ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের রেখে আসা বিরান জনপদে নিরাপত্তা স্থাপনা নির্মাণ

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১৩ মার্চ ২০১৮

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের রেখে আসা বিরান জনপদে নিরাপত্তা স্থাপনা নির্মাণ

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ছেড়ে আসা সেই বিরাণ জনপদে এখন সামরিক নিরাপত্তা স্থাপনা নির্মাণ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। প্রদেশটির মংডুতে এই কার্যক্রম চলছে বেশ দ্রুত গতিতে। বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দিয়ে রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের চিহ্ন মুছে দেয়ার পর নতুন করে সেনা স্থাপনা গড়ার চলমান প্রক্রিয়ায় যে প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে তা হলো, মিয়ানমার সরকার আসলেই বিতাড়িত এই জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে চায় কি না। কারণ প্রত্যাবাসনে চুক্তি এবং আলোচনার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নানা কৌশলে ভয় দেখানোর কাজটিও করে চলেছে সেনারা। তাছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করার মধ্য দিয়ে ইস্যুটিকে ধীরে ধীরে গুরুত্বহীন এবং ধামাচাপায় ফেলার পথে এগুচ্ছে সুকৌশলে। একদিকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে ফেলে আসা ভিটে-বাড়িতে সরকারী স্থাপনা। এহেন দ্বিচারিতায় প্রশ্নবিদ্ধ মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতা। এদিকে রাখাইনে নির্যাতন এখন না থাকলেও হুমকি-ধমকি এবং পরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট আতঙ্কে এখনও প্রতিদিনই সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। এতে করে টেকনাফ এবং উখিয়ার স্থায়ী বাসিন্দারা রয়েছে চরম অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে। উটকো আসা বিরাট এই জনগোষ্ঠীর চাপ সামলাতে ত্রাহি অবস্থা তাদের। উৎকণ্ঠিত সকলের প্রশ্নÑ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে অপেক্ষা আর কতদিন? মিয়ানমারে সংবাদ মাধ্যম মিজিমা এবং বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, সেদেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে নিরাপত্তা স্থাপনা গড়ার কাজ করছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের যে ঘর-বাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল সেখানেই এসব স্থাপনা গড়ে উঠছে। স্যাটেলাইটে ধারণ করা চিত্র বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে মিয়ানমার সেনাদের এ তৎপরতা। এ্যামনেস্টি’র ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান বলেন, রোহিঙ্গাদের জায়গায় এখন ঘর উঠছে। তবে সেগুলো সামরিক স্থাপনা, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও টাই অবশ্য এপি’র কাছে দাবি করেছেন, ঘর-বাড়ি পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন সরিয়ে সেখানে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য। অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন এই মুখপাত্র। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গা গ্রামগুলোকে নতুন ঘর নির্মাণ করছি পুনর্বাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী। রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের প্রমাণ ধ্বংস করতে নয়। সেখানে সামরিকায়নের অভিযোগ অস্বীকার করে জাও টাই বলেন, এলাকার নিরাপত্তার জন্য শুধুমাত্র পুলিশ পোস্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রত্যাবাসন শুরু হতে আর কতদিন ॥ নিজেদের নাভিছেড়া দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সহিংসতায় পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তিন মাসের মাথায় মিয়ানমার চুক্তিতে সই করলেও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে তারা (সেনাবাহিনী) আগে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পরিকল্পনা মতো এগুচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কালক্ষেপণ করে তারা গণহত্যার প্রমাণ মুছে ফেলছে। নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে অসংখ্য গণকবর, যাতে বিদেশী পর্যবেক্ষকগণ সেখানে সফরে গেলে কোন কিছুরই চিহ্ন খুঁজে না পায়। এদিকে চুক্তিতে সই করে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার আগ্রহী বোঝানোর লক্ষ্যে মংডু এলাকায় ৩২টি অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পও নির্মাণ করে রেখেছে। রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে ফেলে আসা জমিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে চলছে মিয়ানমার। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ওসব জমিতে মিয়ানমার সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর ঘাঁটি নির্মাণের প্রমাণ পেয়েছে। এ্যামনেস্টি বলছে, রাখাইনে গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেয়ার পর সেখানে চলছে সেনা ঘাটি, হেলিপ্যাড ও সড়ক নির্মাণের কাজ। এসব অবকাঠামামো নির্মাণের জন্য যাও কিছু রোহিঙ্গা সেখানে ছিল তাদেরকেও জোরপূর্বক তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাদের এমন তৎপরতায় অনিশ্চয়তায় দুলছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।
×