ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কর্মবিরতি বিক্ষোভ পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জে আহত ২৫

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১২ মার্চ ২০১৮

গাজীপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কর্মবিরতি বিক্ষোভ পুলিশের গুলি ও  লাঠিচার্জে  আহত ২৫

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে কালিয়াকৈরের মৌচাকে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা রবিবার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা ও গাড়ি ভাংচুর এবং সড়ক অবরোধ করেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েকদফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ১১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় পুলিশের ইন্সপেক্টর ও এসআইসহ অন্ততঃ ২৫ জন আহত হয়েছে। গাজীপুর শিল্প-পুলিশের ইন্সপেক্টর সহিদ উল্লাহ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকের কৌচাকুড়ি তেলিরচালা এলাকার এটিএস এ্যাপারেলস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেশ কিছুদিন ধরে তাদের বেতন ভাতা প্রতিমাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতিমাসেই ওই সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করে বিলম্বে পরিশোধ করে। গত কয়েকদিন আগে কারখানা কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারি মাসের শ্রমিকদের বেতন ভাতাও চলতি মাসের (মার্চ) ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের বেতন ভাতাসহ পাওনা বকেয়াদি চলতি মাসের (মার্চ) ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধের দাবি জানিয়ে গত মঙ্গলবার হতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিক অসন্তেষের মুখে শনিবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে। বৈঠকে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা বেতন ভাতা আগামী বুধবার পরিশোধের ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে। পরদিন রবিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে জড়ো হতে থাকে। এ সময় তারা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ওই দাবি মেনে না নেয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কারখানার গেট তালাবদ্ধ করে কারখানার ভেতরে হামলা চালিয়ে দরজা জানালার কাঁচ ও মেশিনপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে। এ সময় তারা কারখানার সিকিউরিটি কক্ষে অবস্থানরত কয়েক কর্মচারীকে মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শ্রমিকরা বাধা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় ও ইটপাটকেল ছুঁড়ে। এতে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সহিদ উল্লাহ, এসআই সাইফুল ইসলাম, কনস্টেবল মাহমুদাসহ পুলিশের ৭ সদস্য আহত হয়। উত্তেজিত কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বেরিয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছুঁড়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় অন্ততঃ ১৮ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রেরণ করা হয়। এদের মধ্যে শটগানের গুলিতে আহত সুমি ও আক্তার বানু এবং লাঠির আঘাতে আহত মাহমুদাকে শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিল্প-পুলিশ গাজীপুর-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, উত্তেজিত শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের ৭ সদস্য আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৮ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ৩ রাউন্ড টিয়ার সেল ছুঁড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করেছে। এ ব্যাপারে কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, এ কারখানায় প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক রয়েছে। প্রতিমাসেই শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করা হয়। তবে গত মাসের পাওনাদি চলতি মাসে পরিশোধ করতে ৩/৪ দিন বিলম্ব হওয়ায় কিছু শ্রমিক সংগঠনের উস্কানিতে তাদের অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
×