ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মশালায় কৃষিমন্ত্রী

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে কৃষি নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১২ মার্চ ২০১৮

খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে কৃষি নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৃষিকে বাণিজ্যিক ও আধুনিক করার লক্ষ্যে কৃষি নীতি ২০১৮ প্রণয়ন করা হচ্ছে। যার মূল লক্ষ্য হলো নিরাপদ ও কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন। এছাড়াও লাভজনক, পরিবেশবান্ধব টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করাও এর লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। কৃষি ও কৃষকরাই অর্থনীতির মেরুদ- উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পার হলেও কৃষিতে কোন নীতিমালা হয়নি। তাই বার বার কৃষি নানাভাবে ব্যাহত হয়েছে। দেরিতে হলেও ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম জাতীয় কৃষিনীতি করে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে জাতীয় কৃষিনীতি করা হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে খসড়া হয়েছে। রবিবার রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে ‘জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮ (খসড়া)’ নিয়ে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন। মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিবিএসের হিসেবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তার আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। দারিদ্র্য হার কমেছে। গত এক দশকে খাদ্যশস্য উৎপাদন তিন গুণ এবং সবজি উৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ। তবে মাঝে মধ্যেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে যা সব দেশেই হয় বলেও মন্ত্রী উল্লেখ করেন। খাদ্য উৎপাদন ক্রমেই বেড়েছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এই যে উৎপাদন বৃদ্ধি তা কোন অলৌকিক বিষয় নয়। কৃষকের শ্রম আর সরকারের সঠিক নীতির কারণেই হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, কমপ্লিট সার ব্যবস্থাপনা ‘এনপিকেএস’ এর দিকে আমরা যাচ্ছি। আমাদের সার ফ্যাক্টরিগুলোকে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আনা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবছি। কেননা বার বার একেকটি সার না দিয়ে একত্রে কি করে দেয়া যায় সে চিন্তা করতে হবে। আর সব সময় লোকও পাওয়া যায় না তাই কমপ্লিট পদ্ধতি চাচ্ছি। নীতি নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই এই নীতি ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। সবাই সেখানে পরামর্শ দিতে পারবে। পরবর্তীতে সংসদে উঠলে সংসদ সদস্যরা মতামত দেবে। তারপরই চূড়ান্ত হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের নীতি প্রণয়ন করব আমাদের দেশের প্রয়োজনে ও আমাদের জলবায়ুর প্রেক্ষিতে। এই নীতি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ সভাপতিতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জাতীয় কৃষিনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের কৃষি খাতে জিডিপি কমছে এটা স্বাভাবিক কেননা শিল্পায়ন বাড়ছে। তবে সার্বিকভাবে যদি দেখা হয় তবে এখনও কৃষির অবদান অনেক। কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি রাখতে হবে উল্লেখ করে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি রাখতে হবে এবং এটা হবে ইনভেস্টমেন্ট। কৃষির সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সাব সেক্টরগুলোর মধ্যে সমন্বয় আরও গুরুত্বসহকারে নীতিমালায় আনতে হবে বলেও জানান তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, বর্তমানে ঢালাও ভাবে কৃষি জমি অকৃষি জমিতে পরিণত করা হচ্ছে। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে এটি কমানো সম্ভব নয়। তবে এ নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একত্রে কাজ করলে কিছুটা হ্রাস করা সম্ভব বলেও জানান তিনি। এছাড়াও কৃষিতে গবেষণার ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাবও করেন তিনি। এর আগে জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ (খসড়া) মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, ২০১৩ কৃষিনীতিতে ১৮ অনুচ্ছেদ ছিল। আর ২০১৮ খসড়াতে ২২টি করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য ও কৃষি পণ্য উৎপাদন, কৃষিতে যুব শক্তি, কৃষিতে বিনিয়োগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিবিধ উপকরণ যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান। উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ দেন উপস্থিত সংশ্লিষ্টরা। পাহাড় এলাকায় কৃষি নিয়ে জুম চাষের উপর কথা বলেন। এছাড়াও পাহাড়ে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে মত দেন পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। এছাড়াও খসড়া নিয়ে আগাম তথ্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়াও আগত অতিথিরা তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও বক্তব্য তুলে ধরেন। জাতীয় কৃষি নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, কৃষি খাতে শ্রমকে মূল্যায়নের জন্য শ্রমিক কল্যাণের কথা বলা হয়েছে। কৃষি শ্রমকে মর্যাদা দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। নতুন সংযোজন তথ্য প্রযুক্তির খসড়ায় বলা হয়েছে, পশ্চাৎপদ ও দূরবর্তী এলাকায় প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই সম্প্রসারণ সেবা পৌঁছে দেয়া যাবে। কৃষি তথ্য সেবা ও কমিউনিটি রেডিও কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সুবিধা স্থাপন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে। প্রতি অঞ্চলে কৃষি কল সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে। ইন্টারনেট, অনলাইন, অফলাইন, মোবাইল এপস কার্যক্রম জোরদার করা হবে বলেও খসড়ায় বলা হয়েছে। কৃষিতে যুব শক্তি হিসেবে খসড়ায় যুবকদের উৎসাহ করার কথা বলা হয়েছে। বিনিয়োগে উৎসাহ, ঋণ সহায়তা ও প্রণোদনা উদ্যোক্তা মাধ্যমে কৃষি কাজে অনুপ্রাণিত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবকদের কৃষি ও কৃষি শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার কথা কৃষিনীতি ২০১৮ খসড়ায় বলা হয়েছে। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মোঃ কবির ইকরামুল হক। এ সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারী দফতর, সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারী সংস্থা এবং কৃষক প্রতিনিধিসহ প্রায় চার শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
×