ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

সুধারামের আমিরসহ ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে রায় আজ

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১৩ মার্চ ২০১৮

সুধারামের আমিরসহ ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে রায় আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালীর সুধারামের মোঃ আমির আহম্মেদসহ চার রাজাকারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে আজ মঙ্গলবার। হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে। প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিল। সোমবার ট্রাইব্যুনাল জানায়, রায় দেয়া হবে মঙ্গলবার। ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর এটি হবে ৩১তম রায়। এ মামলার আসামিরা হলেনÑ আমির আলী, জয়নাল আবদীন, আব্দুল কুদ্দুস ও আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুর। তাদের মধ্যে মনসুর পলাতক। মামলার আরেক আসামি ইউসুফ আলী গ্রেফতার হওয়ার পর অসুস্থ অবস্থায় মারা যাওয়ায় তার নাম মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তরিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, গাজী এমএইচ তামিম ও মাসুদ রানা। প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম জনকণ্ঠকে বলেন, চার আসামির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগের উপর প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। প্রসিকিউশন মনে করে, উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে সবকটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আরজি জানিয়েছি ট্রাইব্যুনালের কাছে। এ মামলায় প্রাথমিকভাবে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলেও মামলার অভিযোগ গঠনের আগে আসামি মোঃ ইউসুফ আলী গ্রেফতারের পর অসুস্থ হয়ে মারা যান। পরে ২০১৬ সালের ২০ জুন চার আসামিকে হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের তিন ঘটনায় অভিযুক্ত করে বিচার শুরু করে আদালত। প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামিরা নোয়াখালীর সুধারামে ১১১ জনকে হত্যা করে। মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন প্রসিকিউশনের তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন। তিনিসহ মোট ১৫ প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষ ট্রাইব্যুনালে কোন সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। তিন অভিযোগ ॥ (১) একাত্তরের ১৫ জুন বেলা দুটা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানাধীন ও সোনাপুর গ্রামে আসামি আমির আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমির আলী, আসামি আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুর (পলাতক) ইউসুফ (বর্তমানে মৃত), আসামি জয়নাল আবেদীন এবং আসামি আব্দুল কুদ্দুসসহ ২০/২৫ রাজাকার ও ৭০/৭৫ পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে আক্রমণ করে গ্রামের ৪১ জনসহ শতাধিক নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা, অমানুসিক নির্যাতন, বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। (২) ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল অনুমান সাড়ে পাঁচটা হতে সাত পর্যন্ত নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানাধীন করিমপুর ও দেবীপুর গ্রামে আসামিগণ রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আহম্মেদকে হত্যা এবং মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ওরফে কালাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া ও পরে তার লাশ না পাওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ। (৩) ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা হতে ১১টা পর্যন্ত সুধারাম থানাধীন রামহরিতালুক, দেবীপুর ও উত্তর চাকলা গ্রামে আসামিরা পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে আনুমানিক ৩০০ নিরীহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে আটক করে। রামহরিতালুক স্কুল বোর্ড অফিসের সামনে নিয়ে নির্যাতন করে ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর অনেক বাড়ি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় ও লুটপাট চালায়।
×