ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গানে গানে প্রাণ রাঙিয়ে শেষ হলো রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১২ মার্চ ২০১৮

গানে গানে প্রাণ রাঙিয়ে শেষ হলো রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন

তাহমিন হক ববী/মনোয়ার হোসেন ॥ সুর প্রীতির গানে গানে প্রাণ রাঙ্গিয়ে তিন দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের সাঁইত্রিশতম বার্ষিক অধিবেশন শেষ হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় সমাপনী দিনে নীলফামারী হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত মঞ্চে রবীন্দ্রপদক দিয়ে গুণী-সম্মাননা জানানো হয় রাজশাহীর প্রবীণ উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী মঞ্জুশ্রী রায় ও রংপুরের লোকসঙ্গীত শিল্পী উপেন্দ্রনাথ রায়কে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সমাপনী অনুষ্ঠানে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি ড. সনজিদা খাতুনের সভাপতিত্বে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ নীলফামারীর সভাপতি আহসান রহীম মঞ্জিল বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনের প্রস্তাব পাঠ করেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লাইসা আহমেদ লিসা। সম্মেলনের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশ আগের চেয়ে সংস্কৃতি চর্চায় এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। এ উন্নয়নে এবার যোগ হয়েছে পদ্মাসেতু। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মইনুদ্দিন নাজির। শোকপ্রস্তাবে দেশের ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতিকর্মী গত এক বছরে প্রয়াত হয়েছে এমন ৯৪ জনের নাম। শোক প্রস্তাব পাঠের পর এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এ সময় পরিষদের পক্ষ থেকে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী মঞ্জুশ্রী রায় ও লোকসঙ্গীত শিল্পী উপেন্দ্রনাথ রায়কে উত্তরীয়, মানপত্র এবং গুণী সম্মাননা ও রবীন্দ্র পদক প্রদান করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ ও সভাপতি ড. সনজিদা খাতুন। এ সময় পদকপ্রাপ্ত দুই জন পৃথকভাবে তাদের অভিব্যক্ত তুলে ধরেন। প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ তার বক্তব্যে বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের মাধ্যমে আমাদের ‘সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন। আজ এই আলোতেই আমরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী উচ্চারণ করতে পারছি। নীলফামারীতে জাতীয় এই সম্মেলন আমাদের আগামীদিনে দিক নিদর্শনের পথ দেখাবে। সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. সনজিদা খাতুন বলেন, রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃতি ধারা এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের সবাইকে মানুষ হওয়ার পথ দেখাবে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় প্রদীপ প্রজ্বলন, সম্মেলন সঙ্গীত, রবিরশ্মি, আবৃত্তি, নৃত্য এবং সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সঙ্গীতানুষ্ঠানে ঢাকা এবং নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। এবারের জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনে রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও নজরুল গীতি, ভাওয়াইয়া, গীত, গীতি-আলেখ্য, কণ্ঠশীলন-এর কাব্য-আলেখ্য, নৃত্যনন্দ-এর রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য, পঞ্চকবির গান ও লোকসঙ্গীত স্থান পেয়েছিল। আর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে এর সমাপনী ঘটে। এর আগে সমাপনী দিনের সকালে নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিনিধি সম্মেলন এবং প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী এই অধিবেশন ঘিরে নীলফামারীতে রবীন্দ্র ভক্তদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল। সারা দেশের সহ¯্রাধিক প্রতিনিধি ছাড়াও এই তিনদিনের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রায় ৫০ হাজার দর্শক। নীলফামারী পরিণত হয়েছিল সঙ্গীতভক্তদের মিলন মেলায়। সংস্কৃতির পথ শুধু মানুষকে টেনে আনা নয় নিজেদেরও উত্তরণ ঘটায়। সেই টানেই সারাদেশের শত সহস্র শিল্পী এসে মিলিত হয়েছেন আসরে। শুধু বড়রাই নয় গানের টানে, গাওয়ার টানে, প্রতিযোগিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অংশ নেয় প্রায় পাঁচ শ’ শিশু-কিশোর। এছাড়া নীলফামারীর ৫০ শিশু শিল্পীরা বোধন সঙ্গীতটি পরিবেশন করেছিল। