ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অজানা রোগে আক্রান্ত ১৭ মাসের শিশু ফাহাদ

কালোজিরার মতো সারা শরীরে গোটা, অসহ্য যন্ত্রণা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১১ মার্চ ২০১৮

কালোজিরার মতো সারা শরীরে গোটা, অসহ্য যন্ত্রণা

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ জন্মের দুমাস পর থেকেই অজানা রোগ বাসা বেঁধেছে ১৭ মাসের শিশু ফাহাদের শরীরে। ফাহাদের মাথা, মুখ, হাত, গলা, কান, বুক তথা সারা শরীরে কালোজিরার মতো গোটা উঠেছে। বিশেষ করে শরীরের নিচের অংশ তথা পা দুটো গোটায় ঢেকে গেছে। মুখে নিজের শরীরের কষ্ট ঠিকমতো প্রকাশ করতে না পারলেও আক্রান্ত রোগটি তার শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা ও যন্ত্রণার সৃষ্টি করছে তা শিশু ফাহাদের কান্নায় স্পষ্ট। তার বেশিরভাগ সময় কাটে বিছানায় শুয়ে। ফাহাদের এ রোগ এখনও শনাক্ত করতে ও কার্যকর কোন ওষুধ দিতে পারেননি চিকিৎসকরা। টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার আইসড়া গ্রামের শাহীন মিয়া ও মেরিনা খাতুন দম্পতির একমাত্র সন্তান ফাহাদ। বর্তমানে টাঙ্গাইল শহরের কোদালিয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন এই পরিবার। ফাহাদের বাবা শাহীন মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, ফাহাদের বয়স যখন দুই মাস তখন থেকেই তার শরীরে দেখা দেয় এই রোগ। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়ে কোন উন্নতি হয়নি ফাহাদের। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সাজ্জাত হোসেনের কাছে ৫ মাস, তারপর চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নুরুল ইসলামের কাছে ৬ মাস চিকিৎসা করাই। কিন্তু তারা কোন রোগ নির্ণয় করতে পারেননি। তারপর টাঙ্গাইলের মধুপুর জলছত্র হাসপাতালে নেয়া হয় ফাহাদকে। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ জামাল উদ্দিনকে দেখিয়েছি। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানানো হয়, মাংসের ৩ সেমি নিচ থেকে কালোজিরার মতো দেখতে এই গোটাগুলো জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু উনারা এই রোগের কোন নাম বলতে পারেননি। শুধু বলেছেন, এটা জন্মগত। সেখানে দু’বার মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়েও তারা জানতে পারেননি এই অসুখের নাম। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ জামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমার মনে নেই শিশুটির রোগের বিষয়ে। প্রেসক্রিপশন দেখলে বুঝতে পারব।’ ফাহাদের বাবা ফোনে আক্ষেপ করে বললেন, আমি একজন অটোরিক্সা চালক। খুবই অল্প আয়ের মানুষ। একমাত্র ছেলের চিকিৎসার জন্য ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেছি। জমি বিক্রির ছয় লাখ টাকা ছেলের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেছি। কোন কাজ হয়নি। এছাড়া কোন সম্পত্তি নেই আমার। শিশু সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। জানি না শিশুটির ভাগ্যে কি আছে? ফাহাদের মা মেরিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, জন্মের পর থেকেই ডাক্তার দেখাচ্ছি। তবে কোন ডাক্তারের কাছ থেকেই ছেলের আসল রোগটি জানা সম্ভব হয়নি। কেউ আমার ফাহাদকে ভাল করতে পারেননি। তবে ফাহাদকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসার কথা বলেছেন। আমার স্বামী অটোচালক। ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। একমাত্র সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষ সম্বল ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আমরা নিঃস্ব। ফাহাদের চিকিৎসা করাতে পারছি না। ফাহাদের চিকিৎসার জন্য সমাজের দয়ালু ও বিত্তবানদের সহযোগিতা চাই আমরা। শিশু ফাহাদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও শিশু ফাহাদের চিকিৎসক ডাঃ খন্দকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ফাহাদের চিকিৎসা চলছে। এটি ক্রনিক ননস্পেসিফিক ডার্মাটাইটিস টাইপের রোগ। উপসর্গ অনুযায়ী দীর্ঘদিন চিকিৎসা করতে হয়। তবে উন্নত পদ্ধতিতে বায়োপসি করালে হয়ত রোগটি চিহ্নিত হতে পারে। যা উন্নত দেশগুলোতে সম্ভব। ফাহাদের সম্পর্কে জানতে ও সাহায্যের হাত বাড়াতে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যাবে ০১৭১৮৮৮৭৮৬৩ (শাহীন মিয়া) এই নম্বরে।
×