ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুরে বিষাক্ত সুপারির রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৩ মার্চ ২০১৮

সৈয়দপুরে বিষাক্ত সুপারির রমরমা বাণিজ্য

সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী ॥ সৈয়দপুর শহরের কুন্দলে নরসুন্দরের কাজ করতেন জাহাঙ্গীর। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে মজা (জাগ দেয়া) সুপারির দিয়ে পা সেবন করতেন। গত বছর রমজান মাসে দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের সংক্রমণে গালের গোশত খসে কয়েকমাস শয্যাশায়ী থাকার পর মারা যান। তার ৬ সদস্যের পরিবারটি এখন মানবেতর জীবনাতিবাহিত করছেন। এর কারণ কেউ জানত না। তবে ওই সময় তিনি বলেছিলেন ঠোঁটের দু’ কোণে ঘাঁ। এর অনেক ব্যয় বহুল চিকিৎসার পরেও রক্ষা হয়নি। এভাবে লাখ-লাখ পানসেবী এ মজা সুপারি সেবনে এ দৃশ্যমান ঘাঁ বহন করলেও বুঝতেই পারছেন না এতে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানসেবন করা যাবে। তবে অবশ্যই এর সঙ্গে অনুসঙ্গগুলো নির্ভেজাল হতে হবে। না হলে পানসেবীরা প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক অনুসন্ধানে জানা যায়, সৈয়দপুরের কতিপয় পান ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাইড্রোস মেশানো জাগ দেয়া সুপারি এনে তাতে আবার বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে পার্শ¦বর্তী হাটবাজারসহ উত্তরের প্রায় ৮ জেলায় বাজারজাত করছে। সূত্র মতে, শহরের শহীদ ডাঃ জিকরুল হক সড়কে গভীর রাতে সুপারি আড়তে সপ্তাহে দুই দফায় নামছে প্রায় ৫ হাজার বস্তা জাগ দেয়া (স্থানীয় ভাষায় মজা) সুপারি। এগুলো ট্রাকে করে আনা হচ্ছে নোয়াখালীসহ পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জনপদ থেকে। সেখানে জাগ দিয়ে উঠানোর পর মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হইড্রোস মিশিয়ে বস্তায় ভরে পাঠানো হয় বিভিন্ন গন্তেব্যে। সৈয়দপুরেও আসে এর একটি বড় চালান। যার একটি অংশ বাজারজাত হয় সৈয়দপুরে। অবশিষ্ট সুপারিগুলো সৈয়দপুরের ব্যবসায়ীরা উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হচ্ছে। এভাবে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলে এর রমরমা ব্যবসা। বাকি দু’মাস চলে আড়তের মজুদ সুপারি দিয়ে। সূত্রটি আরও জানায়, বর্তমানে প্রতি বস্তা সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়। সেই হিসাবে প্রতি সপ্তাহে এ বাজারে আসা ৫ হাজার বস্তার সুপারির মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। যা দশ মাসে ১২৯ কোটি টাকার সুপারি সৈয়দপুরের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের অন্য মোকামে। যেগুলো যাচ্ছে পানসেবীদের পেটে।
×