ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এই প্রজন্মের অনেক মহিলা দাবাড়ুরই আদর্শ হচ্ছেন রানী হামিদ। তারা চান রানী হামিদের মতো হতে। জাতীয় দাবায় ২১ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রানী হামিদ। এটা বিশ্বরেকর্ড। কিন্তু দাবা ফেডারেশনের অদক্ষতা, অনীহায় এটি গিনেস বুকে এখনও অন্তর্ভুক্ত ;###;করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি প

আর বছরখানেক খেলতে চান রানী হামিদ

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১১ মার্চ ২০১৮

আর বছরখানেক খেলতে চান রানী হামিদ

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সহযোগিতায়, গোল্ডেন স্পোর্টিং ক্লাবের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ মহিলা দাবা সমিতির আয়োজনে শমসের আলী ফিদে রেটিং মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় তিতাস ক্লাবের আন্তর্জাতিক মাস্টার রানী হামিদ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তিনি ৭ খেলায় সাড়ে পাঁচ পয়েন্ট পেয়ে শিরোপা জয় করেন। সমান পয়েন্ট পেয়ে ফিদেমাস্টার আফরোজা খানম বাবলী রানারআপ হন। রানী হামিদ ও আফরোজা খানম বাবলীর অর্জিত পয়েন্ট সমান হওয়ায় টাইব্রেকিং পদ্ধতির মাধ্যমে স্থান নির্ধারণ করা হয়। পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে টাইব্রেকিং পদ্ধতিতে লিওনাইন চেস ক্লাবের ফিদেমাস্টার নাজরানা খান ইভা তৃতীয়, এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির নোশিন আঞ্জুম চতুর্থ ও সামিহা চৌধুরী পঞ্চম হন। সাড়ে চার পয়েন্ট করে নিয়ে টাইব্রেকিং পদ্ধতিতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম স্থান লাভ করেন যথাক্রমেÑ অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড দাবা দলের ফিদেমাস্টার জাকিয়া সুলতানা, এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির ওয়ালিজা আহমেদ ও মহিলা দাবা সমিতির জান্নাতুল ফেরদৌস। বিশেষ পুরস্কার পান অনুর্ধ-১০ বিভাগে আহমেদ ওয়াদিফা, অ-১৪ বিভাগে মুশফিকা জান্নাত সাওরী, অ-১৮ বিভাগে কাজী জারিন তাসনিম, উর্ধ-৫০ বিভাগে জাহানারা হক রুনু এবং আনরেটেড বিভাগে সিমন আহমেদ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরনো ভবনের তৃতীয় তলায় দাবা কক্ষে সপ্তম বা শেষ রাউন্ডের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। শেষ রাউন্ডের খেলায় রানী হামিদ বাবলীকে ও সামিহা ইশরাত জাহান দিবাকে হারান। এছাড়া ইভা নোশিনের সঙ্গে, জাকিয়া সাওরীর সঙ্গে ও ওয়ালিজা জান্নাতের সঙ্গে ড্র করেন। খেলা শেষে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সহ-সভাপতি কেএম শহিদউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামীম বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক দাবা বিচারক হারুন অর রশিদ ও মহিলা দাবা সমিতির হামিদা মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। ৭ রাউন্ডে সুইস-লীগ পদ্ধতির এ প্রতিযোগিতায় ৩৫ দাবাড়ু অংশগ্রহণ করেন। বিজয়ীদের নগদ পঁয়ষট্টি হাজার টাকার অর্থ পুরস্কার দেয়া হয়। এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে ৭৪ বছর বয়সে এবং দীর্ঘ বছরখানেক পর আবারও দাবায় শিরোপা জিতলেন সৈয়দা জসিমুন্নেসা খাতুন ওরফে রানী হামিদ। সেবার শিরোপা জিতেছিলেন বিদেশের মাটিতে, নেপালে অনুষ্ঠিত এশিয়া জোনাল চ্যাম্পিয়নশিপ দাবায়। আর এবার জিতলেন দেশের মাটিতে। কেমন লাগলো শিরোপা জিততে? ‘জীবনে অনেক শিরোপা জেতার অভ্যাস আছে। তারপরও এই শিরোপা জিতে খুবই খুশি হয়েছি। কারণ বছরখানেক ধরে আমার কোন সাফল্য আসছিল না। খেলার মান নিয়েও সন্তুষ্ট ছিলাম না। কাজেই খুব করে চেয়েছিলাম এই শিরোপা যেন জিততে পারি। তবে এটা এত সহজে জিতিনি। কারণ বাবলী অনেক ভাল খেলোয়াড়। জাতীয় দাবার সাবেক চ্যাম্পিয়ন। যদিও মাঝে বেশ কয়েক বছর দাবা খেলেননি। তারপরও তার খেলার ধরন আমাকে যথেষ্ট বেগ দিয়েছে।’ জনকণ্ঠকে দেয়া সাক্ষাতকারে এমনটাই জানান বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক দাবামাস্টার রানী হামিদ। শেষ রাউন্ডে বাবলীর বিপক্ষেই খেলেন ১৯৮৫ সালে ফিদে আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার খেতাব পাওয়া এবং তিনবার ব্রিটিশ মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ‘বাংলাদেশের দাবার রানী’ খ্যাত রানী হামিদ। তাদের উভয়েরই ছিল ‘মাস্ট উইন ম্যাচ!’ শেষ পর্যন্ত বিজয়িনীর হাসি হাসেন রানীই। ‘তারপরও কিছুটা নার্ভাস হয়েছিলাম। তবে অভিজ্ঞতার বলেই শেষ পর্যন্ত নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করতে পেরেছি। ধরে রাখতে পেরেছিলাম নিজের আত্মবিশ্বাস।’ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রানী নাকি ইচ্ছে করেই তার শিরোপাজয়ের সুখবরটি নিজের পরিবারের সদস্যদের জানাননি, ‘আমি বাসায় কাউকেই নিজের সাফল্যের খবর দিইনি, সবাইকে সারপ্রাইজ দেব বলে। কারণ তারা ধরেই নিয়েছিল আমার ফর্ম নষ্ট হয়ে গেছে, শিরোপা জেতা তো দূরে থাক।’ বয়সের কারণেই আগের মতো শরীরে আর বল পান না বলে জানান আগামী ৩০ মার্চ থাইল্যান্ডে দাবা খেলতে যাওয়া রানী হামিদ, ‘আগের মতো শরীরে আর জোর পাই না। অল্পতেই হাঁফিয়ে উঠি। অলসতায় পেয়ে বসে। হাঁটতে একদমই ইচ্ছে করে না। হয়তো আর খুব বেশি হলে ২/১ বছর পর্যন্ত দাবা খেলব।’ এই প্রজন্মের অনেক মহিলা দাবাড়ুরই আদর্শই হচ্ছেন রানী হামিদ। তারা চায় রানী হামিদের মতো হতে। জাতীয় দাবায় ২১ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রানী হামিদ। এটা বিশ্বরেকর্ড। কিন্তু দাবা ফেডারেশনের অদক্ষতা, অনীহায় এটি গিনেস বুকে এখনও অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি পীড়া দেয় রানীকে। দাবা খেলাটা তিনি শুরু করেছিলেন স্কুলজীবন থেকেই। তার ভাষায়, ‘মজার ব্যাপার হচ্ছে, তখন মেয়েরা সুযোগ-সুবিধা কম পেলেও দাবায় তারা আসত প্রচুর। অথচ এখন ঠিক তার উল্টোটাই ঘটছে!’ তবে সত্যিই যদি বছরখানেকের মধ্যে দাবাড়ু হিসেবে অবসর নেন রানী হামিদ, তাহলে যে দাবার রানীকে হারিয়ে দেশের দাবা হয়ে যাবে বিবর্ণ, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
×