ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের কালক্ষেপণ

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১২ মার্চ ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের কালক্ষেপণ

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কালক্ষেপণের পথ অনুসরণ করছে মিয়ানমার সরকার। পাশাপাশি আশ্রিত রোহিঙ্গারাও ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় থেকে নিজ দেশে ফিরে যেতে দিন দিন অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। বিষয়টি দেশের জন্য উদ্বেগজনক অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ইতোপূর্বে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করলেও তারা এখন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের প্রমাণ চাইছে। এর পাশাপাশি নানা টালবাহানাও শুরু করেছে। মূলত এসব কারণেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে কোন গতি নেই। রবিবার সকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অননুমোদিতভাবে কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অভিযোগে ৩৯ বিদেশীকে আটক করার পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে, রবিবার সকালে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীদের উদ্যোগে যৌথ সার্ভে করা হয়েছে। নোম্যানসল্যান্ডের সীমান্ত পিলার পয়েন্টে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বডার গার্ড পুলিশ সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত যৌথভাবে ঘুমধুম বরাবর মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়ায় নোম্যানসল্যান্ডে স্থাপিত ৩১ নম্বর সীমান্ত পিলার থেকে ৩৪নং পিলার পর্যন্ত সার্ভে কাজ সম্পন্ন করে। দু’দেশের সীমান্তরক্ষী দলের কোম্পানির কমান্ডার পর্যায়ে এ যৌথ পিলার পরিদর্শনে মিয়ানমারের পক্ষে ১৫ বিজিপি ও বাংলাদেশের পক্ষে ১৪ বিজিবি সদস্য অংশ নেয়। তবে তুমব্রুর জিরো লাইনে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাদের মধ্যে কোন ধরনের আলাপ আলোচনা হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এরমধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে প্রায় ১১ লাখ। রোহিঙ্গাদের এত বিশাল জনগোষ্ঠীর ভারে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ অঞ্চল জর্জরিত হয়ে আছে বহু আগে থেকেই। সরকার ও বিভিন্ন দাতাসংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। রাখাইন পরিস্থিতি এখনও সার্বিকভাবে অনুকূলে না আসায় আশ্রিত রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে না গিয়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার পথ খুঁজছে। এমনিতেই বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছে অবৈধ পথে। এছাড়া যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গারা নানাপথে ক্যাম্প এলাকার বাইরে যাওয়ার অব্যাহত রেখেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩৯ বিদেশী আটক ও পরে ছাড় ॥ স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মনীতির প্রতি তোয়াক্কা না করে সেচ্ছায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে ফের ৩৯ বিদেশীকে আটক করার পর মুসলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে উখিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসা নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করায় এসব বিদেশী নাগরিককে আটক করা হয়। ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে এলেও তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থায় করার বিষয়টি বৈধ নয়। রবিবার সকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অদূরে উখিয়া মালভিটা এলাকায় স্থাপিত তল্লাশি চৌকিতে এ অভিযান চালানো হয়। উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে ওয়ার্ক পারমিট না নিয়ে ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসায় তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছিল। তাই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নেয়া হয়। উল্লেখ্য, এক সপ্তাহ আগেও ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের সদস্যরা ১১ বিদেশীকে আটক করে উখিয়া থানায় সোপর্দ করেছিল। পরে তারা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। উখিয়া থানার ওসি জনকণ্ঠকে বলেন, মালেয়শিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, হল্যান্ড, ইতালিসহ অন্য দেশের নাগরিকদের আটকের পর বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের দূতাবাসগুলোকে জানানো হয়েছে। তাদের কাছে যে ওয়ার্ক পারমিট নেই সে বিষয়টিও অবহিত করা হয়েছে। পরে দূতাবাসের কর্মকর্তারা শীঘ্রই ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলে মুচলেকা নিয়ে বিকেলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
×