ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মধ্যস্বত্বভোগীরা মুনাফা লুটছে ॥ ড. রাজ্জাক

চালের দাম ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা হতে পারে

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১২ মার্চ ২০১৮

চালের দাম ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা হতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে এই মুহূর্তে চালের দাম সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। বর্তমান পরিস্থিতিতে চালের দাম এর বেশি হওয়ার কোন সুযোগ নাই। বর্তমানে সাধারণ কৃষক পর্যায়ে প্রতিকেজি চালের উৎপাদন মূল্য ২২ থেকে ২৩ টাকা। এর সঙ্গে আরও দুই দফায় ৫ টাকা করে ১০ টাকা মুনাফা যোগ করে সাধারণ ভোক্তার কাছে পৌঁছা পর্যন্ত চালের দাম ৩০ থেকে ৩২ টাকার মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। এজন্য দক্ষ মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। রবিবার বিকেলে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের নিয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনার জন্য এ সভার আয়োজন করা হয়। আবদুর রাজ্জাক এই কমিটির সভাপতি। চালের দাম ৪০ টাকার নিচে নামবে না- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে আবদুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। তবে অর্থমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের এই বক্তব্যে তাৎক্ষণিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি। সভায় কমিটির সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এমপি, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, মেজর জেনারেল (অবঃ) রফিকুল ইসলাম এমপি, উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযমসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, চালের সর্বনিম্ন দাম নিয়ে অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে। মাঠ পর্যায়ে আমি কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে জেনেছি ধানের বীজতলা থেকে শুরু করে ধান মাড়াই করে চাল উৎপাদন পর্যন্ত কৃষকের যে খরচ হয়, সেই হিসেবে প্রতিকেজি চালের দাম হয় ২২ থেকে ২৩ টাকা। এই চালই ঢাকায় এলে হয়ে যাচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অর্থাৎ মধ্যস্বত্বভোগীরা পরিস্থিতির ফায়দা লুটছে, ইচ্ছেমতো মুনাফা করছে। যথাযথ মনিটরিং থাকলে মধ্যস্বত্বভোগীদের পর্যাপ্ত মুনাফার পরও চালের দাম ৪০ টাকার নিচে অবশ্যই রাখা সম্ভব। নির্বাচনী বছরের বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না ॥ সভার শুরুতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সম্ভাব্য বাজেটের আকার সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এ বছর ৪ লাখ ৬০ থেকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না। ২০১৮ নির্বাচনের বছর। তাই নতুন করে কোন চ্যালেঞ্জ নেয়া হবে না। আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারের বাজেট দেয়া হবে। একই কারণে বরাদ্দের ক্ষেত্রেও থাকবে না কোন চমক। স্বাভাবিকভাবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ যাবে মানব সম্পদ উন্নয়নে অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পানি সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে। আর খাত হিসেবে বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতা মেনে পরিবহন ও জ্বালানি খাত গুরুত্ব পাবে। মন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এবার আমাদের এডিপি বাস্তবায়নের হার অনেক ভাল। প্রথম ছয় মাসে ৩৫ শতাংশের বেশি বাস্তবায়ন হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ছে। এ ধারাবাহিকতা সামনের বছরেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।’ আলোচনায় একাধিক বক্তা বলেন, শিক্ষাখাত প্রতিবছরই বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে। এ বরাদ্দের সদ্ব্যবহার হচ্ছে কি না তা তদারক করা দরকার। এ বিষয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশে উচ্চশিক্ষার পরিস্থিতি খুবই করুণ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্স শিক্ষার গুণগত মান দেশের প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য থাকাকালে একটি কলেজের অর্থনীতির শিক্ষককে জিডিপি, জিএনপি, মুদ্রাস্ফীতি, সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। ওই শিক্ষক কোনো প্রশ্নেরই ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারেননি। অর্থনীতির শিক্ষকের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের অবস্থা কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। আলোচনায় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অবঃ) রফিকুল ইসলাম (বীরউত্তম) বলেন, এক হাজার টাকার নোট বাতিল হওয়ার খবর বেরুচ্ছে। সত্যিই যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তবে তা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। তাৎক্ষণিক জবাবে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দিস নিউজ ইজ এ্যাবসুলেটলি বোগাস। এইটা সত্যিকার অর্থেই রাবিশ। এ ধরনের কোন কিছুই ঘটে নাই।
×