ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তিতে আরও ৩ মাস সময় পেল ডিএসই

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১১ মার্চ ২০১৮

কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তিতে আরও ৩ মাস সময় পেল ডিএসই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করার সময় বাড়ানো হয়েছে। ডিএসইর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, প্রথম দফায় এক বছর সময় দিয়ে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য ডিএসই ও সিএসইকে চিঠি ইস্যু করে বিএসইসি। ওই সময়ে কৌশলগত বিনিয়োগকারী ঠিক করতে না পারায় আরও ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করে। বাড়তি ৬ মাসেও কৌশলগত বিনিয়োগকারী ঠিক করতে পারেনি ডিএসই। পরবর্তীতে আবারও ৬ মাসের সময় দিয়ে চিঠি ইস্যু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যার মেয়াদ দেয়া হয় চলতি মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ডিএসই কৌশলগত বিনিয়োগকারী খুঁজে পেলেও চুক্তি করতে পারেনি। ফলে আবারও সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করে ডিএসই। তবে ইতোমধ্যে চীনের সাংহাই ও সেনজান স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামকে চূড়ান্ত করেছে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ। চূড়ান্ত করার প্রস্তাব বিএসইতে জমা দেয়ার পর সংস্থাটি একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে। কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। চূড়ান্ত হতে আরও সময় লাগতে পারে এই আশঙ্কা থেকে সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৮ জুনের মধ্যে চুক্তি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এদিকে, ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে গঠিত পর্যালোচনা কমিটির সময় বাড়ানো হয়েছে আগামী ১৫ মার্চ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এ সময়ে তারা কৌশলগত বিনিয়োগকারীর ডিএসই’র প্রস্তাব পর্যালোচনা করে কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে। এর আগে কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের নেয়া সিদ্ধান্তের প্রস্তাব গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসিতে জমা দেয়া হয়। ওই দিন বিএসইসি এই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করার জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয় কমিশন। গঠিত কমিটি কিছু বিষয়ে পরিস্কার হওয়ার জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার ডিএসইর দেয়া প্রস্তাবের ওপর বেশ কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি ইস্যু করেছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই চিঠির ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য পর্ষদ সভা ডাকে ডিএসই। পরে ৪ মার্চ রোববার বিএসইসিকে জবাব পাঠায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ডিএসই’র শেয়ার ২২ টাকা দরে কিনতে চেয়েছে। একই সঙ্গে কিছু টেকনিক্যাল সাপোর্টের কথা বলেছে। ডিএসই’র ভাষ্য অনুযায়ী এই টাকার পরিমাণ হবে ৩০০ কোটি টাকা। এর নিরপেক্ষ মূল্যায়ন নেই। এছাড়াও চীনের বিনিয়োগের প্রস্তাবে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো- প্রথমত এই চুক্তিটি হতে হবে যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী। দ্বিতীয়ত, এ বিষয়ে কোন বিভেদ দেখা দিলে তার সমাধানের জন্য লন্ডনের আরবিট্রেশন অনুযায়ী হতে হবে। তৃতীয়ত, ডিএসই’র আর্টিকেল পরিবর্তন করে কিছু বিষয় যুক্ত করতে হবে। যুক্ত করা বিষয় পরিবর্তন করতে হলে ডিএসই’র বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পাশ করার পূর্বে তাদের অনুমোদন নিতে হবে। বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- যে কোন নতুন শেয়ার ইস্যু, পরিচালকদের সংখ্যা পরিবর্তন, নতুন কোন কৌশলগত বিনিয়োগকারী অন্তভুক্তি, যে কোন ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি যেমন (সফটওয়্যার, প্যাটেন্ট ও অন্যান্য টেকনোলজি ইত্যাদি), ডিএসইর আইপিও সংক্রান্ত যে কোন ইস্যু (শেয়ারের মূল্য, স্পন্সর নির্ধারণ, অবলেখক নিয়োগ, প্রসপেক্টাস অনুমোদন এবং ইস্যু মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি), ১৫ শতাংশের অধিক যে কোন স্থায়ী সম্পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ করলে, যে কোন ধরনের উল্লেখযোগ্য চুক্তি যার মূল্য এককভাবে বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার বেশি, যে কোন ধরনের বিনিয়োগ যার মূল্য এককভাবে বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার বেশি, অন্য যে কোন ইস্যু যেটি কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে জড়িত, ডিএসইর আর্টিকেলে ১৩৫নং ধারায় রয়েছে যে কোন শেয়ারধারী যার ন্যূনতম দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার আছে তার সঙ্গে কোন চুক্তি করতে পারবে না, আর্টিকেলে যাই থকুক চীনা কনসোর্টিয়াম তার ইচ্ছামতো পরিচালক নিয়োগ দিতে পারবে এবং সেটেলমেন্ট গ্রান্টেড ফান্ড কনট্রিবিউশন বাদ দিতে হবে অথবা স্থগিত করতে হবে। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুইটি প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নেয়। এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পার্টনার করতে একমত পোষণ করেন। তবে তা আর প্রস্তাব আকারে বিএসইসিতে পাঠানো হয়নি। এরপর নানা দিক থেকে অভিযোগ ওঠে যে, ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ভারতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিতে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ তোলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি এই চাপের নিন্দা করা হয়। সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামটি ডিএসই’র পার্টনার হতে ২২ টাকা দরে ২৫ শতাংশ শেয়ার নিতে আবেদন করে। পাশাপাশি কনসোর্টিয়ামটি ৩৭ মিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেয়ার প্রস্তাবও দেয় ডিএসইকে।
×