘ভারতীয় ক্লাবের হয়ে খেলার ডাক পাওয়াটাই প্রমাণ করে বাংলাদেশের নারী ফুটবল অনেক উন্নতি করছে এবং এগোচ্ছে। ওদের ওখানে খেলার ডাক পাওয়াটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের জন্য বড় প্রাপ্তি। এই ধারাটা সবে শুরু হলো। আগামীতে তাদের দেখানো পথ ধরে অন্য মেয়েরাও নিশ্চয়ই নিজেদের যোগ্যতায় ওখানে যাবে। ওরা দু’জনেই যথেষ্ট ফিট আছে। তাদের প্রতি আমার উপদেশ- ওখানে তোমাদের ব্যবহার যেন ভাল থাকে। কঠোর পরিশ্রম করবে। তোমাদের ওপর অনেক দায়িত্ব। আমি তোমাদের সাফল্য কামনা করছি।’ মালদ্বীপে এর আগে খেললেও ভারতে এবারই প্রথম। দু’দেশের ফুটবলের পার্থক্যটা নাকি অনেক অভিমত সাবিনার, ‘মালদ্বীপ আর ভারতের ফুটবলে আকাশ পাতাল তফাৎ। তারা চেষ্টা করবে অন্যান্য দেশ থেকে ভাল ফুটবলার আনতে। অন্য ক্লাবের বিদেশী ফুটবলারদের বিপক্ষে খেলা আমাদের জন্য একটা ভাল অভিজ্ঞতা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দলের ফুটবলার থেকে আমরা ফিট বলেই মনে করি। যেহেতু আমরা দু’জনই স্ট্রাইকার। আমাদের দু’জনেরই একই লক্ষ্য। সুযোগ পেলেই গোল আদায় করে নেয়া।’ এখন দেখার বিষয়, সাবিনা-কৃষ্ণা কতটা মাতাতে পারেন ভারতের লীগ।
×