ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের আগে সতর্ক করলেন হিলারি ক্লিনটন

কূটনৈতিক ঝুঁকির আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৩ মার্চ ২০১৮

কূটনৈতিক ঝুঁকির আশঙ্কা

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন পিয়ংইয়ং-এর সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে যে বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে তা তারা এখন উপলব্ধি করতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মতো দক্ষ কূটনীতিক এখন ওয়াশিংটনে নেই। এএফপি ও বিবিসি। নেদারল্যান্ডসের এনজেমিন ড্যাগব্লেড পত্রিকার সঙ্গে দেয়া সাক্ষাতকারে হিলারি বলেন, কিম জং উনের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের আরও অভিজ্ঞ কূটনীতিক থাকা আবশ্যক। গত শনিবার প্রকাশিত এই সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আলোচনায় অংশগ্রহণকারী কূটনীতিকদের মধ্যে এমন সব লোকের উপস্থিতি থাকতে হবে যারা উত্তর কোরিয়া সংক্রান্ত নথিপত্র, উত্তর কোরীয় ভাষা ও জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ব্যাপক ধারণার অধিকারী। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উত্তর কোরিয়া সংক্রান্ত ডেস্কো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি পদত্যাগ করেছেন। কাজেই সেখানে যে শূন্যতা বিরাজ করছে তার সঙ্গে পররাষ্ট্র দফতরের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে ট্রাম্পের সমন্বয়হীনতা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির এক ভয়াবহ দৈন্যদশা উন্মোচিত করেছে। উল্লেখ্য, ৮ মার্চ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরীয় নেতার সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের যে নাটকীয় ঘোষণা দেন তা এত আকস্মিক ছিল যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা হোয়াইট হাউসের শীর্ষ ব্যক্তিরা কেউ আগে থেকে তার বিন্দু বিসর্গ জানতেন না। ট্রাম্প প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা এতদূর গড়িয়েছে যে, খোদ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন তখন আফ্রিকা সফরে ছিলেন। তার অগোচরে এই ঘোষণা গণমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হলে তিনি সাংবাদিকদের সামনে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। এ প্রসঙ্গে হিলারি বলেন, অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের অভাবে বর্তমান মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ ভেসে যেতে বসেছে আপনি দক্ষ কূটনীতিবিদ ছাড়া তো কূটনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা সম্ভব নয়। হিলারির কথার প্রতিধ্বনি করে জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ঝানু কূটনীতিবিদ বিল রিচার্ডসন বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা কোন টিভি চ্যানেলের রিয়েলিটি শো নয়। আমার আশঙ্কা যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অপ্রস্তুত অবস্থা ও কূটনীতিক বিশৃঙ্খলার দরুন শেষ পর্যন্ত না কোন বিপর্যয় ঘটে যায়। এখানে শিক্ষানবিসি বা আনাড়িপনার কোন স্থান নেই। এখানে এমন একজন নেতার সঙ্গে আলোচনার কথা হচ্ছে যার হাতে কমপক্ষে ২০টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে সে কখন কী করে বসে তার ঠিক নেই- যাকে সত্যিকার অর্থেই আন প্রেভিক্ট্যাবল বলা যায়। এদিকে হিলারি ও সাবেক মার্কিন কূটনীতিকের অভিমতের বিরুদ্ধে সিআইএ প্রধান মাইক পম্পিও এই মর্মে তার বক্তব্য দিয়েছেন যে, উত্তর কোরীয় নেতার সঙ্গে আলোচনার ঝুঁকি সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ভালভাবেই অবগত আছেন। ফক্স নিউজকে প্রদত্ত এই সাক্ষাতকারে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান আরও বলেন, আমাদের প্রেসিডেন্ট সেখানে কোন নাটক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছেন না বরং তিনি যাচ্ছেন এক বড় সমস্যার সমাধান করতে যা গোটা বিশ্বকে বিপদমুক্ত করবে। মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের মতোই অর্থমন্ত্রী স্টিভ মনুচিন বলেন, এই দুই নেতার আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা যে, এই আলোচনার আগে দেশটি কোন ধরনের পরমাণু বা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাবে না। অন্যদিকে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের কোন কোন নেতা এই পরিকল্পিত আলোচনা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রিপাবলিকান সিনেটর কোরি গার্ডনার, সিবিএস নিউজ চ্যানেলকে বলেন, তিনি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করণের লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট ও যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপের সূচনা দেখতে চান। অপর রিপাবলিকান নেতা জেফ ফ্লেক বলেন, আসলেই পরমাণুু অস্ত্রমুক্ত করণের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হবে কিনা তা নিয়ে তার সংশয় রয়েছে। ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন পররাষ্ট্র দফতর পিয়ংইয়ং প্রশাসন সম্পর্কে অভিজ্ঞ কর্মকর্তার স্বল্পতা সম্পর্কে তার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমি চাই আমাদের প্রেসিডেন্ট এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সফল হোনÑ কারণ তিনি সফল হলে, যুক্তরাষ্ট্র সফল হবে এবং বিশ্ব হবে অধিকতর নিরাপদ।
×