ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হংকংয়ে চার জাতি টুর্নামেন্ট

টার্ফ নয়, মারিয়াদের খেলতে হবে ঘাসের মাঠে!

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ১০ মার্চ ২০১৮

টার্ফ নয়, মারিয়াদের খেলতে হবে ঘাসের মাঠে!

রুমেল খান ॥ আগামী ৩০ মার্চে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হবে অ-১৫ চার জাতি আমন্ত্রণমূলক ফুটবল টুর্নামেন্ট। শেষ হবে ১ এপ্রিল। যেখানে অংশ নেবে বাংলাদেশ, চাইনিজ তাইপে, হংকং এবং ইরান। যেখান থেকে আসন্ন এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ের প্রস্তুতিটা সেরে নিতে চায় গোলাম রব্বানী ছোটনের সুযোগ্যা শিষ্যারা। নারীদের ফুটবলের সাফল্য এবং জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। আর এর জন্য যাকে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিতে হবে, তিনি হচ্ছেন দলটির কোচ, গোলাম রব্বানী ছোটন। কি দেশে, কি বিদেশেÑ সব জায়গাতেই উড়ছে তাদের সাফল্যের ঝা-া। সফল ও আত্মবিশ্বাসী নারী ফুটবল দলের সামনে এ বছর অনেক টুর্নামেন্ট। যার মধ্যে মার্চের শেষে হংকংয়ে আছে আমন্ত্রণমূলক চার জাতীর টুর্নামেন্ট। আপাতত প্রস্তুতিটা এই টুর্নামেন্টকে ঘিরেই মনে হলেও মূলত সামনের সব টুর্নামেন্টগুলোকে মাথায় রেখেই এগুচ্ছেন কোচ ছোটন। যেখানে শুধু অ-১৫ না, অ-১৬ দলের মেয়েরাও রয়েছে। আসন্ন টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতার লক্ষ্য এবং পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে মারিয়াদের। কোচ বলছেন ৯০ মিনিট সমানতালে খেলতে পারবে তার মেয়েরা। হংকংয়ে কি টার্ফে খেলা হবে, নাকি ঘাসের মাঠে খেলা হবে? ‘এটা আমরা কদিন আগেও জানতাম না। তবে এখন জেনেছি। টার্ফে নয়, আমাদের খেলা হবে ঘাসের মাঠেই। তবে এতদিন আমরা মেয়েদের অনুশীলন করিয়েছি বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফেই। এখন ঘাসের মাঠে খেলা হবে শুনে স্বভাবতই পরিকল্পনা বদলাতে হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ যুব গেমস শেষ না হওয়াতে এখনই আমরা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ঘাসের মাঠে মেয়েদের অনুশীলন করাতে পারছি না। কাজেই গেমস শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত টার্ফেই প্র্যাকটিস চলবে।’ জনকণ্ঠকে এমনটাই জানান কোচ ছোটন। চার জাতির এ টুর্নামেন্টে আগামী ৩০ মার্চ চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এরপর ৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল বাংলার কিশোরীদের প্রতিপক্ষ ইরান এবং স্বাগতিক হংকং। হংকংয়ের সঙ্গে আগে দেখা না হলেও চাইনিজ তাইপে আর ইরানের সঙ্গে গত এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে তাদের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ডটা লাল-সবুজদেরই পক্ষে। এ বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হবে এএফসি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব। তার আগে এই দলটি নামবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে। হংকংয়ে আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টটি তাই খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন ছোটন। কারণ ওই টুর্নামেন্ট দিয়েই আসন্ন দুই গুরুত্বপূর্ণ আসরের প্রস্তুতিটা সেরে নিতে চান তিনি। ছোটন আরও জানান, ‘যাদের (৯ জন) এসএসসি পরীক্ষা ছিল, তারা ইতোমধ্যেই পরীক্ষা শেষ করে আবারও যোগ দিয়েছে ক্যাম্পে। দলে কোন ইনজুরি সমস্যা নেই।’ হংকংগামী দল হবে ২০ জনের। যদিও শুরুতে ২৩ ফুটবলার থাকবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছিল। পরে সিদ্ধান্ত বদলে যায়। ছোটনের অধীনে বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক মহিলা দলগুলোর সাফল্য ঈর্ষণীয় : এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার (২০১৫ ও ২০১৬), এএফসি অনুর্ধ-১৬ আসরের (২০১৬) আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন একবার এবং সর্বশেষ সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৭) একবার শিরোপা জিতেছে। এছাড়া সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে একবার রৌপ্যপদক অর্জন (২০১৬), দু’বার সেমিফাইনালিস্ট (২০১০ ও ২০১৪); এসএ গেমস ফুটবলে দু’বার তা¤্রপদক (২০১০ ও ২০১৬) অর্জন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। তবে এখানেই থেমে যেতে চান না ছোটন। নতুন বছরে সাত শিরোপা হাতছানি দিচ্ছে তাকে। লেখার শুরুতেই একটির কথা বলা হয়েছে। বাকিগুলো হচ্ছে : মেতে এএফসির ফুটবল টুর্নামেন্ট (থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য), আগস্টে সাফ অ-১৫ এবং অ-১৮ টুর্নামেন্ট, সেপ্টেম্বরে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব, অক্টোবরে এএফসি অ-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব এবং ডিসেম্বরে সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। মেয়েদের পরের লক্ষ্য আগামী চার বছরের মধ্যে ফিফা অ-২০ মহিলা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা। ইতোমধ্যেই তারা ফিফা অ-১৬ মহিলা বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলেছে। অংশ নিয়েছে এশিয়ার সেরা আট দল নিয়ে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে। প্রতিবছর তারা ১০-১৫টি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে। এই লক্ষ্যে ক্যাম্প চলছে জোরেশোরে। অদম্য ও অপরাজেয় নারী ফুটবলারদের গত কয়েক বছরের কৃতিত্বগুলো খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। এই দলটিকে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করানোর ব্যবস্থা করা হলে দেশে ও বিদেশের মাটিতে এরাই একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিজয় গৌরব ও সুনাম ছিনিয়ে আনতে সমর্থ হবে। সোনার মেয়েদের কীর্তিগাথায় মোড়ানো এ রকম আরও স্বর্ণালী সাফল্য নিশ্চয়ই অবলোকন করা যাবে।
×