ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লীতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বৈঠক

মমতাকে তিস্তা চুক্তিতে রাজি করাতে চেষ্টা করছি ॥ মোদি

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১২ মার্চ ২০১৮

মমতাকে তিস্তা চুক্তিতে রাজি করাতে চেষ্টা করছি ॥ মোদি

বিডিনিউজ ॥ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজি করাতে নয়াদিল্লী সচেষ্ট রয়েছে বলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ রবিবার নয়াদিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রবিবার নয়াদিল্লীতে ইন্টারন্যাশনাল সোলার এ্যালায়েন্সের (আইএসএ) সম্মেলনের ফাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে এক বৈঠকে একথা জানান ভারতের সরকারপ্রধান। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিভিন্ন সদস্যার সমাধান ঘটলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি কয়েক বছর ধরে আটকে আছে মমতার আপত্তিতে। বাংলাদেশকে পানি দিলে তার রাজ্য পর্যাপ্ত পানি পাবে না বলে তার দাবি। এদিকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য তিস্তারর পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বাংলাদেশে যে কোন বৈঠকেই ভারতকে তাগিদ দিয়ে আসছে। ইন্টারন্যাশনাল সোলার এ্যালায়েন্সের (আইএসএ) সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া রাষ্ট্রপ্রধান হামিদ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে বিষয়টি তোলেন। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, বৈঠকের সময় রাষ্ট্রপতি বালাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তিস্তার পানি বণ্টনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। জবাবে মোদি বলেন, তার সরকার এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাচ্ছে এবং সকলকে নিয়েই সমাধান করতে আগ্রহী। মোদির বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘উই আর ট্রাইং টু কিপ হার অন বোর্ড’। ছয় বছর আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় ঝুলে যাওয়ার পর তিস্তার জট আর খোলেনি। নয়াদিল্লীতে ক্ষমতার পালাবদলে ক্ষমতায় আসা বিজেপির সঙ্গে এক সময়ে পশ্চিমবঙ্গে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেসের জোট থাকলেও এখন তাদের মধ্যে রেষারেষি চলছে। তিস্তার বদলে পশ্চিমবঙ্গের ছোট ছোট চারটি নদীর পানি বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগির প্রস্তাব রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা দিয়েছিলেন, তবে তাতে আগ্রহী নয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তিস্তা চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছিলেন, সামনে নির্বাচন, আমাদের জনগণের কাছে জবাব দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাইছি। নয়াদিল্লীতে বৈঠকে মোদি দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় আবদুল হামিদকে অভিনন্দন জানান। তিনি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরও প্রশংসা করেন। আবদুল হামিদ দিল্লী পৌঁছার আগে তার অসম ও মেঘালয়ের সফরের কথা তুলে ধরলে মোদি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আপনার এ সফরে আমরা আনন্দিত ও সম্মানিত বোধ করেছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ভারতীয়দের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মানিত করাও তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন মোদি। আবদুল হামিদ বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশ এবং এই সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। তিনি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সম্মান, নিরাপদ ও নিরাপত্তার সঙ্গে প্রত্যাবাসনে ভারতের সহযোগিতা কামনা করেন। এ প্রসঙ্গে মোদি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে তার দেশের আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য বড় এ সমস্যা সমাধানে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সৌরশক্তির উন্নয়নে বিশ্ব নেতৃত্বের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান ॥ এদিকে বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ রবিবার নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সৌরশক্তির উন্নয়নে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই আধুনিক জ্বালানি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সর্বদা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। নয়াদিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক সোলার এলায়েন্সের (আইএসএ) প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে রবিবার সকালে ভাষণদানকালে তিনি বলেন, আমাদের সম্ভাবনাগুলো প্রায়ই উন্নয়নের লক্ষ্য দ্বারা চাপিয়ে রাখা হয়। তবুও আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পরিবেশ রক্ষার কথা ভুলে যাওয়া উচিত না। এ সময় বাংলাদেশের সর্বদা বিশ্ব উদ্যোগে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি সৌরশক্তির সকল ক্ষেত্রগুলো গতিশীল করতে গবেষণা, উন্নয়ন ও স্থানান্তরের নতুন দ্বার উন্মোচনের মাধ্যমে সক্ষমতা তৈরির জন্য আইএসএর পক্ষ থেকে সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও বাস্তবিকভাবে বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ এর প্রভাব মোকাবেলায় সর্বোচ্চ অবদান রাখতে চেষ্টা করছে। আবদুল হামিদ বলেন, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ক্ষেত্রে আমাদের অংশ শূন্য দশমিক ১ শতাংশ, কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ বাংলাদেশের ওপর হুমকি ব্যাপক। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশেষ করে সৌরশক্তিসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিশ্ব উদ্যোগ জোরদারের আহ্বান জানিয়েন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করছে। দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক সোলার এলায়েন্সের (আইএসএ) প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে ভাষণদানকালে আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের সম্ভাবনাগুলো প্রায়ই উন্নয়নের লক্ষ্য দ্বারা চাপা পড়ে যায়। তবুও আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পরিবেশ রক্ষার কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও বাস্তবিকভাবে বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ এর প্রভাব মোকাবেলায় সর্বোচ্চ অবদান রাখতে চেষ্টা করছে। আবদুল হামিদ বলেন, যদিও গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ক্ষেত্রে আমাদের অবদান মাত্র ০ দশমিক ১ শতাংশ, কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্ছতা বৃদ্ধি, খরা, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ বাংলাদেশের ওপর হুমকি ব্যাপক। বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কাক্সিক্ষত নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করার পদক্ষেপ নিয়েছি। এ সময় বাংলাদেশের সব সময় বিশ্ব উদ্যোগে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি সৌরশক্তির সকল ক্ষেত্রগুলো গতিশীল করতে গবেষণা, উন্নয়ন ও স্থানান্তরের নতুন দ্বার উন্মোচনের মাধ্যমে সক্ষমতা তৈরির জন্য আইএসএর পক্ষ থেকে সব সদস্য রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই আধুনিক জ্বালানি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সর্বদা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে সার্বিক উন্নয়নের জন্য সহজলোভ্য, নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং আধুনিক জ্বালানি সকলের জন্য নিশ্চিতে করতে হবে। রাষ্ট্রপতি আগামী দিনগুলোতে আশানুরূপ সুফল পেতে সুষ্ঠু সমন্বয়, প্রতিশ্রুতিশীল নীতি এবং অধিক মাত্রায় অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রায় পাঁচ লাখ বসতবাড়িতে সৌর বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপন করেছে এবং এতে দুই কোটি লোক সুফল লাভ করছে। সরকার জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করতে ৫শ’ মেগাওয়াটের একটি সৌরশক্তি ভিত্তিক বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে রান্না করার ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে কার্বন নির্গমন হ্রাসের পাশাপাশি জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে সৌর বিদ্যুত চালিত সেচ পাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের নবায়নযোগ্য বিদ্যুত নীতি নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে উন্নীত করতে হবে বলে রাষ্ট্রপতি জানান। নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত সোলার সামিটে ১শ’ ২১টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২৪টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী ও প্রতিনিধি যোগ দেয়। সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখো এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ফ্রান্সের প্যারিসে ২০১৫ সালের ৩০ নবেম্বর জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত ও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল সোলার এলায়েন্স (আইএসএ) জোট গঠন করে। ১শ’ ২১ সদস্যের এই জোটটি প্রথম চুক্তিভিত্তি আন্তর্জাতিক এবং আন্তঃসরকারী সংস্থা, যার সদর দফতর ভারতে এবং এর সচিবালয় হরিয়াণা রাজ্যের গুরগাঁও জেলায় অবস্থিত। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর চাপ কমাতে এবং সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৩০ নবেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলাঁদ ইন্টারন্যাশনাল সোলার এলায়েন্স (আইএসএ) গঠন করেন। আইএসএ সৌরশক্তি সমৃদ্ধ দেশগুলোর একটি জোট যা থেকে তারা তাদের বিশেষ জ্বালানি চাহিদা মেটায় এবং সর্বসম্মতিক্রমে ঘাটতিগুলো চিহ্নিতকরণে একটি জোট গঠনে সহায়তা করবে।
×