ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশকদের সংবর্ধনায় জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণার দাবি

দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারাটা আমার সৌভাগ্য ॥ আনিসুজ্জামান

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১১ মার্চ ২০১৮

দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারাটা আমার সৌভাগ্য ॥ আনিসুজ্জামান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমি যেসব সময় পার করে এসেছি. তা ছিল দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। সেই অস্থির সময়ে হয়ত দেশের জন্য কিছু কাজ করেছি। আর দেশের জন্য ভূমিকা পালন করতে পারা আমার কাছে একইসঙ্গে বিরল সুযোগ ও সৌভাগ্য। ৮১তম জন্মবার্ষিকীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এভাবেই অনুূভূতি প্রকাশ করলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, আমি নিজেকে মূলত শিক্ষক মনে করি। শিক্ষকতায় যে আনন্দ পেয়েছি ও মর্যাদা পেয়েছি, সেটা আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করেছে। দেশের মানুষের গড় আয়ুর হিসেবে আমি বাড়তি সময় পেয়েছি। সবাই প্রার্থনা করবেন, জীবনের এ বাড়তি সময়টা যেন আমি ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারি। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল শিক্ষাবিদ, লেখক ও মুক্তচিন্তার অগ্রপথিক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের ৮১তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে শনিবার বিকেলে তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করে প্রকাশকদের দুই সংগঠন। এ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণার দাবি জানানো হয়। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানে আয়োজন করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও ব্যবসায়ী সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আনিসুজ্জামানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, অধ্যাপক শফি আহমদ, রাজনীতিক ও প্রাবন্ধিক মোনায়েম সরকার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ প্রমুখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মোঃ আরিফ হোসেন এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের স্ত্রী সিদ্দিকা জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আনিসুজ্জামান আমাদের সাহিত্যের বাতিঘর, এটা নিয়ে কোন প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি বিবেকেরও বাতিঘর। আমার কাছে সেটাই বেশি উল্লেখযোগ্য ও মূল্যবান মনে হয়। বয়সে ছোট হওয়ায় আনিস আমার ¯েœহাস্পদ, তবে জন্মদিনের এ আয়োজনে ভালবাসা যত না জানাব, তার চেয়েও বেশি তাকে শ্রদ্ধা জানাই। সেলিনা হোসেন বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমার সরাসরি শিক্ষক নন, কিন্তু তার কাছ থেকে জীবন ও পরিবেশের যে শিক্ষা পেয়েছি, তাই আমার কাছে অমূল্য সম্পদ। তার কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞান ও দীক্ষা আমাদের জীবন পরিচালনার বোধ জাগ্রত করেছেন। হাশেম খান বলেন, তিনি দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে বাতিঘরের মতো জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বয়স তার কাজ করার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তিনি এখনও নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। আমরা এখনও তার কাছ থেকে প্রেরণা খুঁজে ফিরি। শামসুজ্জামান খান তার বক্তব্যে আনিসুজ্জামানকে ‘জাতির শিক্ষক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে সরকারের কাছে তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের সময়ের বাতিঘর অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রে তার মতো মহীরুহ ক্রমেই তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে চলেছেন। আলোকিত মানুষ গড়ার পথে তিনি এখনও আমাদের আলোর পথ দেখিয়ে চলেছেন। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়ার মাধ্যমে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। তাই কোন অবস্থাতেই সত্য উচ্চারণ করতে ভয় পান না। তিনি আমাদের পথচলার প্রেরণা। আনিসুজ্জামানের জীবনের একটি অধ্যায় কিছুটা অনালোচিত। সেটা হলো ভাষা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা। ওই সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছেন। সভা-সমাবেশের জন্য মাইকের ব্যবস্থা করাসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই আঁখি হালদার গেয়ে শোনান রবীন্দ্রনাথের ‘তোমায় গান শোনাবো’ ও ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’ এবং উর্বী সোম গেয়ে শোনান নজরুলের ‘মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর’ ও ‘আমার কোন কূলে আজ ভিড়লো তরী’ গানগুলো। এরপর ছিল ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব আক্তারী মমতাজ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সিরাজুল হক খান, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তবারক হোসেন, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, অনিন্দ্য প্রকাশের প্রকাশক আফজাল হোসেন, রকমারি ডট কমের ফারুক হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কথাপ্রকাশের প্রকাশক জসীম উদ্দিন, অনুপম প্রকাশনীর মিলনকান্তি নাথ, মুক্তধারার প্রধান নির্বাহী সজীব সাহা প্রমুখ।
×