ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ॥ ’১৮ সালেই পুরো দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১২ মার্চ ২০১৮

পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল  ॥ ’১৮ সালেই  পুরো দৃশ্যমান  হবে স্বপ্নের

আনোয়ার রোজেন ॥ দরজায় কড়া নাড়ছে জাতীয় নির্বাচন। এক কথায় ২০১৮ নির্বাচনের বছর। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণেরও বছর। তিন বছর আগে বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে শুরু করা দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু পুরোপুরি বাস্তব রূপ পাবে এ বছর। স্বপ্ন থেকে বাস্তবে নেমে এসেছে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প। রাজধানীর যানজট নিরসনে নেয়া ২২ হাজার কোটি টাকার বড় এ প্রকল্পও দৃশ্যমান হবে এ বছরই। জাপানের অর্থায়নে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে পূর্ণ গতিতে। জোরেশোরে চলছে চীনের অর্থায়নে পটুয়াখালীর পায়রায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ। বাগেরহাটের রামপালে ভারতের অর্থায়নে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য এরই মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে। এগুলোসহ সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ১০ প্রকল্পের বাস্তবায়নে গতি ফিরে এসেছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন যাতে নির্বিঘœ হয় সেজন্য যুক্ত করা হয়েছে ফার্স্ট ট্রাকে। প্রতি মাসে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি খতিয়ে দেখছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে তৈরি অগ্রগতি প্রতিবেদনে বেশিরভাগ প্রকল্পের সন্তোষজনক অগ্রগতির চিত্র উঠে এসেছে। এর মধ্যে সার্বিকভাবে বাস্তবায়নের দিক থেকে এগিয়ে আছে এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সঙ্গে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততা আছে। দুই বছর আগে গুলশানে হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় সব মেগা প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট বিদেশীরা চলে গিয়েছিলেন। তাই ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে গতি কিছুটা কম ছিল। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও নিরাপত্তা বিষয়ে আশ্বস্ত হয়ে বিদেশীরা আবার ফিরে এসেছেন। বিদেশী সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলোতে অর্থছাড়ও বাড়ছে। পরিকল্পনামন্ত্রীর আশা, প্রকল্প বাস্তবায়নের এ গতি অব্যাহত থাকবে এবং জনগণের কাছে বর্তমান সরকারের দেয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নির্ধারিত সময়েই বাস্তবায়িত হবে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুত কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র, রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ, এলএনজি টার্নিমাল নির্মাণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প। পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ ॥ ফার্স্ট ট্র্যাক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি পর্যন্ত মূল পদ্মা সেতুর অগ্রগতি হয়েছে ৫৭ শতাংশ। এছাড়া পদ্মা নদী শাসন কাজ হয়েছে ৩৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। জাজিরা প্রান্তে এপ্রোচ রোডের কাজ ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মাওয়া প্রান্তে এপ্রোচ সড়কের শতভাগ, সার্ভিস এরিয়া-২ এর কাজ শতভাগ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫১ শতাংশ। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতুর তৃতীয় স্প্যান বসানোর হয়েছে এ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর ৪৫০ মিটার দৃশ্যমান হলো। জাজিরা প্রান্তের ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটিতে এটি বসানো হলো। এ রকম ৪১ স্প্যান জোড়া দিয়েই পদ্মা সেতু তৈরি হবে। গত বছর অক্টোবরে প্রথম ও গত ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ৩০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে জাজিরা প্রান্তে। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে অগ্রগতি ১০ শতাংশ ॥ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। চীন সরকারের সঙ্গে ঋণ চুক্তির প্রক্রিয়ায়ও অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙ্গা, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরকালে এ প্রকল্পে অর্থায়ন চুক্তি হয়েছিল। চীন ঋণ দেবে ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারী তহবিল থেকে সংস্থান করা হবে। মেট্রোরেলে জানুয়ারি পর্যন্ত খরচ ২ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা ॥ মেট্রোরেল প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৯৪৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-১ এর অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মিরপুর অংশে আগারগাঁও থেকে তালতলা, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় চলছে স্বপ্নের প্রথম মেট্রোরেলের কাজ। প্রকল্প কর্মকর্তারা আশা করছেন, উত্তরা-আগারগাঁও রেলপথ ২০১৯ সালের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে প্রকল্পে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জাইকা। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুরু থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৯১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রকল্প পর্যায়ে কাজ চলতি অর্থবছরে সমাপ্ত হবে। অন্যান্য মেগা প্রকল্পের মধ্যে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের সার্বিক অগ্রগতি জানুয়ারি পর্যন্ত হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া মাতারবাড়ী বিদ্যুত কেন্দ্রে সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের আনুষঙ্গিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটির কাজ এখনও শুরু হয়নি। এছাড়া রামু-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
×