ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিএমপির সিসি ক্যামেরা বন্ধ

পুলিশের অপরাধ রেকর্ডে আছে, দমনে নেই

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১২ মার্চ ২০১৮

 পুলিশের অপরাধ রেকর্ডে  আছে, দমনে নেই

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপিত ক্যামেরার নিচেই চলছে পুলিশের অপরাধ। ফলে ক্যামেরার রেকর্ড অনুযায়ী পুলিশের অপরাধ কি আসলেই রেকর্ডেই থেকে যাবে এমন প্রশ্ন টোকাই থেকে শুরু করে পুরো নগরবাসীর। কাস্টমস, জিইসি, আকবরশাহ, অলঙ্কার এমনকি যেখানেই সিসি ক্যামেরা আছে সেখানেই পুলিশের চাঁদাবাজির চিত্র রেকর্ড হচ্ছে কিন্তু অপরাধী পুলিশ দমনে কোন পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের অনিয়মের কারণে যানবাহন চালকরাও অনিয়ম শুরু করেছে অর্থের বিনিময়ে। কারণ, যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার দ-নীয় অপরাধ হলেও পুলিশের এ বিষয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য গাড়িতে হুটার ও বিকন লাইট ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হলেও সম্প্রতি রেন্ট এ কার-এর গাড়িতেও ব্যবহার হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগের চরম অব্যবস্থাপনার কারণেই এ ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। এতে ফায়দা লুটছে অর্থের বিনিময়ে এক শ্রেণীর ট্রাফিক ও থানা পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, অপরাধীদের অপরাধ কর্মকা- ছাড়াও পুলিশের অপরাধ বন্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপই কার্যকর হচ্ছে না। সড়কের মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে। কিন্তু সিসি ক্যামেরার সামনেই চলছে থানা ও ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। এছাড়াও ওয়ানওয়ে সড়কে বিপরীত থেকে গাড়ি চলাচলে পুলিশের অনিয়মও কম নয়। বিশেষ করে ডবলমুরিং থানা পুলিশের দেওয়ানহাট ব্রিজ অতিক্রমের চিত্র নিত্যদিনের। দেখার কেউ নেই। নাকি পদক্ষেপের নামে সময়ক্ষেপণ করছে সিএমপির- এমন প্রশ্ন সচেতন নাগরিকদের। উল্লেখ্য, সিএমপি কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার যোগদানের পর ২০১৬ সালের ১৫ মে চট্টগ্রামের মিডিয়া কর্মীদের সামনে ঘোষণা দিয়েছিলেন নানা অনিয়ম বন্ধে বিট পুলিশিংয়ের। এমনকি নগরীর ১৬টি থানায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে পুলিশের অপরাধ দমনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। এদিকে, পুলিশের অপরাধ দমনে থানা ভিত্তিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুলিশের অপরাধ চলছে ক্যামেরা ও থানার বাইরে। থানাভিত্তিক সোর্স বা দালালদের পদচারণা এখন থানার ভেতরে নয়, কৌশলে তা পরিবর্তন করে নেয়া হয়েছে আশপাশের হোটেল রেস্তোঁরায়। ফলে অসাধু পুলিশের কোন পদক্ষেপই কার্যকর হচ্ছে না। অপরাধ দমনে অপরাধীদের থানা ভিত্তিক ডাটা তৈরি ও সংরক্ষণ আলোর মুখ দেখছে না। এ বিষয়ে সিএমপির এক উর্ধতন কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, অপরাধীদের ডাটা সংগ্রহ, থানার কর্মকা- দেখতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন কয়েকদিনের তত্ত্বাবধান। এরপর আবারও আগের অবস্থানে ফিরে যায় অসাধু পুলিশ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ক্যামেরা থাকলেও মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। ফলে থানা ও ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে। অপরদিকে, সড়কের মোড়ে মোড়ে ও স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল কয়েক বছর আগেই। কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকটি ঘটনা ছাড়া অপরাধী গ্রেফতারের কোন নজির নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি তল্লাশি ও দেহ তল্লাশির নামে অসাধু পুলিশের লাগাম টেনে ধরতে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেই সিএমপির। এদিকে, বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অপরাধ কমিয়ে আনার অভিজ্ঞতায় চট্টগ্রামের ১৬ থানা এলাকায় ১৪৫ জন এসআইয়ের তত্ত্বাবধানে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু করা হয়েছে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহারের উদ্যোগে। রেজিস্ট্রেশন বিহীন সরকারী বা প্রাইভেট গাড়িতে পুলিশ, সিএমপি, সাংবাদিক, এ্যাডভোকেট, চিকিৎসক এমনকি কোন কোন দফতরের নাম দিয়ে চলছে যানবাহন। অথচ, শুধু অন্যান্য দফতরই নয়, খোদ পুলিশের গাড়িও চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, উল্টোপথে গাড়ি যেমন চলছে, রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়নি। বরং পুলিশকে টাকা দিয়েই এ ধরনের অনিয়মে যানবাহন পরিচালনা করছে। এদিকে, নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্পর্শকাতর জায়গাগুলো ছাড়াও নগরীর মোড়ে মোড়ে এমনকি ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে রয়েছে চর্তুমুখী সিসি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরায় ধারণ হচ্ছে ফুটেজ। কিন্তু এসব ফুটেজ কোন অপরাধ সংঘটন হওয়ার পর পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অথচ, নিয়মিত ফুটেজ মনিটরিংয়ের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। অপরদিকে, গত বছরের মে মাসের পর থেকে সিএমপির ১৬টি থানাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও পুলিশের অপরাধমূলক ফুটেজ সংরক্ষণ হলেও অপরাধী পুলিশের বিরুদ্ধে সাজামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নজির দেখা যায়নি। তবে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে ক্যামেরার বাইরে এমন অভিযোগও উঠছে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে।
×