ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিজ নিজ উদ্যোগে বাতি নেভাতে হবে

গণহত্যার রাতে এক মিনিটের ব্ল্যাক-আউট

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১২ মার্চ ২০১৮

গণহত্যার রাতে এক মিনিটের ব্ল্যাক-আউট

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একাত্তরের কালরাতের স্মরণে গণহত্যা দিবসের রাতে আগামী ২৫ মার্চ সারা দেশ এক মিনিট ‘ব্ল্যাক-আউট’ কর্মসূচী পালন করা হবে। গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে রবিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক এক সমন্বয় সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত জরুরী স্থাপনা ছাড়া সব জায়গায় এই কর্মসূচী পালন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কেউ কেন্দ্রীয়ভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে দেবে না। নিজ নিজ উদ্যোগে বাতি নিভিয়ে এক মিনিট এই প্রতীকী কর্মসূচীতে যোগ দিতে হবে। বাঙালীর মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে গেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। অবশ্য তার আগেই ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় বাঙালীর অবিসংবাদিত এই নেতা বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ কার্যত সেটাই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, যার পথ ধরে কালরাতের পর শুরু হয় বাঙালীর প্রতিরোধ পর্ব। নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। জাতীয় সংসদের স্বীকৃতির পর একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত বছরের ২০ মার্চ মন্ত্রিসভা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য ২৫ মার্চকে ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত দিবস হিসেবে গণহত্যা দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এরপর সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২৫ মার্চ এক মিনিট সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখাসহ দিবস পালনে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে। রবিবারের সমন্বয় সভায় গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা থেকে সাভার স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত রাস্তায় কোন তোরণ তৈরি করা যাবে না। তবে রাস্তার পাশে স্বাধীনতা দিবসের ফেস্টুন রাখা যাবে। কারাগার, হাসপাতাল ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হবে। কূটনীতিক পাড়া ও সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। সারা দেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হবে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে। আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, ঢাকার পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
×