ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি নিয়ে প্রতারণায় বিভিন্ন চক্র

রেলওয়ের ভুয়া নিয়োগপত্র নিয়ে বিপাকে প্রার্থী

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ১০ মার্চ ২০১৮

রেলওয়ের ভুয়া নিয়োগপত্র নিয়ে বিপাকে  প্রার্থী

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলের চাকরি নিয়ে প্রতারণা শুরু করেছে বিভিন্ন চক্র। প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে জাল নিয়োগপত্রও দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২ থেকে ৫ লাখ টাকায় রেলের চাকরি নিশ্চিতের কথা বলে চক্রের সদস্যরা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত সরকারী মনোগ্রাম ব্যবহার করে এমন নিয়োগপত্র তৈরি করা হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার টোপ ফেলছে চক্রের সদস্যরা। এমন ঘটনার প্রমাণ মিলেছে রেলের পূর্বাঞ্চলে। এ দিকে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এখনো মৌখিক পরীক্ষার ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু হয়নি। নিয়োগপত্র হচ্ছে সর্বশেষ কার্যক্রম বলে জানালেন নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক। অভিযোগ রয়েছে, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদের একটি নিয়োগপত্র নিয়ে সম্প্রতি রফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক হাজির হয়েছেন পাহাড়তলীস্থ প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দফতরে। তিনি উক্ত পদে যোগদান করতেই সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাত্র লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভুয়া নিয়োগ পত্রটিতে কোন ধরনের শর্ত নেই। বেতনের যে স্কেল দেয়া হয়েছে তাও ঠিক নয়। নিয়োগ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের ঠিকানাও ঠিক নেই। চীফ পার্সোনাল অফিসারের স্বাক্ষরটিও অস্বাভাবিক। এ বিষয়ে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফরিদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, লিখিত পরীক্ষায় যারা শতকরা ৫০ ভাগ নম্বর পাবে তাদেরকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে ডাকা হবে। ৬৬টি পদের বিপরীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। এখনও মৌখিক পরীক্ষার ইন্টারভিউ কার্ডই ইস্যু হয়নি নিয়োগপত্র হচ্ছে সর্বশেষ কার্যক্রম। ভুয়া নিয়োগপত্রটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত মনোগ্রামে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি প্যাডের পাতা ব্যবহার করা হয়েছে নিয়োগপত্রে। বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেল ভবন সিআরবি চট্টগ্রাম এর ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। স্মারক নং ১৩৭৫/৩১২৫৯, তারিখ- ১৭/০৯/২০১৭। নিয়োগকৃত পদের নাম অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর। বাংলাদেশ রেলওয়ে এর আওতায় প্রশাসন বিভাগ এর নিয়মানুযায়ী গত ০৮/০৬/২০১৭ ইং কিছু শূন্য পদে মৌখিকভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুপারিশের ভিত্তিতে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, পিতা-মোহাম্মদ শফিজল ইসলাম, মাতা-মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন, গ্রাম পশ্চিম জয়নগর, পোস্ট-খায়ের হাট, উপজেলা- দৌলতখান, জেলা-ভোলা। নিয়োগপত্র প্রাপ্তির পর আগামী ০১/০২/২০১৮ তারিখ হতে ২১ কর্ম দিবসের মধ্যে যে কোন দিন স্বশরীরে কাগজপত্রের মূল সনদপত্রের কপিসহ আপনাকে বাংলাদেশ রেলওয়ে, রেল ভবন, সিআরবি, চট্টগ্রাম এর সিনিয়র পার্সোনাল অফিসার বরাবর যোগদানের জন্য অনুমতি প্রদান করা হইল। উক্ত পদে আপনাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ী সরকারী কর্মচারী হিসেবে যাবতীয় সুবিধা প্রদান করা হবে এবং মাসিক ৯,৩০০ টাকা হইতে ১৮,৬৪০ টাকা স্কেল অনুযায়ী বেতন প্রদান করা হইবে। অন্যান্য সরকারী সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হইবে। এর অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে- বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুকূলে, কর্মচারী পরিষদ বাংলাদেশ রেলওয়েকে ও জাতীয় হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ এজিবি’ তে। বিঃদ্রঃ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মূল সনদপত্র সঙ্গে আনিতে হইবে। নিয়োগপত্রের সবশেষে সিনিয়র পার্সোনাল অফিসার, বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম এর একটি স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে। এই স্বাক্ষরের নিচে একটি সিল সন্নিবেশিত রয়েছে যা- যাচাই বাছাই কমিটি, সদস্য সচিব (প্রশাসন-১), বাংলাদেশ রেলওয়ে, সিআরবি, চট্টগ্রাম। এমন তথ্য দেয়া ছিল ভুয়া ওই নিয়োগপত্রে। এ বিষয়ে ভুয়া নিয়োগপত্রের বাহক রফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, তার মামা শ্বশুরবাড়ির এক আত্মীয় তার সঙ্গে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এই নিয়োগপত্র দিয়েছেন। আবার আত্মীয়ের মাধ্যমে অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চালাবেন বলে জানান। তবে তিনি এই বিষয়টি গোপন রাখতে চান। এ পরীক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে জানা গেছে, ৬৬ শূন্য পদের বিপরীতে ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৩৬ হাজার ৯৫ জন প্রার্থীর আবেদন পেয়েছে কমিটি। রেলের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেনের দফতর থেকে ২০১৬ সালের ২ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (নং৫৪.০১.১৫০০.১০৬.০৩.০০১.১৬-১৪) অনুযায়ী প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বানের জন্য প্রেরণ করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট রেলের উভয় জোনে ৬৬টি শূন্য পদের বিপরীতে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করেন পূর্বাঞ্চলের চীফ পার্সোনাল অফিসার অজয় কুমার পোদ্দার। এই পদে আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর। এই পদে নিয়োগ পরীক্ষার নিয়মানুযায়ী মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে ৬০ নম্বর লিখিত ও বাকি ৪০ নম্বর মৌখিক। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় ৫০ ভাগ প্রাপ্ত নম্বরধারীদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করার কথা রয়েছে।
×