ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টের এক নম্বর কার্যতালিকায়

খালেদার জামিন বিষয়ে আজ আদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১১ মার্চ ২০১৮

খালেদার জামিন বিষয়ে আজ আদেশ

বিকাশ দত্ত ॥ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আজ রবিবার আদেশ দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে আজই হাইকোর্টে পৌঁছাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে আজ কার্যতলিকায় মামলাটি এক নম্বরে রাখা হয়েছে। এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আইনজীবীগণ ভিন্নমত পোষণ করেছেন। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আশা করি আদালত গুরুত্বসহকারেই এটি দেখবেন। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, সমস্ত নথির সাক্ষ্য জেরা পর্যালোচনা করে আদালত দেখবেন খালেদা জিযাকে জামিন দেয়া যাবে কি যাবে না। কোনভাবেই রাজনৈতিক আন্দোলন করে জামিন নেয়া যাবে না। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আদালতের ওপর। দুদকের অইনজীবীর মতে এটা বিচারাধীন বিষয় এর ওপর কোন মন্তব্য করা যাবে না। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের ধারণা এ মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। ২৫ ফেব্রুযারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। নিম্ন আদালতের আদেশের নথি হাইকোর্টে পৌঁছানোর পর খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য আদেশ প্রদান করেন হাইকোর্ট। এর পর ৮ মার্চ খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার জামিন আবেদনের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। ঐ দিন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতে বলেন, ‘বিচারিক আদালত থেকে ১৫ দিনের মধ্যে নথি আসার কথা, সেই সময় তো শেষ। আজ (৮ মার্চ) ১৬ দিন চলছে। তখন বিচারক বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে নথি পাঠাতে আমরা তো ২২ ফেব্রুয়ারি আদেশ দিয়েছিলাম। নথি এসেছে কি?’ জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘নথি এসেছে কি না জানি না। উনার জামিন আবেদনটি আদেশের জন্য রাখা হোক।’ বিচারক তখন বিষয়টি রবিবার (১১ মার্চ ) আদেশের জন্য কার্যতালিকায় রাখার কথা বলেন। এদিকে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারে থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের কর্মসূচী পালন করছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন, হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের নথি কল করেছেন। নথি আসলে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিচারপতিগণ তা দেখবেন। প্রশ্নটা হলো আদালতের সামনে নথিটা উপস্থাপন করা হবে। আদালতের খালেদা জিয়াকে জামিন দিতেই হবে এমন নয়। নথিকে সাক্ষ্য জেরা বিবেচনা করে দেখতে হবে জামিন দেয়া যাবে কি যাবে না। নিম্ন আদালতের ৫ বছরের কারাদ-ে জামিন দেয়ার বিধান থাকলেও এটা সম্পূর্ণ অন্য ধরনের মামলা। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের প্রধান হয়ে এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করেছেন। কি কি বিষয়ে ওপরে ভিত্তি করে কি সাক্ষ্য জেরা বিবেচনা করে আদালত দেখবেন জামিন দেয়া যায় কিনা- এটা আদালতে এখতিয়ার। কাজেই বাইরে থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন আইনের শাসনের বিপক্ষে যাচ্ছে। আদালতের প্রতি বিশ্বাস থাকতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্র মজবুত হবে না। তিনি জেলে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। তাকে জামিন দিতে হবে এটা কিন্তু আদালতের বাধ্যতামূলক নয়। অন্যদিকে খালেদা জিযার আইনজীবী সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল জনকণ্ঠকে বলেন, আমি কিন্তু খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে নয়। দীর্ঘ ত্রিশ বছর আইনপেশায় প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞতায় বলছি, আদালতের কাছে সবাই সমান। ৫ বছরের সাজায় নি¤œ আদালত দিলে হাইকোর্টে আপীল গ্রহণের সময়ই জামিন দেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ধর্মী ওর্ডার দিয়েছে আদালত। এর আগে এমন দেখিনি। এটা আদালতের বিষয়। নথি দেখে ওর্ডার দিতে পারে। তবে আমি আশাবাদী আজ খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, মামলাটি বিচারাধীন। কাজেই এ বিষয়ে এখন কোন মন্তব্য করব না। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আশাকরি আদালত গুরুত্বসহকারেই এটি দেখবেন। এর আগে হাইকোর্টে শুনানিতে তিনি বলেছিলেন ‘ইতিহাসে এই প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রী যিনি এতিমদের টাকা আত্মসাত করেছেন।’ একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের স্বাক্ষরে কীভাবে টাকা চলে যায়? ওই সময় তার ছেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসায়ই থাকতেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি এত বড় দায় এড়াতে পারেন না। খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বয়স, অসুস্থতা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে জামিন আবেদনের আর্জি করেন। অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি আরো বলেন ‘২০০৮ সালের মামলা। ২৩৭ কার্যদিবসে তিনি ১০৯ বার বিভিন্ন অজুহাতে সময় নিয়েছেন। এছাড়া ২৬ বার উচ্চ আদালতে এসেছেন। মোট কথা নয় বছরের মতো মামলাটি চলছে। সুতরাং এখানেও দেরি হবে না, তা বলা যায় না। তাই আপীল শুনানির জন্য এক মাসের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত হতে পারে। যেমন বিডিআর মামলায় হয়েছিল। আমাদের কোর্টের সে প্রযুক্তি আছে।’ ডেপুর্টি এ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য জনকণ্ঠকে বলেন, এটি একটি বড় ধরনের দুর্নীতির মামলা। কাজেই আদালত সব কিছু দেখে শুনেই বিবেচনা করবেন। সে জন্যই নিম্ন আদালতের নথি তলব করা হয়েছে। অনেক সাক্ষ্য জেরা পর্যালোচনা করতে হবে। এটা আদালতের এখতিয়ার। দুর্নীতির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এই দুর্নীতির জামিন দেয়ার ব্যাপারে ও সর্বাধিক পর্যালোচনা করতে হবে। সাক্ষী জেরা এবং বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে আদালত স্দ্ধিাš নেবে। নথিটা অনেক বড় । প্রায় তিন হাজার পৃষ্ঠা। সমস্ত কিছু পড়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যেহেতু হাইকোর্ট এই মুহূর্তে নথি আসলে সার্বিক ভাবে পূর্ণাঙ্গ আপীল শুনানি করে সাজা বহাল থাকবে কি থাকবে না সেটা আদালত রায় প্রদান করবেন। সে সময় জামিনও বিবেচনা করবেন। খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান জনকণ্ঠকে বলেন, আমার মনে হয় আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দেবেন। পারিপার্শি¦ক অবস্থা বিবেচনা করেই আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দিতে পারেন। জামিনের জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ৩২টি যুক্তি দেখিয়েছেন। যুক্তিতে বলা হয়, আবেদনকারীর বয়স ৭৩ বছর। তিনি শারীরিকভাবে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ৩০ বছর ধরে গেঁটে বাত, ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস, ১০ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও তাছাড়া ১৯৯৭ সালে তার বাম হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং ডান পায়ের হাঁটু ২০০২ সালে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শারীরিক এসব জটিলতার কারণ বিবেচনায় নিয়ে তার জামিন মঞ্জুরের আবেদন জানানো হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন দায়ের করেন। এর আগে, ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান মামলাটিতে খালেদা জিয়ার ৫ বছর কারাদ- দেন। একইসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদাপুত্র তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির ১০ বছর করে কারাদ- দেন। রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের সার্টিফাইড কপি বা অনুলিপি হাতে পান। সাজা ঘোষণার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
×