ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১১ মার্চ ২০১৮

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। স্বাধীনতার মাস মার্চ। কাকতালীয়ভাবে এ মাসেই বাঙালীর জন্য আর একটি সুখবর অপেক্ষমাণ। ১২ থেকে ১৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সিডিপির ২০তম অধিবেশন হবে। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গত তিন বছরের আর্থ-সামাজিক খাতের অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে-এমন ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করলে ২২ মার্চের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে এই সুখবর জানাবে। উন্নয়ন টেকসই করতে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে সদস্যদেশগুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করে জাতিসংঘের সিডিপি। স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল, উন্নত দেশ-তিন শ্রেণীতে ভাগ করে সিডিপি। বাংলাদেশসহ ৪৭টি দেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় আছে। প্রতি তিন বছর পর জাতিসংঘের সিডিপি এই তালিকায় থাকা দেশগুলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে থাকে। তিনটি সূচকের ভিত্তিতে এই পর্যালোচনা করা হয়। এগুলো হলো মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক। কমপক্ষে দুটি সূচকে নির্ধারিত মান অর্জন করতে হয় এলডিসি থেকে বের হতে। দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই নির্ধারিত মান অর্জন করবে। গত অক্টোবর মাসে সিডিপির প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উভয় পক্ষের দ্বিমতগুলো নিরসন করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সিডিপির হিসাবে ২০১৭ সালের অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৪ দশমিক ৯ পয়েন্ট। নিয়ম অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে এ সূচকের মান ৩২ পয়েন্টের নিচে থাকতে হবে। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ বা এর বেশি পয়েন্ট পেতে হবে। এ সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ৭২ দশমিক ৮ পয়েন্ট। অন্যদিকে মাথাপিছু আয় সূচকে ১ হাজার ২৪২ মার্কিন ডলার হতে হবে। ২০১৭ সালের হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২৭২ ডলার। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম বলেছেন, ‘সিডিপি আমাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গেছে। প্রায় সব তথ্যের সঙ্গেই তারা একমত। আমরা এবার তিনটি সূচকেই নির্ধারিত মান অর্জন করব।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন হবে স্বাধীনতার পর অন্যতম বড় অর্জন। ২২ মার্চ এই চিঠি পাব বলে আশা করছি।’শামসুল আলম আরও বলেছেন, এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর তা টেকসই করতে গভীর সমীক্ষার প্রয়োজন হবে। ২০২৭ সালের পর যখন শুল্কমুক্ত সুবিধা উঠে যাবে, তখন যেন বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে পারে। এ জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্য উৎপাদনের খরচ কমাতে হবে। ২০১৮ সালের পর্যালোচনায় যোগ্যতা অর্জন করলে পরের তিন বছর নির্ধারিত সূচকে ওই অবস্থা বজায় রাখতে হবে। এরপর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করবে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইকোসোক)। তিন বছর পর ২০২৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দেয়া হবে। স্বল্পোন্নত দেশের সব বাণিজ্যসুবিধা ২০২৭ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ২০১৫ সালের সর্বশেষ পর্যালোচনায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচকেই শুধু নির্ধারিত মান অর্জন করেছিল। ২০১৫ সালের পর্যালোচনায় পাঁচটি দেশ যোগ্যতা অর্জন করেছিল। এসব দেশ এখন এলডিসি থেকে উত্তরণের পর্যায়ে আছে। দেশগুলো হলো মালদ্বীপ, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, সামোয়া, বতসোয়ানা ও কেপ ভার্দে। এলডিসি থেকে উত্তরনে বর্তমান সুযোগকে কার্যকরী করতে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে প্রাধান্য দিয়ে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দুর্নীতির লাগাম টেনে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন, ব্যাংকের সুদের হার সহনীয় পর্যায়ে রাখা সহ দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা গ্রহণ আজ সময়ের দাবি।
×