ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাশিল্পে আলাদা একাডেমি অযৌক্তিক -তাপস সরকার

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১২ মার্চ ২০১৮

যাত্রাশিল্পে আলাদা একাডেমি অযৌক্তিক -তাপস সরকার

অভিনয়শিল্পী তাপস সরকার। যাত্রা ও নাট্যমঞ্চ থেকে শুরু করে টিভি এবং বেতার নাটকেও অসাধারণ অভিনয় করে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে যাত্রাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে আসছেন এই শিল্পী। অভিনয় ও ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্প সম্পর্কে কথা হয় তার সঙ্গে। যাত্রাশিল্পের বর্তমান অবস্থা কেমন? তাপস সরকার : আপনারা হয়ত অবগত আছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে যাত্রাদল নিবন্ধনের সময় একটা বিশেষ অঙ্গীকারনামা দিতে হয়েছে যে, পালা মঞ্চায়নের সময় কোন অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা যাবে না। দেশের ত্রিশ শতাংশ দল এই নিয়ম মানছে বাকি সত্তর শতাংশ মানছে না। তারা যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করে যাত্রাশিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। দেশে যাত্রাশিল্প ধ্বংসের শুরু তো আগে থেকে? তাপস সরকার : আশির দশকে দেশের যাত্রাশিল্পে ভয়াবহ অশনিসঙ্কেত দেখা দেয়। যাত্রা সংশ্লিষ্ট কলা-কুশলীরা নিজেদের এই শিল্পের একজন সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করেন। কারণ মর্যাদা ও গৌরবের দিক থেকে সমাজে যাত্রাশিল্পের যে উচ্চতা সৃষ্টি হয়েছিল, তার অনেকাংশই ভূলুণ্ঠিত। তথাকথিত এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের কাছে এই শিল্প জিম্মি হয়ে পড়ে। নামে যাত্রাপালা হলেও কিছু অশ্রাব্য বাণী ও সুরের সঙ্গে ততোধিক অশালীন নৃত্য-গীত পরিবেশনাই মুখ্য হয়ে ওঠে। অভিজাত পরিবারের আঙ্গিনায় যাত্রাপালা অভিনীত হলে বাড়ির নারী-পুরুষ সদস্য সবাই মিলে রস আস্বাদন করেছেন। কিন্তু এখন অভিজাত পরিবারের অনেকে যাত্রাশিল্পকে পরিশীলিত বিনোদন বলতেই রাজি নন। এই শিল্পের উন্নয়নে সরকারী পদক্ষেপ কি? তাপস সরকার : সরকার ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো ‘যাত্রাশিল্প উন্নয়ন-নীতিমালা ২০১২’ প্রবর্তন করে ৩০ আগস্ট ‘বাংলাদেশ গেজেট’ প্রকাশ করে। এতে যাত্রাশিল্প উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা, অনুদান, নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার নীতিমালা উল্লেখ করা হয়। নীতিমালা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমির মহাপরিচালকে চেয়ারম্যান মনোনীত করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট যাত্রাশিল্প উন্নয়ন কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৫ জন প্রতিনিধিসহ দেশের বিশিষ্ট নাট্যজন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ এবং যাত্রাব্যক্তিত্বকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যাত্রাশিল্প উন্নয়নে আলাদা একাডেমি প্রয়োজন মনে করেন? তাপস সরকার : শিল্পের প্রায় সব শাখার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। যাত্রাশিল্প উন্নয়নে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগ খুবই যৌক্তিক। যাত্রা শিল্পসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ এ শিল্পের উন্নয়নে আলাদা একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছেন। কিন্তু আমি মনে করি, এই দাবি নিতান্তই অযৌক্তিক। কারণ যে পরিস্থিতির মধ্য থেকে যাত্রাশিল্পকে একটি মানসম্পন্ন অবস্থানে তুলে ধরার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে এর জন্য পৃথক একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বরং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে উন্নয়ন নীতিমালা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের ভেঙ্গে পড়া যাত্রাশিল্পকে আবার সমুন্নত করার নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের মনে রাখা উচিত, ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে আমরা যেন এই সুযোগের অপব্যবহার না করি। এ শিল্পের উন্নয়নে করণীয় কি? তাপস সরকার : এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে এই শিল্পের সঙ্গে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে হবে এবং ভাল যাত্রা দলকে অনুদানের মাধ্যমে তাদের ভাল পালা মঞ্চয়নের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই শিল্পের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করতে হবে। তবেই এই শিল্পে পেশাদারী শিল্পীর আকাল ঘুচবে। -গৌতম পান্ডে
×