ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১১ মার্চ ২০১৮

নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে

নারীর উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় অধিকার প্রতিষ্ঠা অতীব জরুরী। এটা প্রমাণিত সত্য যে, নারী সমাজের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে কোন অবস্থায়ই একটি সুষম সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সময় এসেছে সব অন্যায় দূর করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার। প্রয়োজন একটি পরিপূর্ণ নারীবান্ধব সমাজ গড়ে তোলা। একজন নারী তার মেধা বা দক্ষতা অনেক সময় প্রকাশ করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে একজন নারীর ইন্টারনাল ইমপাওয়ারমেন্ট হচ্ছে তার সাহস, স্বনির্ভরতা, অপমানের বিপরীতে অবস্থান নেয়া এবং কথা বলার ক্ষমতা। আর এক্সটারনাল ইমপাওয়ারমেন্ট হলো, মানুষ হিসেবে পুরুষের সমান গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নিজেকে গণ্য করা। নারীর ক্ষমতায়নের বাস্তব পরিণতি দিতে হলে সমাজের ভেতরের বিভিন্ন ধারণার পরিবর্তন জরুরী। এর মধ্যে রয়েছে সমাজের নিয়ম, রীতি। কিন্তু সবার আগে নারীকে আত্মবিশ্বাস এবং মর্যাদা নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এই সত্যটি উপলব্ধি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। অধিকার এমনিতে আসে না। কেউ অধিকার হাতে তুলে দেয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়। এই ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন নারীর জন্য অত্যন্ত জরুরী বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। নারীর অধিকার নিশ্চিতে সমাজের পাশাপাশি নারীর নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরী। তারা যখন আত্মনির্ভরশীল হবেন, তাদের ঘিরে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হবে। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্যও তাদের স্বনির্ভর হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। আগের তুলনায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণও বেড়েছে। নারীরা নিজে থেকেই উপার্জন করতে আগ্রহী। এমনকি বিয়ের পরেও বহু নারী মা-বাবা পরিবারকে সাহায্য করতে পারছেন। পরিবারের মধ্যে সত্যিকার অর্থেই নারীর অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে। সমকালীন বিশ্বে নারী নেতৃত্ব অনেকটাই সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ কথা আরও সত্যি। এ দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, বিরোধীদলীয় নেত্রীও নারী। সরকার, প্রশাসনসহ বিভিন্ন পেশায় নারীদের অবস্থান সুদৃঢ়। নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও নারীরা অগ্রগণ্য। এ কথা সত্য, নারী-পুরুষ নিজ অবস্থানে সমুজ্জ্বল। পরিবার ও সমাজে কন্যা-জায়া-জননী হিসেবে নারীর ভূমিকা বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। একই সঙ্গে নারীর মানবিক মর্যাদা ও ভূমিকা অনস্বীকার্য। আসলে একটি আধুনিক সমাজে নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা ভূমিকার কথা চিন্তাও করা যায় না। নারী-পুরুষ কেউ কারও প্রতিপক্ষ তো নয়ই, বরং একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু তার পরও কোন কোন ক্ষেত্রে নারী এখনও বৈষম্যের শিকার। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলেও দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী সমাজ এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। যৌতুকসহ নানাবিধ কারণে এখনও অনেক নারীকে নির্যাতিত হতে হয়। কখনও কখনও জীবনও দিতে হয়। এখনও ফতোয়াবাজ এবং গ্রাম্য সালিশদারদের হিংস্র থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয় নারী। নিরাপদে চলাফেরা করাও কখনও কখনও দুষ্কর হয়ে ওঠে। এসব অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। আমাদের বাজার অর্থনীতি এখন অনেক বেশি প্রসারিত। বাস্তবতা হচ্ছে নারীদের জন্য এখানে সুযোগগুলো খুব সীমিত। এখানে আমাদের কিছু সামাজিক বিধি-নিষেধ-নিয়ম রয়েছে। অনেক জায়গায় দেখা যায়, নারীরা বাজারে যেতে পারছেন না। ওই কারণগুলোর জন্য বাহ্যিকভাবে যেমন সরকার, এনজিও বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে চেষ্টা করতে হবে কিভাবে সার্বিক পর্যায়ে নারীর সমতা বিধান করা যায়। যাতে এটা নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কর্মক্ষেত্রেও নারীর বৈষম্য সেভাবে কমেনি। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকারও নারী- এমন অভিযোগ প্রায়শই ওঠে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের বেশিরভাগই নারী। আর কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ তো সেই অতীত থেকেই। বর্তমান সরকার নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু নারীকে সম্পত্তিতে ন্যায্য অধিকার দেয়ার বিষয়টি এখনও মীমাংসিত নয়। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরী। তাহলেই নারী তার সকল অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবে।
×