ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিডিএসের সংবাদ সম্মেলন

গর্ভবতী মা ও শিশুদের দন্ত চিকিৎসায় মার্কারি ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১১ মার্চ ২০১৮

 গর্ভবতী মা ও শিশুদের দন্ত চিকিৎসায় মার্কারি ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গর্ভবতী মা ও শিশুদের দন্ত চিকিৎসায় ২০১৮’র জুনের মধ্যে মার্কারি ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি। সোসাইটির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সকল ডেন্টাল সার্জনদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে বিডিএস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা প্রদান করা হয়। দন্ত চিকিৎসায় মার্কারি ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা করে বিডিএসের মহাসচিব ডাঃ হুমায়ুন কবির বুলবুল বলেন, ‘মিনামাটা কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ হিসেবে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মার্কারিমুক্ত পণ্যের দেশ হিসাবে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী। আর আমি আশাবাদী, আজকের এই ঘোষণার মাধ্যমে ২০১৮ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে মার্কারিমুক্ত দন্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রথম ধাপ অতিক্রম করলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘গর্ভবতী মা ও শিশুদের দন্ত চিকিৎসায় মার্কারির ব্যবহার বন্ধ অত্যন্ত জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ বিধায় বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি এসডোর সঙ্গে একযোগে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজন সংবাদ মাধ্যম ও সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব এবং এসডোর চেয়ারপার্সন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদসহ আরও উপস্থিত ছিলেন বিডিএসের সভাপতি ডাঃ মোঃ আবুল কাসেম, ওয়ার্ল্ড এ্যালায়েন্স ফর মার্কারি ফ্রি ডেন্টিস্ট্রির নির্বাহী সভাপতি ও এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন প্রমুখ। বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব এবং এসডোর চেয়ারপার্সন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘মিনামাটা কনভেনশনটি যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক নীতিমালা যুক্ত হয়েছে, তাই আমি মিনামাটা কনভেনশনের সিগনেটরী দেশ হিসেবে ২০২০ সালের মধ্যে মার্কারিযুক্ত সকল পণ্যের ব্যবহার ও আমদানি বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।’ বিডিএসের ঘোষণায় বলা হয়, ‘ডেন্টাল সার্জনদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশে আমরা একযোগে কাজ করছি এবং ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানে (সরকারী/বেসরকারী ডেন্টাল কলেজ/ডেন্টাল ইউনিট) ও ব্যক্তিগত চেম্বারে মার্কারি এ্যামালগাম ফিলিং পরিহার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪টি ডেন্টাল কলেজ ও হসপিটালকে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কারিমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রায় ৮০ শতাংশের ও বেশি ডেন্টাল সার্জন মার্কারিমুক্ত দন্ত সেবা প্রদান করছে। এছাড়া বিডিএস কারিকুলামে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী মার্কারি-ফ্রি পাঠ্যক্রম যুক্ত হচ্ছে। সম্প্রতি ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’ গর্ভবতী মা ও ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুর দাঁতের চিকিৎসায় মার্কারি এ্যামালগামের ব্যবহার বন্ধের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যা কিনা ২০১৮ এর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। বাংলাদেশেও এর গুরুত্ব অনুধাবন করে মা ও শিশুদের দন্তচিকিৎসায় মার্কারিযুক্ত এ্যামালগাম বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে মা ও শিশুদের ক্ষেত্রে মার্কারিযুক্ত এ্যামালগাম বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছি এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সকল সদস্যকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’ দন্ত চিকিৎসায় ব্যবহৃত ডেন্টাল এ্যামালগামের মধ্যে থাকে মার্কারি নামক এক ভারি ধাতু যা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গর্ভবতী মায়ের শরীরে বিষাক্ত এ্যামালগাম থাকলে তা সমগ্র গর্ভকালীন সময়ে প্লাসেন্টার মাধ্যমে মার্কারি নবজাতকের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এটি শিশুর স্নায়ুবিক গঠনে ক্ষতি করতে পারে কেননা এ সময়ে শিশুর মস্তিষ্কের আবরন অত্যন্ত নাজুক থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সম্প্রতি ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’ গর্ভবতী মা ও ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুর দাঁতের চিকিৎসায় মার্কারি এ্যামালগামের ব্যবহার বন্ধের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরাও গর্ভবতী মা ও শিশুর দাঁতের চিকিৎসায় মার্কারির ব্যবহার বন্ধের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছেন।
×