ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়া জয় ॥ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ১১ মার্চ ২০১৮

ইতিহাস গড়া জয় ॥ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ নিদাহাস ট্রফিতে ইতিহাস গড়া, অবিশ্বাস্য এবং চিত্তাকর্ষক জয় ছিনিয়ে নিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। তাও আবার দু-দুটি রেকর্ড গড়ে। দুটিই অবশ্য নিজেদের রেকর্ড (বিশ্বরেকর্ড নয়)। একটি নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর, আরেকটি টি২০ তে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়। আর দুটি রেকর্ডই হজম করে হারের বেদনায় নীল হলো স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। শনিবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টি২০ ম্যাচে তাদের ৫ উইকেটে হারের তেতো স্বাদ উপহার দিল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২১৪ রান করে। জবাবে ২ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য ২১৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে এটা প্রথম জয় বাংলাদেশের। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা প্রথম হার শ্রীলঙ্কার। নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ভারতকে হারায়। আর বাংলাদেশ হারে ভারতের কাছে। জিততে ম্যাচটা অনেক জমিয়ে তুলেছিল লাল-সবুজ বাহিনী। কেননা শুরু থেকেই তারা আস্কিং রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করে উদ্ভাসিত সূচনা। আর এতে নেতৃত্ব দেন দুই ওপেনার লিটন দাস (৪৩) এবং তামিম ইকবাল (৪৭)। ৫.৫ ওভারেই তারা স্কোরবোর্ডে জমা করে ফেলেন ৭৪ রান। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে উভয়েই অর্ধশতক বঞ্চিত হন। এরপর সৌম্য সরকার ২২ বলে ২৪ এবং মাহমুদুল্লাহ ১১ বলে ২০ রান করে আউট হয়ে গেলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীম। তার মারদাঙ্গা ব্যাটিংয়ে আবারও জয়ের সুবাতাস পেতে থাকে কোর্টনি ওয়ালশের শিষ্যরা। কিন্তু ২ বল খেলে কোন রান না করেই সাব্বির রহমানের দৃষ্টিকটু রান আউট (সরাসরি থ্রোতে রান আউট করেন থিসারা পেরেরা) আবারও চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তাদের স্কোর তখন ১৯৭/৫। ইতোমধ্যেই তারা পেরিয়ে গেছে টি২০ তে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহকে। আগের সর্বোচ্চ সংগ্রহও ছিল এই শ্রীলঙ্কারই বিরুদ্ধে (১৯৩/৫, ভেন্যু-ঢাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮)। যদিও ওই ম্যাচটি ৬ উইকেট হেরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শনিবারের ম্যাচটিতে হার নয়, গৌরবময় বিজয়ই ছিনিয়ে নিল লাল-সবুজ বাহিনী। আর ফিনিশিং টাচ দেন মুশফিক। তার মারমুখী ব্যাটিংয়ের জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে বাংলাদেশ। মাত্র ৩৫ বলে ৭২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস (অপরাজিত) খেলেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চার এবং ৪টি ছক্কার মার। অপর প্রান্তে থাকা মেহেদী হাসান ১ বল খেললেও খুলতে পারেননি রানের খাতা। অবশ্য তাতে জিততে সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের! জয়সূচক রানটি নিয়েই মুশফিকের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস প্রকাশ ছিল চোখে পড়ার মতো। আর গ্যালারিত উপস্থিত বাংলাদেশী ক্রিকেট ভক্ত-অনুরাগীদের উল্লাসের ধরন কেমন হতে পারে, তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে কষ্ট হবে না। বাংলাদেশের অসাধারণ এই জয়ে বিফলে যায় লঙ্কান বোলার নুয়ান প্রদীপ (২/৩৭), থিসারা পেরেরা (১/৩৬) এবং দুশমান্থ চামিরার (১/৪৪) বোলিং-নৈপুণ্য। ম্যাচসেরার পুরস্কার পান মুশফিকুর রহীম। সর্বোচ্চ রান তাড়া করে এর আগে বাংলাদেশের জয়ের রেকর্ড ছিল জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে, খুলনায়, ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারিতে। জিম্বাবুইয়ের ৭/১৬৩ রানকে বাংলাদেশ টপকে গিয়েছিল ৬/১৬৬ রান করে। শনিবারের ম্যাচে আগে টস জিতে আগে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠানোর পর শুরু থেকেই বাংলাদেশী বোলারদের কচুকাটা করে তারা। কুসল মেন্ডিস ও কুশল পেরেরা জোড়া অর্ধশতকে নির্ধারিত ২০ ওভারে শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেট হারিয়ে তোলে ২১৪ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ টি২০ সংগ্রহ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ভারতকে হারায়। আর বাংলাদেশ হারে ভারতের কাছে। সেই একাদশে কোন পরিবর্তন না এনেই শনিবার মুখোমুখি হয় দু’দল। টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। তবে বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ে টস হতে পারেনি। ১৫ মিনিট দেরিতে টস হয়। টস জিতেও বাংলাদেশ অধিনায়ক স্বাগতিকদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে পড়েন বিপদে! কারণ প্রথম থেকেই বাউন্ডারি-ঝড় শুরু করেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার দানুষ্কা গুণাথিলাকা ও কুসল মেন্ডিস। মাত্র ৪ ওভারে ৫৩ রান তোলে তোলে এই জুটি। এই জুটি ভাঙ্গে ৫৬ রানে। দানুস্কাকে (২৬) প্যাভিলিয়নে ফেরান মোস্তাফিজুর। তার সঙ্গী কুসল ঠিকই অর্ধশতক (৫৭) করেন। ২৬ বলে দুটি চার ও চারটি ছয়ে চার ইনিংসে তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করা কুসল আউট হন মাহমুদুল্লাহ্র বলে। একই ওভারের পঞ্চম বলে দাসুন শানাকাকেও (০) আউট করে দলকে দারুণ ব্রেক থ্রু এনে দেন মাহমুদুল্লাহ। পরের ওভারে অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালকে (২) তুলে নেন তাসকিন। ফলে রানের গতি কমে যায় লঙ্কানদের। তবে এরপর কুসল পেরেরা অর্ধশতক হাঁকিয়ে আবারও তান্ডব শুরু করেন। তার সঙ্গে যোগ দিয়ে অভিজ্ঞ উপুল থারাঙ্গাও ঝড় তোলেন। ফলে দুশো পেরিয়ে যায় দলীয় সংগ্রহ। ইনিংসের শেষ ওভারে পেরেরা ৪৮ বলে ৮ চার, ২ ছক্কায় ৭৪ রান তুলে মুস্তাফিজের শিকার হন। ওই ওভারে থিসারা পেরেরাকেও (০) শিকার করেন ‘কাটার মাস্টার’। থারাঙ্গা শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১৫ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৩২ রানে। ৬ উইকেটে ২১৪ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলে শ্রীলঙ্কা। মুস্তাফিজ সর্বাধিক ৩ উইকেট পেলেও সবচেয়ে বেশি রান খরচা (৪৮) করেন তিনিই। মাহমুদুল্লাহ পান ১৫ রানে ২টি। ৪০ রানে ১ উইকেট পান তাসকিন।
×