ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমেনা হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে এখনও অন্ধকারে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১১ মার্চ ২০১৮

আমেনা হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে এখনও অন্ধকারে পুলিশ

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পশ্চিম নাখালপাড়ার গৃহকর্ত্রী আমেনা বেগমের (৬৫) নৃশংস খুনের ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। দু’দিনেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত এই খুনের কুলকিনারা করতে পারেনি। তবে পুলিশ জানায়, সিরিয়াল কিলাররা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে পারিবারিক না স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে তিনি খুন হয়েছেন। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় তেজগাঁও থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সেন্টু মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, রসূল ভিলার গৃহকর্ত্রী আমেনা বেগমকে পরিকল্পিতভাবে খুন হয়েছেন। তবে হত্যার কারণ সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যে বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে, সেটা একটি গলির মধ্যে। রসূল ভিলাসহ ১০ ভবন রয়েছে সেখানে। কোন বাড়িতেই সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। গলির মুখে মূল সড়কে কয়েকটি দোকানে সিসিটিভি রয়েছে। তা থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। মূল সড়ক থেকে ঘটনাস্থল বহুদূর। সিসিটিভি ফুটেজে কে যাতায়াত করছে তার বুঝতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। তবুও আমরা হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করছি। এই পুলিশ কমকর্তা জানান, হত্যার পেছনে কী কী কারণ থাকতে পারেÑখতিয়ে দেখা হচ্ছে। পারিবারিক বা স্থানীয় দ্বন্দ্ব, মালামাল লুটের জন্য বাইরের কেউ জড়িত কী না। এমনকী দক্ষিণখানে ঘটে যাওয়া চারটি ঘটনা সিরিয়াল কিলিংয়ের ধরন নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে তেজগাঁওয়ের পশ্চিম নাখালপাড়ার পশ্চিম নাখালপাড়ার ২৮৮ নম্বর বাড়ি ‘রসূল ভিলা’ পাঁচতলা বাড়ির নিচ তলায় বাসা ভাড়া নেয়ার কথা বলে ভেতর ঢুকে গৃহকর্ত্রী আমেনা বেগমকে (৬৫) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে ওই গৃহকর্ত্রীর গলার চেন ও হাতের স্বর্ণের চুড়ি খুলে নিয়ে যায় তারা। এই ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে রাসেল আহমেদ বাবু বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- বাসা ভাড়া নিতে এসে আমেনা বেগমকে হত্যা করা হয়। নিহতের গলার চেন ও হাতের চেন চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এটি ডাকাতিজনিত ঘটনাও হতে পারে। এ জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ধারণা করা হচ্ছে, বাড়ির মালিক সম্পর্কে হত্যাকারী আগে থেকে খোঁজখবর নেয়। হত্যার উদ্দেশে আগেই খুনীরা ঘটনাস্থল রেকি করেছিল। এখন পর্যন্ত হত্যাকারী সম্পর্কে কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পশ্চিম নাখালপাড়ার রেলক্রসিং থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে ডান দিকে একটি গলি রয়েছে। এই গলিতে ১০ ভবন রয়েছে। গলি ধরে সামনে একটু এগিয়ে গেলেই ২৮৮ নম্বর ‘রসূল ভিলা’ ভবনটি। তবে এই গলির কোনও বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। গলির সামনেও কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা দেখা যায়নি। তবে রাস্তার পাশে কয়েকটি দোকানে সিসিটিভি কামেরা থাকলেও সেটি গলির মুখ পর্যন্ত কাভার করে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গলির সামনে কয়েকটি দোকানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো বন্ধ অথবা অচল অবস্থায় পাওয়া গেছে। যে কয়েকটি দোকানে সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। গলির মুখে ও সামনে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় ঘটনার দিন দুপুরে এই গলিতে কে বা কারা প্রবেশ করেছিল তা বলা যাচ্ছে না। এতে হত্যার কারণ ও আসামি শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, তেজগাঁও পশ্চিম নাখালপাড়ার লুকাস মোড় থেকে রেলক্রসিং গেট পর্যন্ত এলাকায় নিহত আমেনা বেগমের ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনরা বসবাস করেন। ষাটের দশক থেকেই তারা ওই এলাকার প্রভাবশালী পরিবার হিসেবে পরিচিত। তারা জানান, আমেনা বেগমের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোন ঝামেলা নেই। কোনদিন কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করতেও দেখিনি। এ বিষয়ে মামলা বাদী নিহতের ছোট ছেলে রাসেল আহমেদ বাবু জানান, বাবার মৃত্যুর পর এই বাড়ির সবকিছু আমার মা আমেনা বেগম দেখাশোনা করতেন। মায়ের সঙ্গে ছেলে-মেয়ের সম্পর্ক সুমধুর ছিল। নিহতের প্রতিবেশীরা জানান, এ বছরের শুরুর দিকে ওই বাড়ির নিচতলার এক ভাড়াটিয়ার কাছে স্থানীয় কিছু যুবক এসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে বিষয়টি বাড়ির মালিককে জানানো হলে ওই চাঁদাবাজদের আটক করা হয়। বিচার-সালিশের মাধ্যমে নিহত আমেনার আত্মীয় স্বজনরা বিষয়টি মীমাংসা করেছিল। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ আমিনুল বলেন, পারিবারিক, স্থানীয়সহ বিভিন্ন কারণ মাথায় নিয়ে এই হত্যাকা-ের তদন্ত করা হচ্ছে। পশ্চিম নাখালপাড়ার ২৮৮ নম্বর বাড়ি রসূল ভিলার পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বসবাস করেন বাড়ির মালিকের দুই ছেলে পরিবার নিয়ে থকেন। ভবনের নিচতলা ও চতুর্থ তলায় দুটি ফ্ল্যাট খালি। নিহতের পরিবার জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে এক যুবক বাসার কলিংবেল চাপলে গৃহকর্ত্রী আমেনা বেগম দরজা খুলেন। ওই যুবক বাসা ভাড়া নেয়ার কথা জানালে তাকে তিনি নিচ তলায় ফ্ল্যাট দেখাতে নিয়ে যান। সেখানে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় ওই যুবক। পুলিশ জানায়, ভবনের নিচ তলায় খালি ফ্ল্যাটটির রান্নাঘরের ভেতর ধারাল অস্ত্র দিয়ে আমেনা বেগমের মাথার পেছনে আঘাত করা হয়েছে। এতে তার মাথা অনেকখানি থেঁতলে যায়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক মোর্তাজা কবীর জানান, ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। নিহতের মাথার খুলির টুকরো ও চুল পাওয়া গেছে। তবে চুলটি কী নিহতের না কী হত্যাকারীর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠান হয়েছে।
×