ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নেপাল ট্র্যাজেডি ॥ ইউএস বাংলা বিমান বিধ্বস্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৩ মার্চ ২০১৮

নেপাল ট্র্যাজেডি ॥  ইউএস  বাংলা  বিমান  বিধ্বস্ত

আজাদ সুলায়মান ॥ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের বেসরকারী এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলার একটি প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৫১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে নেপাল সেনাবাহিনী ও ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। ইউএস বাংলার পক্ষ থেকে হতাহতের কোন খবরই সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত না করলেও উদ্ধারকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন- এ মুহূর্তে নেপালের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কমপক্ষে ১৯ জন। ইউএস বাংলার সিইও রাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- ওই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানসহ জীবিত ১৬ জনকে চিহ্নিত করা গেছে এবং তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নেপালের স্থানীয় দৈনিক দ্য হিমালয় টাইমস বলছে, বিমান বিধ্বস্তের এ ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি প্রাণহানির শঙ্কা প্রকাশ করেছে টিআইএ। সোমবার কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিএস ২১১ নামের ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়। ৭৮ জন ধারণে সক্ষম ওই প্লেনে যাত্রীদের পাশাপাশি ৪ ক্রু ও ৬৭ যাত্রী মিলে মোট ৭১ আরোহী ছিল। যাত্রীদের মধ্যে ৩৭ পুরষ,২৭ নারী ও দুইজন শিশু ছিলেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের ৩২, নেপালের ৩৩, চীনের ১ ও মালদ্বীপের ১ যাত্রী ছিল। ঘটনার পর পরই কাঠমান্ডু এয়ারপোর্র্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। হতভাগা প্লেনটির কো-পাইলট ফারিতুল মৃদুলা ও দুই ক্রু প্রাণ হারিয়েছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে কমপক্ষে ৩৪ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও নেপালের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোও অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে। ঘটনার পর পরই সিঙ্গাপুর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ দেশে ফিরছেন। দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী খাড়গা প্রসাদ শর্মা অলি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাম বাহাদুর থাপা, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামসও। স্মরণকালের এই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের প্রতি শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পীকার, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। এ ঘটনায় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। রাতেই এ কমিটি নেপাল যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সিইও আসিফ ইমরান জানিয়েছেন, নেপালের এয়ার টাওয়ার কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসের ভুল বার্তার দরুন ক্যাপ্টেন আবিদ রানওয়ের উল্টো দিক থেকে অবতরণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। ইতোমধ্যে ওই এটিসি ও ক্যাপ্টেনের মাঝে কি ধরনের সংলাপ হয়েছে তা ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে- এটিসির ভুল বার্তায় ল্যান্ড করতে গিয়ে প্লেনটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। নেপালের বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক সঞ্জীব গৌতম বলেন, রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এটা দক্ষিণ দিকে নামার কথা থাকলেও উত্তর দিক দিয়ে নামে। কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। জানা গেছে, ফ্লাইটটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছায়। অবতরণের সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এরপর বিমানবন্দরের কাছেই একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয় এটি। ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও নেপাল সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রেম নাথ ঠাকুর জানান, ৪৫ জনকে কাঠমান্ডু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বেশিরভাগকেই মৃত ঘোষণা করা হয়। এদিকে ভারতীয় একটি সম্প্রচার মাধ্যমকে উদ্ধৃত করে রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরটি বলছে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৩৪টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ইউএস বাংলা জানিয়েছে, বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায় প্লেনটি। ঢাকায় সিভিল এভিয়েশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বিএস২১১ নম্বর ফ্লাইটটিতে ৪ ক্রুসহ প্লেনটিতে আরোহী ছিলেন ৭১ জন। নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সুরেশ আচার্য্য জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৩৫ জনকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের পূর্ব পাশে দুর্ঘটনা কবলিত উড়োজাহাজ। মারা যাওয়ার বিষয়ে কোন তথ্য এখনও নিশ্চিত নই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্লেনটি অবতরণের সময় বিমানবন্দরের পূর্ব পাশে আছড়ে পড়ে। বিকট শব্দে রানওয়েতে স্পর্শ করতেই আগুন ধরে যায়। কয়েক শ’ মিটার সামনে গিয়ে পূর্বপাশের একটি মাঠে গিয়ে থামে। এ সময় দাউ দাউ করে আগুন ছড়াতে দেখা যায়। কয়েক মিনিট পরই সেখানে ছুটে যায় দমকল ও সেনাবাহিনীর টিম। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রেম নাথ ঠাকুর জানান, প্লেনটি অবতরণের সময় তীব্র ঝাঁকুনি খেয়ে দিক বদলে পূর্ব পাশের একটি ফুটবল মাঠে আছড়ে পড়ে। এসময় প্লেনটিতে আগুন ধরে যায়। বিধ্বস্ত প্লেনটি বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ মডেলের এস২-এজিইউ মডেলের। বাইরে পাখাবিশিষ্ট এ ধরনের প্লেনে সর্বোচ ৭৮টি আসন থাকে। ইউএস বাংলা দাবি করছে, এটি তাদের বহরে যোগ হওয়া সর্বশেষ নতুন প্লেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এই মডেলের এয়ারক্রাফট বেশ নির্ভরশীল। দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানও কম। ওই ফ্লাইটের বসন্ত বোহেরা নামের এক যাত্রী জানান, ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার সময় সব স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু ত্রিভুবনে অবতরণের আগ মুহূর্তে উড়োজাহাজ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। হঠাৎ প্রচন্ড ঝাঁকুনি শুরু হয়। এর পরপরই বিকট শব্দ। আমি জানালার ওপর আছড়ে পড়লাম। কীভাবে যেন ভাঙ্গা জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর ঠিক কী ঘটেছে তা মনে করতে পারছি না। আমার মাথা আর পায়ে আঘাত লেগেছে। তারপরও আমার সৌভাগ্য যে এমন ঘটনার পরও আমি বেঁচে আছি। দুর্ঘটনার পর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে প্লেন ওঠা-নামা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত হিমালয়ের দেশের বিমানবন্দরটির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ থাকবে। এ সম্পর্কে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুলাহ আল মামুন বলেন, আমরা নিজেরাও এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি কী ঘটেছিল। আমাদের স্টেশন ম্যানেজারও দেশে রয়েছে। বিস্তারিত জেনে আমরা জানাতে পারব। নেপালের বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক সঞ্জীব গৌতম কয়েকটি বিদেশী সংবাদমাধ্যমকে তাৎক্ষণিক বলেন, রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এটা দক্ষিণ দিকে নামার কথা থাকলেও উত্তর দিক দিয়ে নামে। প্রাথমিকভাবে বলা যায়, কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। কিংবা হেভি ল্যান্ডিং করার কারণেও এমনটি হতে পারে। আনুমানিক এসব তথ্য প্রচারের আগে আমরা চেষ্টা করছি বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে। এ বিষয়ে আর্নিকো পান্ডে নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী নেপালের সংবাদমাধ্যম মাই রিপাবলিকাকে বলেছেন রানওয়েতে বাঁক নেয়ার সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আমি সংযোগ সড়কে ছিলাম। দেখলাম বিমানটি টার্মিনালকে পেছনে ফেলে দক্ষিণ দিকে দ্রুত বাঁক নিচ্ছে। এরপরই রানওয়ে থেকে তা অদৃশ্য হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে বিশালাকারের ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। খুব নিচ দিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ারের ওপর দিয়ে বিমানটিকে উড়তে দেখেছিলেন। হটলাইন ॥ দুর্ঘটনার পর পরই নেপালে হটলাইন চালু করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ তথ্য জানিয়েছেন। নম্বরগুলো হলো- Md. Al alamul Emam, কনসুলার +৯৭৭৯৮১০১০০৪০১ ও ৯৭৭৯৮৬১৪৬৭৪২২ দূতাবাসের সব কর্মকর্তা হাসপাতাল ও বিমানবন্দরে রয়েছেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে তাদের অন্তত ২ ঘণ্টা সময় লাগবে বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী। ইউএস বাংলা অফিসে স্বজনদের ভিড় ॥ দুর্ঘটনার খবর ছড়াতেই রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের অফিসে নেপালগামী বিমানে থাকা যাত্রীর স্বজনদের ভিড়ও ততই বাড়ছে। তাদের কান্নায় অফিসের পরিবেশ যেন ভারি হয়ে উঠছে। তাদের কেউ সান্ত¦না দিতেও পারছে না। রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার উম্মে সালমা। সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তিনি। বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এ্যাসিস্ট্যান্ট চীফ হিসেবে কর্মরত। তিনদিনের দাফতরিক সফরে (অফিসিয়াল ট্রিপে) সোমবার ইউএস বাংলার বিমানে কাঠমান্ডু রওনা দিয়েছেন তিনি। এরপরই আসে বিমান দুর্ঘটনার খবর। সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বারিধারারা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের অফিসে ছুটে আসেন তার বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ। বোনের জন্য আহাজারি করতে থাকনে তিনি। বোনকে জীবিত ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি। শোক যেন তাকে নির্বাক করেছে। তার সঙ্গে একই বিমানে ছিলেন সিনিয়র সহকারী প্রধান নাজিয়া আফরিন চৌধুরী। নেপালে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলার ফ্লাইটে পরিকল্পনা বিভাগের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) দুই নারী কর্মকর্তার থাকার কথাটি নিশ্চিত করেছেন জিইডির সদস্য ড. সামসুল আলম। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি। নেপাল দূতাবাসে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। কিন্তু দূতাবাস এখন পর্যন্ত কিছুই বলতে পারছে না। এদিকে গণমাধ্যমগুলোতেও ফোন করে অনেকেই তাদের প্রিয়জন ওই ফ্লাইটের যাত্রী ছিল বলে জানিয়ে তাদের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান। এই ফ্লাইটেই যাত্রী ছিলেন সানজিদা বিপাশা, রফিক জামান রিমু ও তাদের ছয় বছর বয়সী ছেলে অনিরুদ্ধ। বিপাশার ভাই শাহরিয়ার মিঠুন বলেন- বেলা সাড়ে ১২টায় তাদের তুলে দেয়ার সময় সবশেষ কথা হয়েছিল। এরপর দুর্ঘটনার খবর শুনছি। আমরা খুবই আপসেট। বিকেল ৫টায় বিপাশার ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় পরিবারের সদস্যদের কান্নাকাটির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। বিপাশা একটি বেসরকারী সংস্থায় জনসংযোগ শাখার দায়িত্ব পালন করেন। ওই সংস্থার সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন,এ পর্যন্ত ৫০ জন নিহতের খবর পাচ্ছি, হাসপাতালে রয়েছে বাকিরা। বিপাশার পরিবারের বিষয়ে আমরা নেপালেও যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কোথাও থেকে কোন খবর পাচ্ছি না। খুবই চিন্তিত। জানি না, ভাগ্যে কী ঘটেছে, আমরা প্রার্থনা করছি; ভাল খবরের আশায় রয়েছি। এক সময় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রিমু। এখন তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। রাজশাহীর রয়েটের সিএসই বিভাগের প্রভাষক ইমরানা কবির হাসিও ছিলেন এই ফ্লাইটে। স্বামী রকিবুল হাসানও ছিলেন তার সঙ্গে। হাসির বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি যাত্রা শুরুর আগে ফেসবুকে লিখেছেন- ‘ভ্যাকেশন স্টার্টস নাউ’। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে হাসি ও রকিবুলের স্বজনরা রয়েছেন উদ্বেগের মধ্যে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান নাজিয়া আফরিন চৌধুরী এবং বেগম উম্মে সালমাও ছিলেন এই ফ্লাইটে। তারা একটি কর্মশালায় অংশ নিতে কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন। গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পিয়াস রায়ও এই ফ্লাইটে ছিলেন। যাত্রা শুরুর একটি ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘টাটা মাই কান্ট্রি, ফর ফাইভ ডেজ। হেইলিং টু দ্য ল্যান্ড অব দ্য এভারেস্ট’। ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার ॥ সর্বশেষ জানা গেছে, বিধ্বস্ত প্লেনের ব্ল্যাকবক্সটি (প্লেনের ডাটা রেকর্ডার) উদ্ধার করা হয়েছে। বিকেলে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জেনারেল ম্যানেজার রাজকুমার ছেত্রী এ কথা জানান। তিনি জানান, দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্লেনের ব্ল্যাকবক্সটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনও বিধ্বস্ত প্লেনটির ধ্বংসাবশেষ সরাতে কাজ করছেন সেনাবাহিনীসহ উদ্ধারকারী কর্মীরা। উদ্ধার ১৬ ॥ এদিকে সন্ধ্যায় ইউএস বাংলার অফিসে সিইও আসিফ ইমরান জানিয়েছেন, কতজন মারা গেছে সে তথ্য নেই। তবে ১৬ জনকে জীবিত উদ্বার করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তা নিশ্চিত। তারা হলেন- ইমরান কবির, তুলসী দাস, ফাহমিদা, কবির, মেহেদী, রেজুয়ান, কামরুল, শারমীন, কিশোর, শাহীন, লায়ারা, কেশব পান্ডে, আশীষ ও কিশোয়ান। ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি ॥ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (টিআইএ) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালের নির্দেশে সিভিল এভিয়েশনের একজন ডাক্তার ও দুইজন উর্ধতন কর্মকর্তাকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই সঙ্গে অগ্রগামী একটি টিম নেপালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিমানবন্দর চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাতেই অগ্রগামী টিম নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
×