ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজনে মধ্যাহ্ন ভোজে শেখ হাসিনা

কাজে লাগাতে হবে জনশক্তি ও পুঁজি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৩ মার্চ ২০১৮

কাজে লাগাতে হবে জনশক্তি ও পুঁজি

বিডিনিউজ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের বিপুল তরুণ জনশক্তি এবং সিঙ্গাপুরের পুঁজি কাজে লাগিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতায় এগিয়ে নিতে পারলে দুই দেশই আরও লাভবান হতে পারে। সোমবার সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ভবন ইস্তানায় এক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সম্মানে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোং এই মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর উন্নয়নের দুটি ভিন্ন পর্যায়ে অবস্থান করলেও সমৃদ্ধি অর্জনে দুই দেশের শক্তির জায়গাগুলো পরস্পরের পরিপূরক হতে পারে। সিঙ্গাপুরে আপনাদের আছে পুঁজি, আধুনিক প্রযুক্তি আর জ্ঞান। আর বাংলাদেশে আমাদের আছে বিপুল জনশক্তি। আমাদের মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ, তারা শিক্ষিত। এ বিষয়গুলো যৌথভাবে কাজে লাগাতে পারলে দুই দেশই আরও লাভবান হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য সিঙ্গাপুর একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। আমি আশা করি সিঙ্গাপুর সরকার তাদের জন্য সম্মানজনক একটি কর্মপরিবেশ দেবে। সরকারী তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি বাংলাদেশী সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। এর মধ্যে ৩০ হাজার বাংলাদেশী কাজ করছে জাহাজ নির্মাণশিল্পে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক যোগাযোগের সূচনা হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে। এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অতীত ইতিহাস, অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে। এই মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব এবং প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। পরে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এবং বিমান চলাচলে সহযোগিতার বিষয়ে স্বাক্ষরিত দুটি সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা মধ্যাহ্নভোজে বলেন, আমাদের ব্যবসায়ী চেম্বারগুলো আজ মঙ্গলবার আরও কয়েকটি সমঝোতা স্মারকে সই করবে। এসব চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সিঙ্গাপুরের কোম্পানিগুলো যে বাংলাদেশের বিষয়ে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে, তাতে আমি আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী এই সফরে উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য সিঙ্গাপুর সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং সিঙ্গাপুর আসিয়ানের নেতৃত্ব নেয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংকে অভিনন্দন জানান। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দুটি এমওইউ স্বাক্ষর ॥ এদিকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এবং বিমান চলাচলে সহযোগিতার বিষয়ে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ। সোমবার দুপুরে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ভবন ইস্তানায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের উপস্থিতিতে এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে বিমান চলাচল বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশে বেসরকারী বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব এস এম গোলাম ফারুক এবং সিঙ্গাপুরের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি লোহ নাই সেং। সরকারী-বেসরকারী যৌথ অংশীদারত্বের প্রকল্পে তুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে অপর সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন এবং সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ট্যান সুন কিম। প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে রবিবার সিঙ্গাপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সকালে তিনি সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট ভবন ইস্তানায় পৌঁছলে লি সিয়েন লোং সেখানে তাকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে ইস্তানায় লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই সিঙ্গাপুরের সশস্ত্র বাহিনীর একটি বিশেষ দল তাকে অভিবাদন জানায়। এ সময়, দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব এবং প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। পরে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সিঙ্গাপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তার সম্মানে সেখানে একটি অর্কিডের নামকরণ করা হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা’। প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। এদিন সন্ধ্যায় তিনি যোগ দেবেন সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের নৈশভোজে। চার দিনের সফর শেষে ১৪ মার্চ দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সিঙ্গাপুরে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সোমবার সকালে ইস্তানায় সিঙ্গাপুর প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় অফিস কাম বাসভবনে সংবর্ধনা দিয়েছে দেশটির সরকার। শেখ হাসিনা স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় ইস্তানায় পৌঁছলে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং তাকে অভ্যর্থনা জানান। ইস্তানায় সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও অবস্থিত। -খবর বাসসর। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ইস্তানার গেটে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামলে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান। পরে, সিঙ্গাপুরের সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অর্নার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন ও গার্ড পরিদর্শন করেন। এ সময় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। শেখ হাসিনা রবিবার বিকেলে চার দিনের সরকারী সফরে সিঙ্গাপুর পৌঁছেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের আমন্ত্রণে তিনি এ সফর করছেন।
×