ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ১০ মার্চ ২০১৮

এবার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ নিদাহাস ট্রফিতে নিজেদের মিশন শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলেছে। শুরুটা হয়েছে হার দিয়ে। ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হার দিয়েই টুর্নামেন্টের মিশন শুরু হয় বাংলাদেশের। এবার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আজ কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা পরস্পরের বিপক্ষে খেলবে। ম্যাচটি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হবে। প্রথম ম্যাচে হেরেই বিপদে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। অনেক আশা ছিল, শুরুটা ভালো করার। কিন্তু সেই হারের গোলকধাঁধাতেই আটকে আছে বাংলাদেশ। বিধ্বস্ত দলটি, আরও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা হাতছাড়া করার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি২০তে হেরে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মনোবল দুর্বল হয়ে পড়েছে। শ্রীলঙ্কায় টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে জেতায় মনে হয়েছিল আত্মবিশ্বাস ও মনোবল আবারও বাড়বে। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে হেরে সেই আত্মবিশ্বাস ও মনোবলে স্বাভাবিকভাবেই আবারও চিড় ধরতে শুরু করেছে। এবার খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। যে দলটির বিপক্ষে দেশের মাটিতেই দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। গত মাসেই। সেই দলটির বিপক্ষেই আবার টি২০ ম্যাচ খেলতে নামবে। এবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে হবে খেলা। অবশ্য শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বশেষ ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল। গত বছর এপ্রিলে সেই জয়টি এসেছিল। কিন্তু সেই দল আর বর্তমান বাংলাদেশ দলের মধ্যে পার্থক্য অনেক। সেই দলটির কোচ ছিলেন চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে। এখন তিনি বাংলাদেশ দলের কোচ নন। এখন তিনি কোচ শ্রীলঙ্কার। কোচ হয়েই বাংলাদেশের মাটি থেকে দুই হাত ভরে নিয়ে গেছেন। এখন তো আবার বাংলাদেশের কোন স্থায়ী প্রধান কোচই নেই। বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ করা হয়েছে। ওয়ালশের লক্ষ্য ছিল একটাই, ‘টিম বাংলাদেশ’ হিসেবে দলকে তৈরি করা। কিন্তু যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, তাতে তো ‘টিম বাংলাদেশ’ মিলছে না। ছন্নছাড়া এক বাংলাদেশ দলকেই মিলছে। যে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা অল্পতেই খেই হারিয়ে ফেলছেন। একটু চাপ পড়লেই তাতে নুয়ে পড়ছেন। চাপ নিতেই পারছেন না। এমন অবস্থায় ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই জিতে টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত শুরু করা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলাটা চ্যালেঞ্জেরই। শ্রীলঙ্কা দলটিও বিধ্বস্ত ছিল। গত বছর খুবই খারাপ অবস্থা গেছে। কিন্তু যে দলটির কোচ হন হাতুরাসিংহে। রাতারাতি যেন দলের চেহারাই পাল্টে যায়। যে দলটির ক্রিকেটাররা মানষিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তারাই এখন চাঙ্গা। যে দলটির ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ছিল। তারাই এখন যে কোন দলকে উড়িয়ে দেয়ার আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামছে। ঠিক যেমনটি বাংলাদেশের ছিল। এখন বাংলাদেশ একটি জয় খুঁজছে। যেভাবেই হোক একটি জয়ের অপেক্ষাতে আছে। জয়টি মিললেই যে আবার দলের ক্রিকেটাররা চাঙ্গা হয়ে যেতে পারেন। যে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দলকে মিলছে। অন্য বাংলাদেশকে আবারও দেখার মিলতে পারে। যে বাংলাদেশ সাফল্যে ভাসছিল। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই যেমন বললেন, ‘আমার ধারণা আমরা শুধু একটা জয়ের অপেক্ষায় আছি। সেটা পেলেই আবার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। সেটাই খুঁজছি এবং পেয়ে যাব খুব দ্রুত।’ কিন্তু কিভাবে? ভারতের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানদের যে নাজেহাল অবস্থা দেখা গেছে, এমন চলতে থাকলে, জয় অসম্ভবই! একের পর এক ভুলে আউট হওয়া। ‘নতুন জীবন’ পেয়েও তা কাজে লাগাতে না পারার মতো ভুল হয়েছে। আউটগুলোও যেন চোখে বেজেছে। ব্যাটসম্যানরা এমনই ব্যর্থ হয়েছেন, রান ১৩৯ এর বেশি যায়নি। আর তাতে করে ভারতও জিতে গেছে। ব্যাটসম্যানরা একের পর এক ম্যাচে এমন ছন্নছাড়া ব্যাটিংই করছেন। মাহমুদুল্লাহও মানছেন তা, ‘এটা তো অস্বীকার করা যাবে না, আমরা ভাল ব্যাট করিনি। আমাদের আরও ৩০ রান বেশি করা উচিত ছিল। বোলাররা তাদের কাজ ঠিকভাবে করেছে। ভারত তাদের পরিকল্পনা ভালভাবে কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু আমাদের এর মাঝেও রান বের করার উপায় খুঁজে নিতে হবে।’ টি২০তে ডট বল যত বেশি হবে। স্কোরবোর্ডে রান ততই কম হবে। তাতে করে হারের সম্ভাবনা বাড়বে। বাংলাদেশের বেলাতে টি২০তে তাই হচ্ছে বার বার। ডট বল হচ্ছে বেশি। মাহমুদুল্লাহ এ নিয়েও মুখ খুলেছেন, ‘আমাদের আরও স্ট্রাইক রোটেট করা উচিত ছিল। ডট বল অনেক চাপ সৃষ্টি করেছিল।’ এমনই চাপ সৃষ্টি হয়েছে, অধিনায়ক যেন তার চিন্তা শক্তির প্রকাশও ঠিকভাবে করতে পারছেন না। কিভাবে আবার পুরনো সাফল্যের রূপে ফেরা যাবে? মাহমুদুল্লাহর জবাব, ‘উপায়টা হচ্ছে, আমাদের ভাল খেলতে হবে। ভাল খেলার বিকল্প নেই। যেদিন সবকিছু ভাল করব, সেদিন জিতব।’ কিন্তু কিভাবে আসবে সেই জয়? দলগতভাবে যে খেলাই যাচ্ছে না। আবার ছোট্ট ছোট্ট সাফল্যগুলোকেও বড় করে দেখা হচ্ছে। যেখানে দল হারছে। সেখানে ব্যক্তিগত সাফল্য দিয়ে কী হবে? মাহমুদুল্লাহ জানান, ‘অর্জনগুলো মোটেও বড় মনে হচ্ছে না। তাহলে এভাবে হতাশা প্রকাশ করতাম না। ভাল করতে পারছি না বলেই এভাবে বলছি। ছোট ছোট অর্জন যদি বড় করে দেখি, তবে আমাদের মনে হয় ক্রিকেট ছেড়ে দেয়া উচিত! আমাদের আরও বড় কিছু করার সামর্থ্য আছে। আমাদের একটি ম্যাচ দরকার, যেটি জিততে পারলে ছন্দ ফিরে পাব। ওই ছন্দের জন্য অপেক্ষা করছি। একবার যদি সেটা পেয়ে যাই, অন্য বাংলাদেশকে দেখতে পাবেন।’ আজ শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। তাহলে কী আজই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়ে সেই ছন্দ ফিরে পাওয়ার ম্যাচ বাংলাদেশের?
×