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৯ মার্চ) তিনদিনের এই বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয়েছিল। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের সাঁইত্রিশতম বার্ষিক অধিবেশন/১৪২৪ এর আয়োজক জেলা হিসেবে নীলফামারীতে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে নীলফামারী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ দেবী প্রসাদ রায় ও ডাঃ মুজিবুল হাসান চৌধুরী শাহীন। এছাড়া সার্বিকভাবে কাজ করে ১৮ উপ-কমিটির ৫ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। আলিয়ঁসে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘স্মরণ ৭১’ ॥ শিল্পীর শিল্প সৃজনে উঠে এসেছে একাত্তরের খরস্রোতা সময়। চিত্রিত হয়েছে মুক্তিযু্েদ্ধর গৌরবগাথা। সেখানে আছে মাতৃভূমির মর্যাদা রক্ষায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিসেনার জীবন-মরণ লড়াই। আবার সেই গৌরবময় অধ্যায়ের উল্টো পিঠে ভয়াবহ বেদনার আখ্যানও উদ্ভাসিত হয়েছে ক্যানভাসে। সেই চিত্রপটে দেখা মেলে ঘাতকের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহানকে। এভাবেই শিল্পের আশ্রয়ে একাত্তর থেকে পঁচাত্তরের সময়কালকে ধারণ করেছেন চিত্রশিল্পী শাহ্্ মাইনুল ইসলাম শিল্পু। সেসব ছবি নিয়ে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকার লা গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘স্মরণ ৭১’। কালি ও কলমে আঁকা হয়েছে সব। সাদা-কালো ক্যানভাসে শিল্পীর মনোভাবনা যেন পেয়েছে আরও গভীরতা। অনির্বাণ তর্জনি নামের ছবিতে জ্বলে ওঠা সূর্যের নিচ থেকে আবির্ভূত হয়েছে একটি তর্জনি। স্বাধীনতার পথরেখার ইঙ্গিতময় সেই তর্জনি বলে যায় জাতির জনকের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের কথা। এভাবেই চিত্রপটে বিবৃত হয়েছে একাত্তরের রণাঙ্গণের সূচনাকাল থেকে পঁচাত্তরের সেই বিয়োগান্তক ঘটনা। নিজের চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে শাহ্্ মাইনুল ইসলাম শিল্পু বলেন, একজন সচেতন ও মানবিক মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই রয়েছে সামাজিক দায়বদ্ধতা। আর একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে আমার কাছে এই দায়ভারটা আমার বেশি। সেই দায়বদ্ধতাই প্রকাশিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়কে উপজীব্য করে আঁকা চিত্রকর্মে। ৩৬ চিত্রকর্মে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। দোসরা মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত। শিল্পাঙ্গনে কাজলের প্রদর্শনী ‘অয়েল হেড’ ॥ ট্রাফিক পেইন্টিংয়ের জন্য তার নাম বিশ্বের নানা প্রান্তে। তার কাজে সমাজ ভাবনা যেভাবে স্থান পায়, একইভাবে উঠে আসে নানা অসঙ্গতির কথাও। এবারে শিল্পী রুহুল আমিন কাজল (রা. কাজল) নিরীক্ষাধর্মী কাজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন শিল্পরসিকদের সামনে। ধানমন্ডির গ্যালারি শিল্পাঙ্গনে চলছে ‘অয়েল হেড’ শীর্ষক এই শিল্পীর প্রদর্শনী। গরম ফ্রাইপ্যানে বাটার ওয়েল ছাড়ার পর তা নানা ফর্মের সৃষ্টি করে। গরম তেলের বুদবুদ নানান ফর্ম সৃষ্টি করে। এসব ফর্মের ছবি তুলে নিয়েছিলেন শিল্পী। পরে সেই সব ফর্মকে তুলে এনেছেন ক্যানভাসে। শিল্পাঙ্গনের দেয়ালে স্থান পেয়েছে নয়টি চিত্রকর্ম। সেসব চিত্রকর্ম দেখলে বোঝা যায় ফর্মগুলো কোথাও মানুষের মুখে রূপ নিয়েছে। কোথাও তা মানুষের নানা আকৃতি ও মুখের অভিব্যক্তিতে রূপ নেয়। ৯ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে ১৮ মার্চ পর্যন্ত।
×