ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রাহক হয়রানির শীর্ষে ফারমার্স ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১২ মার্চ ২০১৮

গ্রাহক হয়রানির শীর্ষে ফারমার্স ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং সেবা নিয়ে গ্রাহক অভিযোগ বাড়ছেই। গত বছরের ডিসেম্বর মাসেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগে (সিএসডি) প্রায় ৫০০ অভিযোগ এসেছে। এ মাসে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সবার শীর্ষে ছিল ফারমার্স ব্যাংক। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল বেসরকারী ব্র্যাক ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত (সিএসডি চালুর পর থেকে) বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধ প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি এ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি) এর বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বিভাগটি টেলিফোনে ১৩৬২টি এবং লিখিতভাবে ২১৬৪টি অর্থাৎ মোট ৩৫২১টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে এবং প্রায় সবগুলো অভিযোগই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিভাগে প্রাপ্ত অধিকাংশ অভিযোগই ছিল সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত যা মোট অভিযোগের ৪০.৫৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত অভিযোগ ১৫.৮২ শতাংশ। তারপর রয়েছে ট্রেড বিল সংক্রান্ত অভিযোগ ১৫.০২ শতাংশ, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত ৯.২৩ শতাংশ, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ২.৪৭ শতাংশ, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ২.৩৯ শতাংশ, রেমিটেন্স সংক্রান্ত ১.৮৫ শতাংশ এবং বিবিধ অভিযোগ ১২.৭০ শতাংশ। এর আগে গত শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে গবর্নর ফজলে কবির ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি এ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি) এর বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৬-২০১৭ মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আহমেদ জামাল, নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম কামাল ভূঁইয়া, নির্বাহী পরিচালক (বিশেষায়িত) একেএম ফজলুল হক মিঞা, এফআইসিএসডি’র মহাব্যবস্থাপক মোঃ জামাল মোল্লা, আইটিওসিডি’র সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ ইসহাক মিয়া এবং এফআইসিএসডি ও আইটিওসিডি’র কর্মকর্তাগণ। জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালের ১ এপ্রিল গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র (সিআইপিসি) গঠন করে। পরিধি বাড়তে থাকায় পরে একে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি এ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস (এফআইসিএসডি) নামে পূর্ণাঙ্গ বিভাগে রূপ দেয়া হয়। জানা গেছে, সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া গ্রাহকরা ব্যাংকের সেবা পেতে কোন ধরনের হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হলেই এ বিভাগে অভিযোগ দায়ের করছে। ফলে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আর এসব অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসছে ঋণ ও অগ্রিম, স্বীকৃত বিলের মূল্য পরিশোধ না হওয়া, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, চেক জালিয়াতি, রেমিটেন্স, মোবাইল ব্যাংকিং, অতিরিক্ত চার্জ কর্তন, নোটস ও কয়েনস, ব্যাংক গ্যারান্টি, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন ও স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) টাকা তুলতে না পারাসহ অন্যান্য অভিযোগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিআইপিসি চালুর পর থেকে গত বছর পর্যন্ত এফআইসিএসডিতে মোট অভিযোগ করেছেন ২৫ হাজার ৬৫৬ জন গ্রাহক। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৫ হাজার ৬৪৮টি অভিযোগ। অভিযোগ নিষ্পত্তির হার ৯৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ সময়ে লিখিতভাবে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৮৬১টি। যার মধ্যে ১৪ হাজার ৮৫৩টিই নিষ্পত্তি হয়েছে। অন্যদিকে, এ সময়ে টেলিফোনে আসা অভিযোগ ছিল ১০ হাজার ৩৯৬টি; যার সবগুলোই নিষ্পত্তি হয়েছে। একই সময়ে অনলাইনে প্রাপ্ত অভিযোগেরও সবকয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত অনলাইনে আসা প্রাপ্ত অভিযোগ ছিল ৩৯৯টি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৪৯৫টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৮৭টি। নিষ্পত্তির হার ৯৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ সময়ে লিখিতভাবে ১৯৭টি, টেলিফোনে ২৮৯টি ও অনলাইনে ৯টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে অনলাইন ও টেলিফোনে পাওয়া অভিযোগের শতভাগ নিষ্পত্তি হলেও লিখিত অভিযোগের ৮টি অনিষ্পন্ন ছিল। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে প্রাপ্ত অভিযোগসমূহের মধ্যে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল ১৭১টি। এরপরেই রয়েছে ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত ৬১টি, এলসির বিপরীতে আমদানি বিল পরিশোধ না করা সংক্রান্ত ৫০টি, কার্ড সংক্রান্ত ৫৮টি, নোটস এ্যান্ড কয়েনস সংক্রান্ত ১৭টি, যথাযথ সেবা না পাওয়া সংক্রান্ত ৪০টি, ফিজ এ্যান্ড চার্জেস সংক্রান্ত ১৮টি, চেক জালিয়াতি সংক্রান্ত ১টি, রেমিটেন্স সংক্রান্ত ৫টি, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ৯টি, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৪টি ও অন্যান্য অভিযোগ ৫৭টি।
×