ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কেরানীগঞ্জে শহীদ কন্যার মানবেতর জীবন

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১৩ মার্চ ২০১৮

কেরানীগঞ্জে শহীদ কন্যার মানবেতর জীবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ১২ মার্চ ॥ ১৯৭১ সালের ২৫মার্চ ঠিক যেমনটি ঘটেছিল কেরাণীগঞ্জের হাউলী এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী শাজাহানের বাড়ি। সেই রাতের কথা মনে পড়লে, সবকিছু ছাপিয়ে আজও শাহানার মনে পড়ে হানাদার বাহিনীর পায়ের শব্দ, গোলা-গুলির ভীতিকর আওয়াজ। শাহানা তখন ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী। অবসরপ্রাপ্ত বাবা ও গৃহিনী মাকে ঘিরে সুখী এক পরিবার ছিল শাহানার। অথচ একাত্তরের মার্চ মাসের সেই কালো রাত তাদের জীবনটাকে একেবারে উল্টে-পাল্টে দিলো। চিরদিনের মতো পিতা, দাদা ও ফুপুকে হারিয়ে এতিম হলেন শাহানা আক্তার। শাহানা বললেন, ২৫ মার্চ ভোর রাতে প্রাণ রক্ষার্থে বাড়ি ছেড়ে বাবা, মা ও ফুপুসহ আমরা দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে পালাতে যাচ্ছিলাম। বিপরীত দিক থেকে আসা পাক হানাদার বাহিনী হঠাৎ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আর ওই গুলিতে আমার চোখের সামনে নিহত হন পিতা শাজাহান মিয়া, দাদা আঃ সামাদ ও ফুপু তছিয়া খাতুন। তখন মানুষ প্রাণ বাঁচানোর জন্য মনু ব্যাপারীর ঢাল হয়ে বিভিন্ন শস্য ক্ষেতের ওপর দিয়ে ভাংনা এলাকার দিকে যাচ্ছিল। সে সময় পাক বাহিনীর ছোড়া গুলিতে শত শত মানুষ প্রাণ হারায়। সে দিনের কথা আজও ভুলতে পারিনি। প্রতি নিয়ত ঘুমের ঘরে ওই পাক হানাদার বাহিনীর গুলি ও নির্মম হত্যাকা- চোখে ভেসে ওঠে বার বার। তিনি আরও বলেন, ২৫ মার্চ ঢাকা শহরে পাক বাহিনী হামলা করলে বুড়িগঙ্গার জাজিরা, আইথা, বেয়ারা, দোলেশ্বর, হাসনাবাদ, চর মিরেরবাগ, চর কালিগঞ্জ, ওয়াইজঘাট, সদরঘাট, বাদামতলী, সোয়ারীঘাট, মিটফোর্ড ঘাট, কামরাঙ্গীচর হয়ে হাজার হাজার বাঙ্গালী নর-নারী প্রাণ রক্ষার্থে কেরাণীগঞ্জে আশ্রয় নিতে থাকে। মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটি করে পাগল প্রায় হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মনু ব্যাপারীর ঢাল এলাকায় দেড় শতাধিক লোককে হত্যা করেছে পাক বাহিনী। এ ছাড়া ডাক পাড়া এবং বন্দ ডাক পাড়া এলাকায় মোটর মেশিন গান চালিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে মানুষের বাড়িঘর। তবে পাক হয়নাদের ভয়ে অনেক হিন্দু পরিবারকে আশ্রয় নিতে হয়েছে বিভিন্ন মসজিদে। তাদের মুসলিম পরিচয় দিয়ে বেচে থাকতে হয়েছে। পরিবার পরিজন হারিয়ে শাহানা আজ এতিম ও অসহায় জীবন যাপন করছে। তার ১টি ছেলে ও ১টি মেয়ে রয়েছে। মেয়েটির বয়স ১৫ বছর হলেও অর্থাভাবে তাকে লেখা-পড়া করাতে পারছে না শাহানা। তাছাড়া ছোট ছেলেনি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে। তার ইচ্ছে ছেলেটিকে ভাল কোন বিদ্যালয়ে পড়িয়ে একদিন দেশ সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলবে। কিন্তু তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার এই স্বপ্নগুলোকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দিব। ছেলেটিকে মানুষ করতে গেলে অনেক টাকা পয়সার প্রয়োজন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখেরবিষয় দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৪৬ বছর। কিন্তু আজও পর্যন্ত আমার পিতা, দাদা ও ফুপুর নামও শহীদের তালিকা অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। সরকারের কাছে মিনতি ২৫ মার্চের কালো রাতে যে বা যাহারা প্রাণ হারিয়েছে পাক বাহিনীর গুলিতে তাদের নাম-ঠিকানা অতি শীঘ্রই নথি ভুক্ত করলে ওই শহীদ পরিবারগুলো সরকার থেকে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পেতে পারে।
×