ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল অবসানের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১১ মার্চ ২০১৮

 চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল অবসানের উদ্যোগ

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সংসদের নতুন নির্বাচন টার্গেটে রেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোটদানের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন তখন বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কেবলই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। জাতীয় পার্টির অবস্থাও তথৈবচ। এছাড়া বর্তমানে রাজনৈতিক পর্যায়ে কোণঠাসা অবস্থায় থাকা বিএনপির অভ্যন্তরেও কোন্দলের শেষ নেই। দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মামলায় দ-িত হয়ে কারাগারে থাকার কারণে তার মুক্তি নিয়ে নেতাকর্মীরা আন্দোলনে ব্যস্ত। এর পরেও সংক্ষিপ্ত আকারের আন্দোলনেও গ্রুপিং কোন্দলের শেষ নেই। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরে রাজনীতির চেয়ে ব্যক্তি আধিপত্য বিস্তারের লড়াই যেন ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন, বিশেষ করে ছাত্রলীগ অনেকটা বেপরোয়া। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এদের নিজেদের অন্তর্কোন্দলের জের হিসেবে চেয়ার ছোড়াছুড়ি এমনকি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা উৎসুক মহলে নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ছাত্রলীগের এ চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা সংক্রমিত হয়েছে জাতীয় পার্টিতেও। গত শুক্রবার জাতীয় পার্টির বিভাগীয় কর্মী সমাবেশে দক্ষিণ জেলা ও মহানগরীর অন্তর্কোন্দলের জের হিসেবে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে। এর আগে লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোক সভায় ছাত্রলীগের দুগ্রুপের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি এক বিশ্রী পরিবেশের জন্ম দেয়। অনুরূপভাবে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে হাঙ্গামা, চেয়ার ছোড়াছুড়ির বিশ্রী ঘটনা ঘটে। যে কারণে সম্মেলন প- হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ওই দিন হাত জোড় করে ছাত্রলীগ কর্মীদের শান্ত হবার আহ্বান জানিয়ে ব্যর্থ হন। চট্টগ্রামে বহু আগে থেকেই ছাত্রলীগ দ্বিধাবিভক্ত। এ দ্বিধাবিভক্তির রেশ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। ছাত্রলীগের এ দুগ্রুপের একটি মহিউদ্দিন চৌধুরী ও অপরটি আ জ ম নাছির উদ্দিন গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। আবার এ দুগ্রুপের মধ্যে বেশকিছু উপগ্রুপও রয়েছে। মোদ্দা কথা নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে দিন দিন দ্বিধাবিভক্তি সংক্রমিত হচ্ছে। চবি ছাত্রলীগের কোন্দলের কারণে সেখানে ছাত্রলীগের কর্মকা- কেন্দ্রীয় নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। মহানগরে বিভিন্ন কলেজ পর্যায়ে ছাত্রলীগের কোন্দলের কমতি নেই। নগর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন মহিউদ্দিন সমর্থক বলে খ্যাত ইমতিয়াজ আহমেদ ইমু ও নুরুল আজিম রনি। ছাত্রলীগে এদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বড় কোন প্রশ্ন না থাকলেও বিরুদ্ধবাদী গ্রুপের সদস্যরা তাদের কোণঠাসা করতে সদা তৎপর। এসব নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এদিকে, আগামী ২১ মার্চ চট্টগ্রামের পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বড় ধরনের একটি সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সমাবেশে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ ঘটানোর টার্গেট নেয়া হয়েছে। সমাবেশটি পটিয়ায় নির্ধারিত করা হলেও মূলত দলের মহানগর ও উত্তর জেলা থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দলে দলে যোগ দেবেন। বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে পটিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কোন সমাবেশ হয়নি বিধায় এবারের নির্বাচনের আগে এ স্থানটিতে টার্গেটে আনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলীয় ও ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গ্রুপিং কোন্দলকে সামনে রেখে এর অবসানে পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গত শুক্রবার নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন পটিয়ার জনসভার বিষয়টি থাকলেও মূলত কোন্দল নিরসনে নানামুখী তৎপরতা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাস সম্ভাব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ধরা হলে হাতে রয়েছে আর মাত্র ৯ মাস। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের এখনও সম্মেলন হয়নি, নতুন নেতৃত্ব আসেনি-এসব বিষয় নিয়ে উত্তপ্তাবস্থা সৃষ্টি হয়ে আছে। এছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে সম্মেলন বা মনোনীত করার মাধ্যমে নেতৃত্ব রদবদলের ইচ্ছেও দলের শীর্ষপর্যায়ে নেই। কারণ এতে কোন্দল আরও বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে দলের ও ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল নিয়ে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড অবগত। মূলত এ কারণেই মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনকে প্রথম পর্যায়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যথাসম্ভব কোন্দল মিটিয়ে ফেলতে। কিন্তু এ প্রয়াস কতটুকু সফলতা বয়ে আনবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তবে একথা সত্য যে, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের এ কোন্দল নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সব ধরনের কোন্দল ও বিরোধের অবসান একেবারে না ঘটলেও বহুলাংশে হ্রাস পাবে বলে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের বিশ্বাস।
×